সরকার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটাচ্ছে - বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৯ এএম, ১০ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৪০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
শুধুমাত্র হীন রাজনৈতিক স্বার্থে সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটাচ্ছে বলে মনে করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। দলের ভারপ্রাফত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে আজ রবিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান। শনিবার স্থায়ী কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা মনে করে, ৮ বছর আগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে মামলার চার্জশিট দিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দকে জড়িত করবার চক্রান্তে লিফত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। অথচ ভারতে যে উদ্বেগজনকভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উন্মেষ ঘটেছে তার দায় দায়িত্ব বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক মানুষের ওপর চাপিয়ে এখন রক্তপাত, হত্যা, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় বেড়াজালে সচেতন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, হয়রানি করছে সরকার। সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটাচ্ছে শুধুমাত্র হীন রাজনৈতিক স্বার্থে। অবিলম্বে এই ভয়ংকর খেলা বন্ধ করে আটককৃত সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সভা আরো মনে করে, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব বর্ষ পালনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে কয়েকটি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরকারের পেটোয়া বাহিনী, আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী, পুলিশ ও র্যাব দ্বারা নিরীহ মানুষের প্রাণহানির প্রতিবাদে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সন্ত্রাসী বাহিনী ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দেশের কয়েকটি স্থানে গুলি করে প্রায় ২০ জনকে হত্যা ও অসংখ্য মানুষকে আহত করে। একই সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে সরকারের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিবৃন্দ উষ্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে এবং মিথ্যা মামলায় দেশের বরেণ্য আলেম-ওলামা, ধর্মীয় নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের প্রায় ৪শ জন নেতা-কর্মীকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
পশ্চিম বাংলার জনগণ ও মমতাকে অভিনন্দন : সম্প্রতি ভারতের পশ্চিম বাংলায় বিধান সভার নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতাকে ভেঙ্গে পরাজিত করে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিজয়ী করায় রাজ্যের অসাম্প্রদায়িক জনগণকে অভিনন্দন জানায় স্থায়ী কমিটির এই সভা এবং এই নির্বাচনে নেতৃত্ব দানকারী পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানানো হয়। সভায় মহাসচিব ছাড়াও নিজ নিজ বাসা থেকে আরো অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
দুর্নীতি ও ভারতকে তুষ্ট করতে সরকার চীন-রাশিয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেনি : সভা মনে করে, কোভিড-১৯ প্রথম ডোজ পাওয়া মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। এই অবস্থায় প্রথম ডোজ টিকা কার্যক্রম বন্ধ করায় উৎকণ্ঠা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার টিকা সংগ্রহ করেছেন ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের নিকট হতে এবং একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে। ৩ কোটি টাকার মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করার পরে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ টিকা প্রাফিতর পরে ভারত সরকার রফতানি নিষিদ্ধ করার কারণে এখন টিকা প্রাফিত পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে দুর্নীতির লক্ষ্যে দায় মুক্তি শর্ত যুক্ত করায় সরকার কোনও আইনী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সরকার নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির কারণে দায়িত্ব দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। শুধুমাত্র দুর্নীতির কারণে এবং ভারতকে তুষ্ট করার জন্য চীন অথবা রাশিয়া প্রস্তাব দেয়ার পরও সরকার তা গ্রহণ করেনি। এখন উপায়ন্তর না পেয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং বিকল্প উৎসের অনুসন্ধান করছে। এই ধরনের দায়িত্বহীন কাজ আজ সমগ্র জাতিকে বিপদগ্রস্ত করেছে। এই ভয়াবহ মহামারি প্রতিরোধের জন্য টিকা সংগ্রহ এবং বিতরণের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রতারণা, দুর্নীতি এবং দায়িত্বহীনতার সকল দায় সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। সভায় সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ও বিশ^ খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি), নিউ গ্লোবাল রিপোর্টের অন ফুড ক্রাইসিস শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ২০২১ সালে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি আরও বাড়ার আশংকা প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে সভা মনে করে। সংবাদ মাধ্যমে ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে খাদ্য অধিদফতরের মজুদের পরিমাণ মাত্র ৩ লাখ টন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে অথচ আপদকালীন মজুদ হিসাবে কমপক্ষে ১৫ লাখ টন খাদ্য মজুদ থাকা প্রয়োজন। সরকারের অবহেলা এবং সরকারের মদদপুষ্ট মধ্যস্বত্ব ভোগীদের স্বার্থে বিলম্বে ধানের ক্রয় মূল্য নির্ধারণ এবং সংগ্রহ কর্মসূচি নেয়ায় একদিকে কৃষকেরা ধানের ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা চরমভাবে অনিশ্চত হয়ে পড়ছেÑআফ্রিকা ও এশিয়ায় কয়েকটি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে বিএনপি আশংকা প্রকাশ করছে। খাদ্য নিরাপত্তায় সমস্যা সৃষ্টি হলে তার সকল দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির এই সভা। এই মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের উদাসীনতা, দুর্নীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা কোভিডকালীন লকডাউনে বিপর্যস্ত হওয়ায় অবিলম্বে ওএমএস চালু করা এবং বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।