পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবি করেছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৭ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫৫ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় দোষীদের চূড়ান্ত বিচারের রায় এই বছরের মধ্যেই করার দাবি করেছে বিএনপি। পিলখানা হত্যাকান্ডের একাদশ বার্ষিকীতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বনানী সেনা কবরস্থানে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতি সৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১২টি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকান্ডের চূড়ান্ত ফয়সালা করা সম্ভব হয়নি। বিচারে দীর্ঘসূত্রতা আমাদেরকে হতাশ করেছে, দেশবাসী মর্মাহত হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের বিচার অত্যন্ত স্লো গতিতে চলছে। এই বছরের মধ্যে লিফ টু আপিল এবং আপিলের কার্যক্রম শুরু হবে বলে এমন কোনো আশা, এমন কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পারছি না। এই হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্যে বিচার বিভাগের প্রতি আমরা আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, এই বছরের মধ্যেই এই হত্যাকান্ডের চূড়ান্ত ফয়সালা করা হবে, চূড়ান্ত রায় দেয়া হবে। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিডিআরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সে বিদ্রোহে সে বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বাহিনী সদর দফতরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে মারা যান ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহে বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে জওয়ানদের বিদ্রোহ। রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নাম বদলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হয়।
৫৭টি বিদ্রোহের মামলার বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। সেখানে ৬ হাজার জওয়ানের কারাদন্ড হয়। বিদ্রোহের বিচারের পর পিলখানা হত্যাকান্ডের মামলার বিচার শুরু হয় সাধারণ আদালতে। ঢাকা জজ আদালত ২০১৩ সালে দেয়া রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিলো। এছাড়া ২৫৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেয়। ২০১৭ সালে দেয়া রায়ে ১৩৯ আসামিকে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট। ১৮৫ জনকে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়, তিন থেকে ১০ বছরের সাজা দেয় ২২৮ জনকে। পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সেনা কর্তৃপক্ষ একটা কোর্ট অব ইনকোয়ারির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাফিজ।
তিনি বলেন, এই ধরনের হত্যাকান্ড বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। এর সুষ্ঠু বিচার এবং তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার কামনা করি। এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করার জন্যে। এর বেনিফিসিয়ারি কারা সেটিও দেশবাসী পরিষ্কার জানতে চায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইতিমধ্যে নিম্ন বিচারিক আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে খালাস দিয়ে দেয়া হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, সবাইকে আনা হয় নাই, কয়েকজনকে আনা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডে যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী তারা এখন পর্যন্ত পর্দার অন্তরালে রয়েছে। দেশবাসীর সামনে তাদের পরিচিতি স্পষ্ট নয়। আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাবো হত্যাকান্ডের যারা পরিকল্পনাকারী দেশি-বিদেশি শক্তিসমূহ, ষড়যন্ত্রকারী তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক।
হাফিজ বলেন, এই হত্যাকান্ডে নিহত ব্যক্তিবর্গের সাথে সাথে একজন সুবেদার মেজর যিনি অফিসারদেরকে রক্ষা করার জন্য যাকে হত্যা করা হয়েছিলো তার পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় নাই। আমি এ ব্যাপারে সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করছি। একই সঙ্গে যারা নিহত হয়েছিলেন সেই শহীদ পরিবারসমূহ কষ্টে মনোবেদনার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন। তাদের এবং শহীদদের আত্মার শান্তির বিধান করার জন্যে দ্রুত এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার আমরা আশা করি। এদেশে আমরা সুশাসন কামনা করি। এদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অতি অল্প সময়ের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে- এই কামনা করি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান তিনি। সকাল পৌনে ১১টায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে দলের নেতৃবৃন্দ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তারা নিহত সেনা কর্মকর্তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। এ সময়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর, অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল মো. ইসহাক, অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল মনিষ দেওয়ান, অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল কামরুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. হানিফ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সারোয়ার হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাঈদুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. হাসান, বিএনপি নেতা শামীমুর রহমান শামীমুর, শাহ খালেদ হাসান চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
জাগপার আলোচনা সভা: জাগপা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান বলেছেন, ২০০৯ সালের এই দিন ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নাটক মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত শুরু হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পিলখানা হত্যাকান্ড দিবস স্মরণে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহাসিক বিডিআরের চেতনাকে ধ্বংস করেছে। ১৯৭১'র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ মার্চ যে বাহিনী প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিল সেই বাহিনীকে করেছে কলঙ্কিত। শুধু বাংলাদেশ নয়, সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে এতজন সেনাকর্মকর্তাকে নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায়। তিনি আরো বলেন, আজ প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্রাজেডি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে জাতীয় এজেন্ডা নির্ধারণ করা। আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্রাজেডি স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালন করি।