৯০-এর চেতনায় গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটানো হবে - বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৬ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৫৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকার হটানোর ‘একদফা’ আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছে বিএনপি।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান এই আহবান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন পৌরসভা-সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কীভাবে ভোট ডাকাতি করছে। আমরা এই সরকারকে আর কোনো নির্বাচনের সুযোগ দেবো না। নির্বাচন করে আবার ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসবেন-এটা বাংলাদেশে হতে পারে না। আমরা বলতে চাই, সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে এক দফার আন্দোলনে শরিক হতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সকলকে রাজপথে নেমে এই অবৈধ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আমান অভিযোগ করে বলেন, এই সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে, জাতীয় সংসদ ধ্বংস করে দিয়েছে, নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের মোড়কে এই সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় আজকে পরিচালিত হচ্ছে। তাই আজকে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল দল-মতকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। নব্বইয়ের চেতনায় এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে আবার আমাদের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তরের যৌথ উদ্যোগে স্বৈরতন্ত্র ও মাফিয়াতন্ত্রের পতন এবং স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের খেতাব বাতিলের সরকারি অপচেষ্টার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী এই সমাবেশে অংশ নেন। সকাল ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়ে ১২টায় শেষ হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষ হওয়ার সময়ে প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য শুরু হওয়ার ৫ মিনিট পর পুলিশ লাঠিচার্জ করে পন্ড করে দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে সকাল ৯টা থেকে তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনসহ আশ-পাশের এলাকায় ব্যাপক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পুলিশের এমন উপস্থিতির মধ্যেও সমাবেশে ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে। বরিশাল বিভাগ ছাড়া সারাদেশে মহানগর ও জেলায় একযোগে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করলে ওদের হাত পুড়ে যাবে উল্লেখ করে আমান উল্লাহ আমান বলেন, সরকারকে বলে দিতে চাই, তুমি যদি জিয়াউর রহমানের বীরোত্তম খেতাব বাতিলের চিন্তা করো, যদি বাতিল করো এই সরকারের হাত জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই, তাদের সাথে জনগণ নেই। সেজন্য তারা জনগণকে ভয় পায়। জনগণের সমাবেশে তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের পদক বাতিলের ক্ষমতা কারো নাই। এটা কারো বাপের পদক না। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশটা আপনাদের রাজত্ব না। এই দেশ আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। ২৫ মার্চের কালো রাত্রির পরে যখন আপনাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি সেই সময়ে মেজর জিয়াউর রহমান ‘উই রিভোল্ড’ বলে বিদ্রোহ করেছিলেন, ২৮ মার্চে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তাকে অস্বীকার করলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ থাকে না। তাই যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন সকল শক্তিকে বলব, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে এই সমাবেশে সবাই বলেছেন, জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে প্রতিমূর্তি। কয়েকজন মাফিয়া, কয়েকজন সন্ত্রাসী পান্ডা তার খেতাব কেড়ে নেবে কি নেবে না- এটা দিয়ে জিয়ার ঐতিহাসিক অক্ষয় অবদানকে মুছে ফেলা যাবে না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমানের মতো একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম জনগণের ধমনীতে বয়, তার মতো একজন বীরযোদ্ধার খেতাব শাহজাহান খানের মতো একজন ব্যক্তি কেড়ে নিতে চায়। শাহজাহান খান সভ্যতার ধার ধারে না, তার ব্যাখাও দিয়েছেন রিজভী।
তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে? পরিবহনের বাস যখন মানুষ চাপা দিয়ে মারে তখন সেটাকে তিনি বৈধ মনে করেন। এ সময় হুঁশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমানের নাম সবার হৃদয়ে আছে। কয়েকজন সন্ত্রাসী-মাফিয়া খেতাব বাতিলের কথা বললে জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক অবদান মুছে যাবে না।
ভারতের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ভারতের বিজেপি প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার গঠন করতে পারলে বাংলাদেশ থেকে একটা পাখিকেও ঢুকতে দেবে না। আমি বলি, বাংলাদেশের পাখিরা যাবে কেন? আপনাদের দেশের গবেষকরা বলছেন, শতকরা ৫০ ভাগের ঊর্ধ্বে ভারতে কোনও স্যানিটেশন নাই। রেললাইনের ধারে, রাস্তার ধারে মানুষ বাথরুম করে। আমাদের পাখিরা তো পরিষ্কার-পরিছন্ন। তারা কেন ইন্ডিয়াতে যাবে।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, আজ থেকে একটি খবর পড়ে আমার মনটা খুব খারাপ। আজকে গাড়ির ভেতরে আসার সময়ও খবরটি পড়লাম। আমার একটা ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগ বেশ বড় ধরনের চোর। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরি করেছে, সোনালী ব্যাংকে চুরি করেছে, বেসিক ব্যাংকে চুরি করেছে, বায়ান্নটি ক্যাসিনো করেছে। যাদের অর্থমন্ত্রী চার হাজার কোটি টাকা চুরিকে বলেন- ‘এটা কোনও টাকাই না’, এদের সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল এরা বড় ধরনের চোর। কিন্তু আজকে ফেনীর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেছে সংবাদ সম্মেলন করে কাদের মির্জা ছিল গরু চোর। আওয়ামী লীগের নেতারা যে গরু চোর হতে পারে এটা আমার ধারণা ছিল না আগে। এটা কিন্তু বিএনপির লোকেরা বলেননি, তাদের দলের নেতারাই প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন যে, কাদের মির্জা ছিল গরু চোর। এই খবরটা আজ থেকে পড়ে আমার মনটা খারাপ। কারণ আমার ধারণা ছিল ওরা বড় ধরনের চোর, কিন্তু সেই ধারণা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এত নিম্নমানের চুরির সাথে আওয়ামী লীগের নেতারা জড়িত থাকতে পারে, এই ধারণা আমার কখনোই ছিলো না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ক্ষমতাসীনদের বলতে চাই দয়া করে মনে রাখবে, বিএনপি হচ্ছে সেই গরম পানি যে গরম পানিতে নরম ডিমকে শক্ত করে আবার শক্ত আলুকে নরম করে। যারা করেছেন যথেষ্ট করেছেন। এবার থামেন। যাদেরকে গ্রেফতার করেছেন তাদেরকে মুক্তি দেন। আজকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেখানে আপনাদের পাশে আমাদের নেতা-কর্মীদের বসিয়ে রেখেছেন তাদেরকে দয়া করে ছেড়ে দেন, অল্প কয়েকজনকে আটকিয়ে রেখে আপনারা কিছু করতে পারবেন না। এই জনস্রোতের মধ্যে ভেসে যাবে মাফিয়া সরকারের সমস্ত মাফিয়া এক এক করে। সেই দিন পর্যন্ত আমরা ক্লান্তহীনভাবে আন্দোলনের মধ্যে থাকবো।
যুবদলের সাবেক সভাপতি আরও বলেন, নোয়াখালীর নেতারা বলেছে, ওবায়দুল কাদেরের পরিবার নাকি রাজাকারের বংশধর। আমি কাদের সাহেবকে বলতে চাই, যারা এ কথা বলেছে- এবার পারলে তাদের দাঁত ভাঙেন।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে আলাল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবিত নেই। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি। তারেক রহমান দেশের বাইরে। এ কারণে মনে করেছেন সুযোগ পেয়ে গেছেন? না, সুযোগ পান নাই। দয়া করে মনে রাখবেন, বিএনপি হচ্ছে সেই গরম পানি, যে গরম পানি নরম ডিমকে শক্ত করে আর শক্ত আলুকে নরম করে। যা করা দরকার আমরা তাই করবো ইনশাল্লাহ্।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, আমাদের বহু মিছিলকে রাস্তায় বাধা দেয়া হয়েছে যাতে সমাবেশে আসতে না পারে, আমাদের ডানে এবং বামে সমস্ত জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে আমরা সমাবেশ করতে না পারি। এতো ভয় কেনো? আজকে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, অনতিবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। নইলে আমাদের সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলতেই থাকবে, এই কর্মসূচি থাকবে না।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমরা শহীদ জিয়ার খেতাব কেড়ে নেয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারা সেই খেতাব কেড়ে নিতে চায় যারা ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলো, যারা কলকাতার থিয়েটার রোডে হোটেলের রুমের মধ্যে যুদ্ধ করেছিলো, তারা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়ার খেতাব কেড়ে নিতে চায়। আরেক রাজশাহীর নেতা বলেছেন, শহীদ জিয়া নাকি এদেশের লোকই ছিলেন না, আরেকজন বলেছেন, শহীদ জিয়া নাকি পাকিস্তানিদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন, আরেকজন বলেছেন, শহীদ জিয়া নাকি শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। এসব আবোল-তাবোল কথা কারা বলে? পাগলরা বলে। একটা খেতাব আছে শহীদ জিয়ার নামে তাই হজম করতে পারছেন না। প্রস্তুত হোন আগামীতে স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির ছবি থাকবে বাংলাদেশের এক হাজার টাকার নোটে, পাঁচ শ টাকার নোটে। সেজন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।