২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত ভারতীয় গোয়েন্দা ‘র’, শেখ হাসিনা-প্রথমআলোর মতিউর-আনিসুলরা
মুহাম্মদ মনজুর খান, দিনকাল
প্রকাশ: ০২:১০ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:২৬ পিএম, ২ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৫
২০০৪ সালে একুশ আগস্ট হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনা সরকারি প্রত্যক্ষ মদদে ঘটিয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ’রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং -র’ এবং এই নাশকতা ঘটনার সবটাই আগে থেকে জানতো শেখ হাসিনা এবং প্রথমআলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। ভারতের টার্গেট ছিলো বিএনপিকে জঙ্গি দল এবং বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ছিলো দেশকে অস্থিতিশীল করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা। এক্ষেত্রে আওয়ামী লগের ঘনিষ্ট সহযোগি হিসেবে কাজ করেছে প্রথমআলো।
সিনিয়র সাংবাদিক মার্কিন প্রবাসী জনপ্রিয় ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেন রোববার রাতে এক ভিডিও প্রতিবেদনে এমন তথ্য দিয়েছেন।
ফিফটিন মিনিটস ভিডিও যে নাটকে প্রাণ যায় ২৪ জনের শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি এই তথ্য তুলে ধরেছেন।
সম্প্রতি হাইকোর্ট এই মামলার হাসিনা আমলের কিশোরগঞ্জ-২ আসনে নৌকার পরাজিত প্রার্থী সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দের করা তদন্ত রিপোর্টও বাতিল করেছেন। এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার বিষয়টি তুলে এনেছেন। ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও ভারতীয় এজেন্ট খ্যাত প্রথমআলো পত্রিকার সাংবাদিকরা এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমকে জড়িয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে।
ইলিয়াস হোসেন তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন কিভাবে হামলা পরিকল্পনা ও ঘটনা জানতো হাসিনরা। ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফের ছেলে সাইদ খোকনের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগেই তারা জেনেছেন একটি দল ঢাকায় ঢুকে পড়েছে এবং হামলা করবে। শেখ হাসিনা এসবের উত্তরে বলেছিলেন, রাজনীতি করতে হলে এসব ভয় পেলে চলবে না। বরং গ্রেনেড হামলা বাস্তবায়ন করতে হাসিনা ২১ আগস্টের সমাবেশের স্থান পরিকল্পনা মতো মুক্তাঙ্গন থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিয়ে আসেন। ৪ দিন আগে সমাবেশের স্থান হিসেবে মুক্তাঙ্গনে সমাবেশে পুলিশের অনুমতি নিলেও, মাত্র তিন ঘণ্টার ঘোষণায় ট্রাকের ওপর মঞ্চ করে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন হাসিনা। এতে পুলিশের পক্ষে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আশপাশের ভবনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
সমাবেশে ছোঁড়া গ্রেনেড নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ দিয়েছেন ইলিয়াস হোসেন ও তার সাথে কাজ করা সাংবাদিকরা। হামলায় দুই ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়, যেগুলোকে বোমা হিসেবেও বলা যায়। ঘটনার পুরো ভিডিও এনটিভির ক্যামেরায় পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি। বলেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষন করে বোঝা যায়, প্রাণঘাতী গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিলো আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর। কিন্তু মঞ্চে বা হাসিনার ট্রাকে ধোয়ার বোমা মারা হয় যাতে প্রাণহানির মতো কোনো উপাদান ছিলো না। হাসিনার ব্যবহৃত গাড়িটিতে কোনো গুলির ঘটনাও ঘটেনি বলে প্রমাণ দিয়েছেন ইলিয়াস। গাড়িটি হাসিনা ও সাবের হোসেন চৌধুরী পুড়িয়ে ফেলায়ও ঘটনা ধামাচাপার বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি। আইভি রহমানের মৃত্যুর বিষয়টি শেখ হাসিনার পরিকল্পনার অংশ বলেও তথ্য দিয়েছেন ইলিয়াস হোসেন।
বিএনপি-জামায়াতের আমলে গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত সঠিক ছিলো এবং বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদিনের তদন্তে ভীত হয়ে ভারত ও হাসিনা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দায়িত্ব তুলে দেয় প্রথমআলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও আনিসুল হককে। প্রথমআলো ২০০৮ সালের ২১ আগস্টেও একটি রিপোর্টে এই সত্যতা তুলে ধরেছে। রিপোর্টটি ছিলো প্রতিবেশি দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেছে বিচারপতি জয়নুল কমিশন। বিচারপতি জয়নুল আবেদিনকে থামাতে প্রাণনাশের হুমকি ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করা হুমকি দেয় ভারতীয় গোয়েন্দারা। কিন্তু তাতে থামেননি বিচারপতি জয়নুল।
পরিস্থিতি সামাল দিতে র- কর্মবরতারা দায়িত্ব দেয় প্রথমআলোকে। প্রথমআলো তার পরীক্ষিত জঙ্গি বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক টিপু সুলতান ও মহিউদ্দিনদের মাঠে নামায়। মামলার নিয়ন্ত্রণ নিতে জজ মিয়াকে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেই ট্রাম্প কার্ডে জয়ী হয়েছে প্রথমআলো, শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ আর তাদের ত্রাণকর্তা ভারত। প্রথমআলোর ওপর ভর করে গেলো ১৫ বছর চলেছে বিএনপি, জামায়াত আর আলেম সমাজের ওপর চলেছে অকথ্য জুলুম, নিপীড়ন, গণহত্যা। ২১ আগস্ট নিয়ে প্রথম আলোর খেলা করারটা দুনিয়া নিকৃষ্ট উদাহর হিসেবেও মন্তব্য করেন ইলিয়াস হোসেন।
ইলিয়াস জানান, জজ মিয়ার ঘটনা সত্য। জজ মিয়া প্রকৃতই গ্রেনেড হামলায় জড়িত। জজ মিয়াকে দিয়ে আসলে নাটক সাজিয়েছিলো প্রথমআলো। হামলার পরদিনই প্রথমআলো লিখেছিলো জঙ্গি একাধিক সংগঠন গোয়েন্দাদের তালিকার শীর্ষে। অথচ শুরু দিকে মাদ্রাসা বা আলেমদের সংশ্লিষ্টা নিয়ে পায়নি গোয়েন্দারা। এবং জজ মিয়াসহ তিনজন প্রকৃত হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ। এতে সবকিছু ভেস্তে যাবায় শঙ্কা জাগে ভারত ও আওয়ামী লীগের নেতাদের। ফলে সর্বশক্তি দিয়ে বিগ বাজেটে মাঠে নামানো হয় প্রথমআলোকে।
যেভাবে ফাঁস হলো জজ মিয়া গল্প শীর্ষক প্রথমআলোর একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর। লেখাটি লেখেন জঙ্গি মাস্টার মাইন্ড টিপু সুলতান। তিনি প্রতিবেদনে লেখেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হামলায় প্রথম গ্রেফতার করা হয়েছিলো শৈবাল সাহা পার্থকে। আরো গ্রেফতার করা হয়েছিলো মগবাজার এলাকার সাবেক ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের নেতা মোকলেসুর রহমানকে। তাদের ফাঁসাতে না পেরে সবশেষ ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে গ্রেফতার করা হয় জালাল আহমেদ ওরফে জজ মিয়াকে। ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে জজ মিয়াকে দিয়ে স্বীকারোক্তি নেয় পুলিশ। তাতে জজ মিয়া বলেন, গ্রেনেড দেখেননি কখনো, গ্রেনেড ও বোমার মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না এবং ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি বড় ভাইদের সাথে হামলায় অংশ নিয়েছেন। বড় ভাইরা হলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ, মুকুল প্রমুখ।
এরপর মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে প্রথমআলো দুইটি গল্প ছাপে। একটি গল্প ‘এই গল্পের গাথুঁনি দুর্বল’, অন্যটি ‘স্বীকারোক্তিতে ৭ অসংগতি’। তারপরেরটি ‘সেই জজ মিয়া তারকা সন্ত্রাসী’, যার সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছিলো শিশির ভট্টাচে র্যের কার্টুন - আষাঢ় মাস, জমেছে আষাঢ়ে গল্পের আসর। এরপর ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট প্রথম আলো রিপোর্ট করে জজ মিয়ার বোন বলেছে, সিআইডি জজ মিয়ার পরিবারকে ভরনপোষন করছে। এমন অভিযোগের পর সিআইডিও তদন্তে ভাটা দেয়। প্রথমআলো নিজেই একটি প্রতিবেদনে এই সরল স্বীকারোক্তি করেছে। অর্থাৎ প্রথমআলো নিজেই স্বীকার করেছে জোট সরকার তাদের কারণেই পারেনি এই মামলা এগিয়ে নিতে। তাই এটা স্পষ্ট, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে নাটক জোট সরকার করেনি, নাটক করেছে প্রথমআলো।
ইলিয়াস হোসেন রিপোর্টে আরো জানান, প্রথমআলো জজ মিয়াকে নিরপরাধ নিষ্পাপ মানুষ হিসেবে এতো বছর ধরে বলে আসলেও, প্রকৃতপক্ষে জজ মিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৫টি মামলা আছে এবং সূত্রাপুর থানার অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় তার বিরুদ্ধে ৭ বছরের সাজাও রয়েছে বিশেষ ট্রাইবুনালে। তেজগাঁও েথানাতেও জজ মিয়ার বিরুদ্ধে ২০০১ সালে ২রা সেপ্টেম্বর মামলা হয় একটি। সে মামলায় ৩৮৫, ৩২৬ এবং ৩০৭ ধারার মধ্যে ভয়ঙ্কর অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছে। ২০০১ সালের ৩০ নভেম্বর জজ মিয়ার বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল হোটেলে বাবুল হত্যা মামলা করা হয় রমনা থানায়। ২০০৪ সালে গুলশানের রহমত হত্যা মামলারও আসামি জজ মিয়া। প্রথমআলোর সাংবাদিকেরা সজ্ঞানে এইসব মামলা আড়াল করার পাশাপাশি ১৬৪ ধারার জবানবন্দিও আড়াল করেন। এরবাইরে টিকাটুলিতে অস্ত্র ও বোমা মামলায় ৭ বছরের জেল হয় জজ মিয়ার। ২ বছর জেল খেটে জামিন পেয়েছিলেন তাতে। এমনকি জজ মিয়া যে বিয়ে করেছেন তাতেও তার সঠিক নাম ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে কয়জন উঠতি সন্ত্রাসী পরিচিত পেয়েছিলেন জজ মিয়া তাদের একজন। নাখালপাড়া নুরানী মসজিদের আশপাশে জজ মিয়া হুকুমে চলতো সবকিছু। জজ মিয়ার মূল পেশা ছিলো হত্যা, ছিনতাই, দখল, চাঁদাবাজি। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবেও জজ মিয়ার খ্যাতি ছিলো। অথচ প্রথমআলোতে জজ মিয়া সিডি বিক্রেতা এবং যমুনা টিভিতে ফল বিক্রেতা বনে যায়। আদালতের জবানবন্দিতে জজ মিয়া নিজেকে গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
জজ মিয়াকে প্রথমআলো ২ লাখ টাকা দিয়ে মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারাও জজ মিয়াকে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি চাকরি দেয়া আশ্বাস দিয়েছিলেন। এবং সিআইডি জজ মিয়ার পরিবারকে টাকা দিতো প্রথমআলোর এমন খবর ভুয়া। এছাড়া নোয়াখালীর সেনবাগে জজ মিয়াকে নিয়ে প্রথমআলো মিথ্যাচার করেছে। প্রকৃতপক্ষে সেনবাগের মানুষও স্বীকার করেছে গ্রেনেড হামলার পর সেনবাগে অনেক দিন ধরে গাঁ ঢাকা দিয়েছিলো জজ মিয়া।
প্রথমআলোর সম্পাদক মতিউর রহমান নিজেও টিভিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিএনপি সরকার খালেদা জিয়া এই ঘটনার তদন্ত করতে দেয়নি, বিচারতো দূরের কথা। তারা বরং এই ঘটনাকে উল্টো দিকে চালিয়ে সব দায় আওয়ামী লীগের ওপর দেয়ার চেষ্টা করেছে। শুধু আওয়ামী লীগ না, আমাদের প্রতিবেশি ভারতকেও জড়ানোর চেষ্টা করেছে।
অথচ ২০০৩ সালে কুড়িল বস্তি থেকে অভিযানের পর রুবেল ও মানিক নামে দুই সন্ত্রাসীকে আটক করেছিলো যৌথবাহিনী। তবে সেখান থেকে পালিয়ে যায় নুরু, লিংকন, মুকুল এবং জাহাঙ্গীর নামে চার সন্ত্রাসী। রুবেল ও মানিকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ীিএক হিন্দু ব্যক্তির দোকান থেকে একে-৪৭ রাইফেল বিপুল গুলি গান পাউডার ও টাইমবোমাসহ ২০টি গ্রেনেড উদ্ধার করে। এছাড়া রুবেল ও মানিক জানান, ভারত থেকে আসা অস্ত্রে মজুদ তৈরি হচ্ছে দেশে এবং বড় রকম হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ইলিয়াস হোসেনের ভিডিওর ইউটিউব লিংক:
https://www.youtube.com/watch?v=QXn9_hxDkOU