জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০১ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫৫ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পর তাঁর রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। জিয়াউর রহমানসহ এই পাঁচজন এবং তাঁদের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার সদস্য শাজাহান খান।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ষড়যন্ত্রে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়নি।
সরকারের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট অনুসারে জিয়াউর রহমানের নামের পাশে ‘বীর উত্তম’ খেতাব রয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পাশাপাশি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খানের খেতাব।
সিদ্ধান্তগুলো সুপারিশ আকারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান শাজাহান খান। গণমাধ্যমকে শাজাহান খান আরও বলেন, ‘স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকা থেকে খন্দকার মোশতাকের নাম বাতিল করা হয়েছে। এ ধরনের আরও ব্যক্তির নাম পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়া হবে।’
এছাড়া এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বহালের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান শাজাহান খান। এর আগে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াহিদুর রহমান ও হাফিজুর রহমান মুন্সীর গেজেট ও সনদ বাতিল করেছিল মন্ত্রণালয়।
সরকারের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট অনুসারে জিয়াউর রহমান ছাড়া শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’, নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান ‘বীর প্রতীক’ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকায় ছিল খন্দকার মোশতাকের নাম। এদের মধ্যে শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।
জামুকার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের মূলনীতি বাতিল করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন।
হঠাৎ এখন কেন জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হলো—এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে, যারা মারা যায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা (ব্যবস্থা) যায় না। সে জন্য জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীর বিরুদ্ধে এত দিন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ রকম আরও যারা রয়েছে, তাদের বিষয়েও জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এদের সকলের পদক, সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে। আপাতত জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক ও মাহবুবুল আলম চাষীর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বে অনেকেরই নোবেল পুরস্কার, ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার করা হয়। তাদের হয়তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে না, কিন্তু খেতাব বাদ যাবে, অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে।’