প্রশাসনের সঙ্গে জাতীয় দিবস উদযাপন বয়কট ইবির বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১০ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসনের সঙ্গে জাতীয় দিবস উদযাপন বয়কট করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের সময় নিয়মানুযায়ী নাম ঘোষণা না করার অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন জিয়া পরিষদ ও সাদা দল।
আজ শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) উভয় সংগঠন থেকে পাঠানো পৃথক দুই প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার বেলুন উড়িয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর সেখান থেকে ভিসির নেতৃত্বে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রা শেষে মুক্তিযুদ্ধের স্মারকভাষ্কর্য "মুক্তবাংলা"র পাদদেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে প্রশাসন। পরে একে একে শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রী, সাংবাদিক সমিতি, প্রেসক্লাব, ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আবাসিক হল ও বিভাগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। এসময় সঞ্চালক ধারাবাহিকতা মোতাবেক জিয়া পরিষদ ও সাদা দলের নাম ঘোষণা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। ভিসি ও প্রো-ভিসির সামনে এর প্রতিবাদ করলেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের।
জিয়া পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বিজয় দিবসের র্যালি শেষে মুক্তবাংলায় যাওয়ার পরে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শুরু হয়। পূর্ব ধারাবাহিকতা অনুযায়ী জিয়া পরিষদের নাম ঘোষণা না করায় পরিষদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান ভিসি ও প্রো-ভিসির সামনে এর প্রতিবাদ জানান। তখন অনুষ্ঠান সঞ্চালক জানান তালিকায় জিয়া পরিষদের নাম নেই। এই ঘটনায় জিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ জানিয়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। পরে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান শেষে জিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দ মুক্তবাংলায় এসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, জিয়া পরিষদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একটি স্বনামধন্য শিক্ষক পরিষদ। শিক্ষক সমিতিতে তারা বহুবার শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতিও জিয়া পরিষদের সম্মানিত সদস্য। বিজয়ের দিনে এমন ন্যাক্কারজনক ও উদ্দেশ্যপূর্ণ আচরণের কারণে জিয়া পরিষদ পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেন। তিনি আরও বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হট্রগোল শুরু করে। জিয়া পরিষদের নাম ঘোষণা করায় সেদিন সঞ্চালককে শাসায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. শরফরাজ নেওয়াজ অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত জাতীয় দিবসের কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেন।
সাদা দলের নেতৃবৃন্দরা বলেন, জাতীয়তাবাদী পরিবারের সংগঠন সাদা দলকে 'মুক্তবাংলা' ভাস্কর্যে শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিয়মানুযায়ী নাম ডাকা হয়নি। এজন্য কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান শেষে আমরা পৃথকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছি। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলো আগে ফুল দেয়ার কথা। কিন্তু দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসন আমাদের আগেই ছাত্র সংগঠনের নাম ডাকে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত কোনো কর্মসূচিতে আমরা অংশগ্রহণ করবো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা চেয়েছি কোন বিশৃঙ্খলা যেন না ঘটে। এজন্য আমরা পরিষ্কার করে উনাদের নিয়ে আসতে চেয়েছি। পরে তাদের নাম ঘোষণা করে অপেক্ষা করা হয়। তারা না আসায় অন্যদের ডাকা হয়েছে।