সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সার্বিক ব্যর্থতা : বিএনপি মহাসচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৮ পিএম, ৫ অক্টোবর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩০ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ে ঘটনা বিদ্যুৎখাতে ‘সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার সার্বিক ব্যর্থতা’ বলেই মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুপুর থেকে ৬ ঘন্টা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অধিকাংশ জেলায় বিদ্যুৎহীন অবস্থার বিষয়ে আজ বুধবার দুপুরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি যে, এটা(জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়) সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা। যে কথাটা আমাদের টুকু সাহেব(সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু) বললেন যে, এখানে যে পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এবং যে কাঠামোগত ব্যাপারটা থাকে অর্থাৎ টেকনিক্যাল সাইড যেটা থাকে সেখানে টোটালি চুরি হয়েছে বলেই আজকে এই বিপর্যয় ঘটেছে।”
‘‘এটা একটা ঘটনা নয়। এটা আপনার শুধু বিদ্যুতে নয়। সর্বক্ষেত্রে ঘটনাগুলো ঘটছে। যার ফলে আজকে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি, এর জন্য মূলত দায়ী সরকারের অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন প্রজেক্ট গ্রহণ করা, বিভিন্ন উন্নয়নের প্রকল্প করা যার লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সরকার যে এতো চিতকার-চেচামেজি করছে সবসময় যে, আমরা বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি, অতিরিক্ত উৎপাদনও হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায়। সেগুলো নিয়ে আমরা সেমিনারে বলেছি, কোথায় সমস্যা হচ্ছে।কিন্তু গতকালের ব্যাপারটা ছিলো অস্বাভাবিক ব্যাপার। সারাদেশে প্রায় ৮ ঘন্টা বেশিরভাড় জায়গাতে বিদ্যুত ছিলো না-ইট ইজ এ টোটাল ব্লাক আউটের মতো হয়ে গেছে।”
‘‘এর থেকে যেটা বুঝা যায়, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে বহু প্রজেক্ট করেছে, টাকা পয়সাও বহু বানিয়েছে। বানিয়ে শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে, এই ধরনের একটা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে, সব কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ফিল্টিং স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে জাতিকে এক অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দিলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ সারাদেশের অর্ধেক অঞ্চলের বিদ্যুৎ চলে যায়। সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার পর ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ ফেরানো কাজ শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা।
এদিকে সরকার এই বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ(পিজিসিবি) এর নির্বাহী পরিচালনক ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুপুরে আসাদ গেইটে দলের স্থায়ী কমিটির অসুস্থ সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
পরে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যৎ বিপর্যয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘‘সারাদেশে যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দিয়েছে সেগুলো ইউনিভাইড স্পেসিফিকেশনে দেয় নাই। যার ফলে কোনো পাওয়ার স্টেশন খুব নিউ জেনারেশনের আবার কোনোটা পুরনো। এদের মধ্যে সিনকোনাইজড করা সম্ভব না।’’
‘‘এই সরকার বিদ্যুৎ সেক্টারটাকে ‘খিদা আছে খাও, যত খাইতে পারিস খাও, তারপরে বিদ্যুৎ দিছে’। বিদ্যুত যে শুধু জেনারেশনে বিদ্যুৎ চলে না, ট্রান্সমিশনে লাগবে, ডিসট্রিবিউশনে লাগে-এগুলোর কিন্তু খুব একটা উন্নতি হয় নাই। খালি বিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়েই গেছে। বানিয়ে যাওয়ার ফলে আজকে যেটা হয়েছে। এটা আরো হবে ভবিষ্যতে।কারণ সিনট্রোনাইজ করে নাই।”
তিনি বলেন, ‘‘রেন্টাল পাওয়ার যেগুলো আছে এগুলো পুরনো মেসিন। পুরোনা মেসিন আর নতুন যেগুলো আছে- সেগুলো এক না। কোনো না কোনো সময় দেখা যাবে একটা ক্লিপ করলে সবগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। সিনট্রোনাইজড করতে পারবে না। কারণ নতুনটার সাথে পুরনোটার সিনট্রোনাইজড করা যায় না।”
‘‘এই যে লুটপাট করার জন্য যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে পাওয়ার স্টেশন দিয়েছে, সেই পাওয়ার স্টেশনের স্পেসিফিকেশনগুলো কি, প্রসিডিউরগুলো কি, এটা একটার সাথে আরেকটা ম্যাচ করবে কিনা এসব বিবেচনা করে নাই। না করার ফলে আমরা দেখলাম যে, ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ নাই। একটা দেশে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকলে কত ওয়ার্ক আউট নষ্ট হয়, কত প্রডাকশন নষ্ট হয় এটা আপনারা সাংবাদিকরা বুঝতে পারছেন।”
তার দল বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন কিভাবে করবে জানতে চাইলে টুকু বলেন, ‘‘ আমরা একবারে প্রাইভেটাইজেশন জেনারেন করা যাবে না। করলে সাধারণ মানুষের জন্য প্রাইজ করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা মিক্সড করবো।”
‘‘আমাদের যে পলিসি ছিলো ৩০% বেসরকারি এবং ৬০% সরকারে থাকবে- এভাবে আমরা বিদ্যুতের উন্নয়ন করবো। এই উন্নয়নের সাথে সাথে ট্রান্সমিশন ও ডিসট্রিবিউশটাও সমন্বয় করে করব। যাতে সমস্যা না হয়।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ আওয়ামী মডেল অব ইকোনমী- এটা(জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়) তার প্রতিফলন। তারা করেছে কী? দুর্নীতির জন্য একচেটিয়া কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দিয়েছে যত তাড়াতাড়ি টাকা বানানো যায়। কিন্তু এগুলোর ট্রান্সমিশন, ডিসট্রিবিউশনের যে সিনকোনাইজেশন তারা সেটা করে নাই। কারণ সেদিকে তারা মনোযোগ দেয় নাই। এখান টাকা বেশি আছে বলেই।”
‘‘সবচেয়ে বড় দূঃখের বিষয় হচ্ছে এই সব পারমিশন কিন্তু আনসোলিসিটেড। এগুলোর টেন্ডার হয় নাই। তাদের(সরকার) নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে। আইনও করা হয়েছে যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করা যাবে না এবং তাদেরকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধাসহ ফিক্সড চার্জসহ নিয়মিত পয়সা দিচ্ছে জনগনকে আজকে তার মূল্য দিচ্ছে।”
‘এই সরকার এখন বোঝা’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা যে, কোথাও তো কোনো জবাবদিহিতা নাই। দেয়ার ইজ নট ইলেক্টেড পার্লামেন্ট। আপনি যে প্রশ্ন করবেন, কোথাও যে জবাব চাইবে সেই জবাবটাও চাইতে পারছেন না। যেহেতু এই সরকারের কোনো রকমের জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায় নেই, দায়িত্বশীলতার ব্যাপার নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন এই ঘটনাগুলো ঘটছে এবং এই ঘটনাটা(জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়) তারই একটা প্রমাণ যে, তাদের দায়িত্বশীলতার অভাব এবং তাদের জবাবদিহিতার অভাবের কারণে এই ঘটনা ঘটছে।”
‘‘সেই কারণে কিন্তু আমরা বার বার করে বলছি যে, এই সরকার এখন একটা বারডেন হয়ে গেছে দেশের উপরে, এটা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। এই সরকারকে না সরালে এই জাতির অস্তিত্বই টিকে থাকা মুশকিল হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই রাস্তা যে, দে মাস্ট রিজাইন এবং একই সঙ্গে একটা কেয়ারটেকারের অধীনে একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এছাড়া এর কোনো বিকল্প পথ নেই।”
‘‘তাহলেই শুধুমাত্র এই ভয়াবহ যে একটা ঘাত তৈরি করেছে, ভিসাচ সার্কেল তৈরি করেছে, দুষ্ট চক্র তৈরি করেছে লুটপাট করে যাওয়ার। যেটা আমার সব সময় মনে হয় যে, বর্গীদের মতো অবস্থা হয়ে গেছে বাংলাদেশে। যে বর্গী এসে যেমন লুট করে নিয়ে চলে যেতো ঠিক একই ভাবে আওয়ামী লীগ আজকে লুট করছে, লুট করে পাচার করছে, হাজার হাজার কোটি টাকা তারা পাচার করছে সেই একটা অবস্থায় তারা দেশকে নিয়ে এসছে।”
‘তথ্য উপরিকাঠামোর ঘোষণা ভয়াবহ নিয়ন্ত্রণ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এটা ভয়াবহ ব্যাপার। এখানে আমরা যেটা বলছি যে, কর্তৃত্ববাদী এই সরকার, তার যে বর্হিপ্রকাশ, তারা যে আরো নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করবে, দেশের মানুষকে বঞ্চিত করবে সমস্ত তথ্য পাওয়া থেকে এটা তারই বর্হিপ্রকাশ। এখন আর কোনো ফাঁক ফোকর রইল না।
‘‘আমরা এই সার্কুলারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এটা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”