ইডেন ছাত্রলীগ সভাপতি রিভা ও সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২১ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৩৪ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসীকে রুম থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নির্যাতনের অভিযোগে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক মোছা. রাজিয়া সুলতানাসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি লালবাগ থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইডেন কলেজের নুজহাত ফারিয়া রোকসানা, আয়েশা ইসলাম মিম, নূরজাহান, ঋতু আক্তার, আনিকা তাবাসুম স্বর্ণা ও কামরুন নাহার জ্যোতি। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোস্তফা রেজা নূরের আদালতে এ মামলা করেন জান্নাতুল ফেরদৌসী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রাজধানীর লালবাগ থানাকে তদন্ত করে আগামী ২৩ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আদালতের পেশকার তহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন নূর-ই আলম। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী আমির আলী, আনোয়ার হোসেন মনির, সরকার রাশেদুল ইসলাম, আবুল কালাম ও মাজেদুর রহমান। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জান্নাতুল, মামলার সাক্ষী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এতে আসামিরা ভুক্তভোগী জান্নাতুলের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার দিকে রিভা ও রাজিয়ার নির্দেশে আসামি আনিকাসহ অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভুক্তভোগীর রুমে প্রবেশ করেন। তবে, তাকে রুমে না পেয়ে তার ব্যবহারিক আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নগদ ২০ হাজার টাকা ও ব্যবহৃত ল্যাপটপ নিয়ে যান। এসময় ভুক্তভোগী রুমে আসার পথে তাকে ঘিরে ফেলেন আসামিরা। তাকে বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে আসামিরা ভুক্তভোগী জান্নাতুলকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি ও মাথি মেরে বিভিন্নস্থানে জখম করেন। গত কয়েকদিন আগে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্য ও নানা অসঙ্গতি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুন ফেরদৌসী। এ ঘটনার পর শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় হলের কক্ষে গিয়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানা, আয়েশা ইসলাম মিম, কামরুন নাহার জ্যোতি, শিরিন আকতার, রিতু, স্বর্ণা, নূরজাহান, ফেরদৌসী, লিমা, পপি, বিজলীসহ আরও কয়েকজন।
নেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসীকে নির্যাতনের একটি অডিও ফাঁস হয়ে। অডিওতে শোনা যায়- জান্নাতুল ফেরদৌসী তাদের বলেন, ‘তোমাদের সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই। আমি প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলবো’। তখন কক্ষে উপস্থিত এক নেত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি ওই যে বাইরে বসা’। পরে জান্নাতুল ফেরদৌসীকে টেনেহিঁচড়ে পুকুর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি অসুস্থ। অথচ আমিসহ যারা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলো তাদের বহিষ্কার করা হলো। এটা কেমন অন্যায়! ইডেনে ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্যসহ নানা ইস্যু নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসীর দেয়া বক্তব্য দিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা এক সাংবাদিক বলেন, আমি গত কয়েকদিন আগে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্যসহ নানা ইস্যু নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করি। এতে সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসী সাক্ষাৎকার দেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের অন্য নেত্রীরা যখন জান্নাতুল ফেরদৌসীর কক্ষে প্রবেশ করেন তখন সে আমাকে কল দেন। আমি কলটি রেকর্ড করে রাখি। পরে তাকে বের করে নেওয়ার সময় উপস্থিত নেত্রীরা ফোন কাটতে বাধ্য করেন। পরে আমি ফোন করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই বিক্ষোভ করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একাংশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরদিন আবারও আন্দোলন করে ছাত্রলীগের একাংশ। রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। এসময় দু’গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একই দিন রাতে কলেজে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করে ১৬ জনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।