আইজিপি-পুলিশ কমিশনারের প্রত্যাহার চায় বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪৭ পিএম, ২৮ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩২ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে পুলিশের আইজিপি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের মন্তব্যের জেরে তাঁদের প্রত্যাহার দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের করের টাকায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা এভাবে দলীয় ক্যাডারদের মতো সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন না। অবশ্যই তাঁদের প্রত্যাহার করতে হবে।’
আজ সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ দাবি করেন।
রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির বহুমাত্রিক কুৎসিত চক্রান্তের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে সারা বছরজুড়ে স্বাধীনতার নামে এক ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করার যেসব অনুষ্ঠান হয়েছে, সে সব অনুষ্ঠানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অপাংক্তেয় ও উপেক্ষিত। আদালতের রায় আর র্যাব-পুলিশের ভয়ে সন্ত্রস্ত মুক্তিযোদ্ধারা নীরবেই পার করে দিয়েছেন তাঁদের জীবনবাজি রেখে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী। জাতির জীবনে বড় নির্মম পরিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের উপেক্ষা করে আওয়ামী দলদাস প্রজাতন্ত্রের আইন প্রয়োগকারী বাহিনী এখন জাতিকে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনাচ্ছে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুলিশপ্রধান এবং তাঁরই অধস্তন ঢাকা মহানগর পুলিশপ্রধান ভব্যতা-সভ্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ শিষ্টাচারবর্জিত অশালীন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে গোটা দেশবাসী হতবাক। আমরা আশা করি, পুলিশের অতি দলবাজ এ দুই কর্মকর্তার গর্হিত অপরাধের জন্য জাতি কোনোদিন ক্ষমা করবে না। ক্ষমতার মত্ততা এবং নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর কৃপা পেতে যে অমার্জনীয়-গর্হিত অপরাধ করেছেন, তার মাসুল তাদেরকে জনগণের কাছে একদিন দিতেই হবে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘পুলিশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে এক্সটেনশন সার্ভিসে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা চরম মাত্রাজ্ঞানহীন আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। যে নোংরা ভাষায় পুলিশ কমিশনার কথা বলেছেন, তা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তো দূরের কথা, কোনো ভদ্র পরিবারের সন্তানের পক্ষে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, খালেদা জিয়ার মতো মহিয়সী নারীকে নিয়ে যাঁরা অসম্মানসূচক বক্তব্য দেন, তাঁরা আত্মা বিক্রি করা মানুষ।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, রাজারবাগের একই অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজি বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে তীব্র রোষ নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাষায় দেশের আপামর গণতন্ত্রকামী মানুষকে ধমক দিয়েছেন। তাচ্ছিল্যভরে নানা কটূ মন্তব্য করেছেন।’
র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রিজভী বলেন, ‘বেনজির আহমেদের বন্দুক-পিস্তলের মাথায় যেহেতু গণতন্ত্রকামী বহু মানুষের জীবন-মৃত্যু নির্ভর করছে, সুতরাং তার সম্পর্কে আপাতত আর বেশি কিছু না বলাই নিরাপদ। তার ওপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর জনগণ ভেবেছিল কিছুটা হলেও দেশে গুম-খুনের ভয়ের পরিবেশ কেটে যাবে। কিন্তু গত পরশু তার বক্তব্যে বোঝা গেলো তিনি বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতেও দ্বিধা করবেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কাবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।