২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শোকদিবস ঘোষণা কর হোক : ব্যারিস্টার মীর হেলাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৮ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১০ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ভাষা দিবস ও ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ৫৭ জন সেনাসদস্যকে হত্যার প্রতিবাদে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইউএই বিএনপি। বিএনপির এই অনুষ্ঠান থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শোকদিবস ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
আমিরাত বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাধ্যমে। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১-এ স্বাধীনতা অর্জন ও গণতন্ত্রের পথচলা শুরু, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে কোনো এক সমাবেশে উর্দুকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা-কৃষক-শ্রমিক শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে তার প্রতিবাদে ঢাকার রাজপথ আন্দোলন-সংগ্রামে কাঁপিয়ে তোলেন।
আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র-জনতার উদ্যোগে যুগান্তকারী পথসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী বাংলা মায়ের সন্তানদের প্রাণের দাবি উপেক্ষা করে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে এবং সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে। অকুতোভয় বাংলার দামাল ছেলেরা তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথের আন্দোলন ও মিছিলকে আরো তীব্রতর করে তোলে। হানাদার শাসকগোষ্ঠী এদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখতে নির্বিচারে গুলি চালায় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর। সালাম, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেকের তাজা প্রাণ ঝরে যায়। সেদিন তাদের রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। অবশেষে শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেন।
তিনি আরো বলেন, এত রক্ত দিয়ে স্বাধীন করা দেশেও পুরোপুরি স্বাধীনতা নেই, সেই ফেব্রুয়ারি ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি আবারো বাংলাদেশের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। এ সময় তিনি বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শোকদিবস ঘোষণা করা হোক এটা সময়ের দাবি। তিনি আরো বলেন, শহীদ জিয়ার ঘোষণার মাধ্যমেই অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব একমাত্র জিয়া পরিবারের হাতেই নিরাপদ।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক দেশনায়ক তারেক রহমানই আগামীর বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারবেন, একমাত্র তার হাতেই নিরাপদ থাকবে বাংলাদেশ। তাই তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে তার দলকে আরো গতিশীল করতে তার দেয়া কমিটির সাথে কাজ করার আহবান জানান এবং দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সফল করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান বিনা ভোটের সরকার এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের পকেট লোপাট করছে। বিমান ভাড়া ৪-৫ গুণ বৃদ্ধি ও RTPCR-এর নেগেটিভ পজেটিভের ফেইক সার্টিফিকেট করে প্রবাসীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। অনেকেই মা-বাবা-আত্মীয়স্বজনের লাশও দেখতে যেতে পারছে না এই অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে। তিনি আমিরাত সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফেরার ক্ষেত্রে RTPCR-সহ অনেক রকমের শিথিলতা আনার জন্য। দেশ ও দলের জন্য প্রবাসীদের অবদানকে আগামীতে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান ব্যারিস্টার মীর হেলাল।
সভাপতির বক্তব্যে আমিরাত বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে অবশ্যই চৌকস সেনা হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার করা হবে। আমিরাত বিএনপি ৯টি ইউনিট কমিটি নিয়ে দলীয় ও জাতীয় সব প্রোগ্রাম পালন করে আসছে। দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনা পালন করা হচ্ছে।
আমাদের একমাত্র লক্ষ্য তাই সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে সকলকেই। তার বিকল্প কোনো সুযোগ নেই। এখানে টার্গেট হচ্ছে ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। ইনশাআল্লাহ অতি শিগগিরই দেশনায়ক তারেক রহমান দেশে ফিরে এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবেন। সেই অবধি আমাদের ধৈর্যচ্যুতি হওয়া চলবে না। যার যার অবস্থানে থেকে দেশ ও দলের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, সারা দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের মতো আমিরাত বিএনপি অত্যন্ত সাংগঠনিক ও শক্তিশালী। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষায় আপনাদের অতীতের মতো নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
আমিরাত বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইউএই কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য নাছির চৌধুরী ও স্বপ্না মনির যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এম মোদাচ্ছের শাহ। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আমিরাত বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম তালুকদার।
অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন আমিরাত বিএনপির সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম এনাম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহী আলম, দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, আবুধাবি বিএনপির সভাপতি ইসমাইল হোসেন তালুকদার, আজমান বিএনপির সভাপতি শাহীনুর সাহিন, শারজাহ বিএনপির সভাপতি করিমুল হক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস খালেক, মুসাফফা বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আবুল বাসার, হানিফ খোকন, মুজিবুল হক মঞ্জু, আজিজুল ইসলাম কিরণ।
মাওলানা মোশাররফ হোসেনের কোরআন তেলাওয়াত ও বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে ভাষা শহীদ ও পিলখানায় নিহত সেনা অফিসারদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।