বিএনপি অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের একটি অসাম্প্রদায়িক দল - মির্জা আব্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৮ এএম, ১৭ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫৩ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সরকার ‘কাঁচের ঘর’ বসে ‘লম্বা লম্বা’ কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে সরকারের কিছু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে আজ শনিবার দুপুরে এক দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় জাতীয়তাবাদী উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এই দোয়া মাহফিল হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, এই যে যারা লম্বা লম্বা কথা বলে, যাদেরকে চিনতে গেলে সার্চ লাইট দিয়ে খুঁজতে হয়-এরা কারা? নাম কি, বাপের পরিচয় কী? আসেন না সাহস করে আমরা পাহারা দেবো, আসেন আমাদের সঙ্গে একটু রাস্তার মধ্যে হাঁটেন। আমরা দেখি কতজন আমাদেরকে ফুল দেয়, আপনাদের গায়ে থু থু দেয়-এটা আমরা দেখব। ওই সাহস তো আপনাদের হবে না। আপনারা (সরকার) ওই কাঁচের ঘরে বন্দি হয়ে লম্বা লম্বা কথা বলছেন আর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করছেন।
কুমিল্লার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে এই যে এতো বড় বিশাল পুলিশ বাহিনী। আমাদের সময় ছিলো ৫০ হাজার পুলিশ। আর এখন ৫ লাখ পুলিশ বাংলাদেশে। কাকে পিটানোর জন্য? যদি ডাকাত ধরা না যায়, যদি ব্যাংক লুটেরাদের ধরা না যায়, যদি চোর ধরা না যায়, যদি খুনি ধরা না যায়, যদি পূজামন্ডপে হামলাকারীদের ধরা না যায় যায় তাহলে এই পুশিশের কাজ কী? বিএনপি ঠেকানো। এটা বোধহয় বেশিদিন চলবে না। কারণ সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ একটা আছে, প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিন্তু নিজ থেকে গড়ে ওঠে, গড়াতে হয় না।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, এই সমস্ত নোংরামি ছাড়েন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আপনারা বহু পন্থা অŸলম্বন করেছেন, বহু খুন করেছেন, বহু গুম করেছেন, আমাদের বিএনপি-যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দল-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হয়রানির মাধ্যমে জেলখানা ভরে ফেলেছেন। কোট কাঁচারীতে আমাদের লোক ছাড়া কাউকে দেখা যায় না। দেশে কোনো বিচার ব্যবস্থা নাই, আছে শুধু পুলিশ, আছে শুধু কোর্ট- এটা দিয়ে আপনারা টিকে আছেন। বর্তমান অŸস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে নেতা-কর্মীদের ‘নিশিরাতের সরকার’কে হটাতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান মির্জা আব্বাস।
বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, চিকিৎসকরা বলেছেন দেশনেত্রীর উন্নত চিকিৎসা দরকার-এই কথা ঠিক। কিন্তু ওনাকে উন্নতমানের চিকিৎসা দেবে না এই সরকার। তিলে তিলে ওনাকে মেরে ফেলাই হলো সরকারের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই ওনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের আসল বিষয় হলো ওনাকে আটকিয়ে রাখা আর ওনাকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা।
তিনি বলেন, আমি এখানে গাড়ি থেকে নামার সময় দেখলাম অনেক পুলিশ। আরে ভাই কেন? এটা কি জঙ্গি অফিস? এটাতো বিএনপি কার্যালয়। স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত একটি দোয়া মাহফিল হবে। এখানেও আপনারা আমাদেরকে বসতে দেবেন না।
ঢাকার সাবেক এই মেয়র বলেন, এটা ঠিক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত মানের চিকিৎসা দরকার। কিন্তু এই সরকার সেটা তো দেবে না। তিলে তিলে তাঁকে মেরে ফেলা সরকারের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই মাত্র ২ কোটি টাকার একটি মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দেশবাসী জানে ট্রাস্টের টাকা ট্রাস্টেই আছে। সেই দুই কোটি টাকা ব্যাংকে এখন ৮ কোটি টাকা হয়ে গেছে। সেই টাকা তিনি নিজেও খাননি ও বিদেশেও পাচার করেননি।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকে আপনাদের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ধরা পড়ছে। আপনার এক মন্ত্রী বলছেন চার হাজার কোটি টাকা নাকি কোনো বিষয় না। আর সে জায়গায় মাত্র ২ কোটি টাকার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেল খাটবেন এটা কোনো কথা হতে পারে না। আসল কথা হলো ওনাকে আটকে রাখা, ওনাকে তিলে তিলে হত্যা করা। এটাই হচ্ছে এই সরকারের পরিকল্পনা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছেন বিশ্ববেহায়া এরশাদ। এরশাদ কার লোক? বিশ্ববেহায়া এরশাদ তো শেখ হাসিনার সার্টিফাইড বন্ধু। সরকারের অপকর্ম ঢাকার জন্য আগে বেফাঁস কথা-বার্তার প্রতিযোগিতা ছিল ওবায়দুল কাদের এবং হাসান মাহমুদের মধ্যে। তাদেরকে এখন টপকাতে চান এই ‘অবৈধ’ তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে মুরাদ হাসানের বক্তব্যের পরে ঘটনা ঘটলো কুমিল্লায়, এরপরে সারাদেশে টেনশন, উত্তেজনা ও রক্তপাত। গতকাল চৌমুহনীতে উত্তেজনা বিরাজ করেছে। গতকাল ১৪৪ ধারা জারি করেছে। কেন এই পরিস্থিতি? ওই যে মুরাদ হাসান যে বক্তব্য রেখেছে তারপরেই এই ঘটনা। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই সরকার তার সকল অপকর্ম, সকল জনবিরোধী কর্ম, রক্তপাত, গুম-খুন সবকিছু আড়াল করার জন্য এবং দ্রব্যমূল্য যে বাড়তি সেগুলো আড়াল করার জন্য। সরকারের এজেন্সির যে নীল নকশা সেই নীল নকশারই একটা অংশ কুমিল্লার ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, আপনি নাকি দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দেন। তাহলে কেন এই দেশের জনগোষ্ঠীর কোনো নিরাপত্তা নাই?
তিনি বলেন, এদেশের কোনো মুসলমান-হিন্দু এই ঘটনা ঘটাবে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনের দেশ বাংলাদেশ। সেখানে আপনার আমলেই রামু, উখিয়া, টাঙ্গাইল ও পাবনায় হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে এবং তাদের সম্পত্তি লুট করা হয়েছে। বিএনপি ’৯১ ও ২০০১ সালে ক্ষমতায় ছিল। তখন তো কোনো সংখ্যালঘু হিন্দু মন্দিরে হামলা হয় নাই। তাদের ধনসম্পত্তিও লুটপাট হয় নাই।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, চরম দুর্দিনের দিকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। নিজের অবৈধ সত্তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। আর প্রভুদের খুশি রাখার জন্য। আর প্রভুদের দেখাচ্ছেন আমি ছাড়া এসবের মোকাবিলা কেউ করতে পারবে না। রিজভী বলেন, গতকাল ছিল বিশ্ব খাদ্য দিবস। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় তাহলে প্রতিবছর ১৯৪০ লাখ টন খাদ্য কেন আমদানি করতে হয়? ৪৭ লাখ টন খাদ্য বিনষ্ট হয়। কারণ লুটপাটের সরকার তাদের লোক দিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়ান। আর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই অŸদান জিয়াউর রহমানের, বেগম খালেদা জিয়ার। তাই তিনি চেষ্টা করছেন কি করে জিয়াউর রহমান- বেগম খালেদা জিয়ার সমকক্ষ হওয়া যায়। মানুষ খাদ্যের অভাবে নিজের সন্তানকে বিক্রি করছে এমন একটা পরিস্থিতি দেশে। আর আপনি বলছেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গতকাল খাদ্য দিবসে এরকম টাটকা মিথ্যা কথা এই প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোভা পায়। রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা একটা অরাজকতার ঘোর অন্ধকার দুর্ভিক্ষের মধ্যে বসবাস করছি। এ ধরনের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একমাত্র জাতীয়তাবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে। যিনি এই মাটি মানুষের সাথে মিশে আছেন তাকে তো ধ্বংস করা যায়নি। পারেনি তাদের আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন এবং হাসিনা পারেনি তাই মিথ্যা মামলা দিয়ে চিকিৎসা না দিয়ে বন্দি করে রেখে নানা ধরনের নির্যাতন করে যাচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তিনি বলেন, আজও সংবাদপত্রে দেখলাম তাঁর জ্বর কমেনি এবং মুখে রুচি নাই। তার ইচ্ছামত তিনি চিকিৎসা নিতে পারেন না। কিন্তু শেখ হাসিনা যখন কারাগারে ছিলেন তার ইচ্ছামত তিনি স্কয়ারের চিকিৎসা নিয়েছেন। এই সরকার শুধু নিষ্ঠুর সরকার নয় একটা নেকড়ে সরকার। রক্তের জন্য সবসময় উন্মাদ হয়ে থাকে।
ঢাকা মহানগন উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজওয়ানুল হোসেন রিয়াজের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলপূর্ব আলোচনা সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, দক্ষিণের সভপতি এসএম জিলানী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, দফতর সম্পাদক মো.রফিকুল ইসলাম, সহ সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামানসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।