সরকার পতনের আগে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না - বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩১ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৮ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সরকার পতনের আগে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি। এ জন্য কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহবান জানান। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসম হান্নান শাহ স্মৃতি পরিষদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার পুরো প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম ১৭ জন সাময়িক বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটাও দলীয়ভাবে করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে আছেন যাদের ন্যূনতম যোগ্যতা নেই। আজকে প্রশাসনে দলীয় ভিত্তিতে লোক নেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতেও লোক নেয়া হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে। যেখানে চাকরির জন্য যাবেন সেখানেই দলীয় ভিত্তিতে নেয়া হয়। এইভাবে আজকে পুরো প্রশাসনকে সরকার দলীয়করণ করে ফেলেছে। রাষ্ট্রকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। যারা আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে আছে, তারা একে একে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এই সময়টা বাংলাদেশের সবচাইতে দুঃসময়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর হচ্ছে। এত খারাপ সময় আমরা আগে কখনো দেখিনি। আমরা স্বৈরাচার দেখেছি, আমরা একনায়কতন্ত্র দেখেছি। কিন্তু এই যে ভয়াবহভাবে ফ্যাসিবাদ গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং জাতীর সমস্ত অর্জনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এটা আমরা অতীতে কখনো দেখিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে মানুষ কথা বলতে পারে না, কেউ কথা বলার সাহস পায় না। আমি কালকে একটি রেস্টুরেন্টে চা খেতে গিয়েছিলাম। আমি যাওয়ার পর সেখানে সবাই ছুটে আসলো। আমরা যাদেরকে বয়-বেয়ারা বলি। তারা এসে বলছে, স্যার আমরা কেউ গাজীপুরে থাকি, কেউ ভোলায় থাকি, কেউ রাজশাহীতে থাকি। আমরা কেউ এলাকায় থাকতে পারছি না। আমরা মিথ্যা মামলা এবং ওদের (আওয়ামী লীগ) অত্যাচারে পালিয়ে চলে এসেছি। এই রকম অবস্থা বাংলাদেশে এখন শুরু হয়েছে। এ রকম ঘটনা একটা-দুটো নয়। প্রায় সব জায়গায় দেখবেন আমাদের ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ছেলেরা এমনকি বিএনপির বয়স্ক লোকেরা এলাকায় থাকতে পারছে না। অভিযোগ করে তিনি বলেন, আজকে ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আমাদের ৫শর অধিক নেতা গুম হয়ে গেছেন, সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও তারা আবার বলে নির্বাচনের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। আরে আপনারা জেনে-শুনে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছেন যে, এখানে কেউ যেন ভোট দিতে না পারে-সেই ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। আপনারা এখানে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছেন যে, কেউ কোনো বিচার পাবে না। আজকে আপনি যে কোর্টেই যান সেই কোর্টে বিএনপি দেখলেই তার জন্য আলাদা বিচার, আর বিএনপির বাইরে আলাদা বিচার। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ‘জোটবদ্ধ’ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে শুধু বিএনপির জন্য নয়, আজকে দেশকে যদি বাঁচাতে হয়, জনগণকে যদি তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হয়, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হয়, বাঁচার অধিকার, কাজের অধিকারকে যদি ফিরিয়ে দিতে হয় তাহলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জোট বাঁধতে হবে, বিভক্তি নয়। আমাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যকে আরো সুদৃঢ় করতে হবে। সমস্ত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদেরকে আজকে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে এবং মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ-ফ্যাসিস্ট-দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে-এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের শপথ এবং সেটাই হবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসম হান্নান শাহের প্রতি সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান প্রদর্শন। আসুন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আমরা সবাই এক সাথে এগিয়ে যাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থনৈতিক দিকে সরকার চরম দুর্নীতি করছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি নাই। দেশ একটি লুটপাটের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। যেখানে যাবেন সেখানেই দুর্নীতি-লুটপাট। মেগা প্রজেক্টে আরো বেশি মেগা লুটপাট।
তিনি বলেন, ’৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগের একই অবস্থা ছিল। তখনও তারা লুটপাট করতো। তখন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নামটা এখন বদলে এর নাম রাখা উচিত ‘নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি’। আজকে তারা ঠিক লুটপাট সমিতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। করোনায় সম্পূর্ণভাবে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা টিকা সংগ্রহের কথা বলে টিকা সংগ্রহ করতে পারেনি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সকল অর্জন তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের মাতা যিনি দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে, বিদেশে পাচার করছে তাদের কিছু হয় না। আর আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একইভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অন্ধকার সময়ের পথ প্রদর্শক বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগিডিয়ার হান্নান শাহর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। তিনি একজন সৈনিক ছিলেন। সৈনিকের চরিত্র যুদ্ধ করা। তিনি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন। ১/১১ তে বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের যে পরিকল্পনা তা রুখে দিতে তিনি সংগ্রাম করেছেন। যার জন্য তিনি জেলেও গিয়েছেন। আজকে দেশের এই অবস্থায় তাকে আমাদের খুব প্রয়োজন ছিলো।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। কথা পরিষ্কার, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি ও দেশের জনগণ যাবে না। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যেভাবে যা হবে ইনশাল্লাহ আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আমরা বলতে চাই, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। কিন্তু এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। চেষ্টা করলে প্রতিরোধ করা হবে, বাধা দেয়া হবে। সেই বাধার মুখে আপনারা টিকে থাকতে পারবেন না। নেতা-কর্মীদের সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান তিনি। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন সম্পর্কে মির্জা আব্বাস বলেন, ইদানিং রব উঠেছে যে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবেন সার্চ কমিটি দিয়ে। ভাই সার্চ কমিটি কোনো দিন শুনি নাই। এই আওয়ামী লীগের সময়ে শুনলাম-খালি কয় সার্চ কমিটি সার্চ কমিটি। এই সার্চ কমিটির কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নাই। আপনারা সার্চ কমিটির মাধ্যমেই করেন আর যেভাবেই করেন- আমরা ওই জায়গাতে নাই।
আয়োজক সংগঠনের আহবায়ক গাজীপুর জেলার আহবায়ক বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও জেলা নেতা মজিবুর রহমান ও সাখাওয়াত হোসেন সবুজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া, কৃষক দলের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম বাবুল, গাজীপুর বিএনপির ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, খন্দকার আজিজুল রহমান পেয়ারা, হেলাল উদ্দিন, আলহাজ খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিম, আবু তাহের মসুল্লী, রাশেদুল হক এবং মরহুম হান্নান শাহের ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল। ২০১৬ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।