ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাডুবিতে নিহত বেড়ে ২২ : বিএনপির শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৭ এএম, ২৯ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৭ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর লইসকাবিলে নৌকাডুবির ঘটনায় আরও এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নৌকাটি ডুবে যাওয়ার প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে শিশুটির লাশ ভেসে উঠে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। এর আগে নৌ-দুর্ঘটনায় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। ২১ জনের মরদেহ রাতেই তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান মরদেহগুলো স্বজনদের বুঝিয়ে দেন। এ সময় তার সাথে জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান ছাড়াও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাতেই ২১জনের মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ সময় লাশ পরিবহনের জন্যে স্বজনদের কাছে ২০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়। যাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজল বেগম (৪০), দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেরকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার শিশু কন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) ও তার মেয়ে মুন্নি (১০), আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০), পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪৫)। ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনকে প্রধান করে গঠন করা ওই কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান জানান, এ পর্যন্ত ২২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বালুবোঝাই ট্রলারটি পুলিশ আটক করেছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে এবং আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে নৌকাডুবির ঘটনায় আর কেউ নিখোঁজ নেই বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আজ শনিবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে উদ্ধার অভিযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামন বলেন, নৌকাডুবির ঘটনায় আর কেউ নিখোঁজ নেই। তবে কেউ যদি দাবি করেন তাদের স্বজন এখনো নিখোঁজ আছেন, সে ক্ষেত্রে আমরা আবারও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করবো। নৌকাডুবির পরে পুলিশ দুটি নৌযান জব্দ করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে লইছকার বিলে নৌকাডুবির ঘটনায় বিজয়নগর থানায় মামলা হয়েছে। বিজয়নগরের গেরারগাঁও গ্রামের মো. সেলিম মিয়া বাদী হয়ে আজ শনিবার এ মামলা করেন। এই মামলার ৫ আসামিকে ঘটনার পর শুক্রবার অভিযান চালিয়ে আটক করে পুলিশ। একই সাথে বালুবাহী ২টি নৌকা আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হচ্ছেন: সরাইল পানিশ্বরের জমির মিয়া (৩৩), মোঃ রাসেল (২২), খোকন মিয়া (২২), মো. সোলায়মান (৬৪), বিজয়নগর পত্তনের মিস্টু মিয়াকে (৬৭)।
বিকাল সাড়ে ৪টায় জেলার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি সদর উপজেলার আনন্দবাজার ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে লইসকা বিল এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়। স্থানীয় মানুষও উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও নৌকাডুবির ঘটনায় আহতদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শোক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর থেকে আনন্দবাজার ঘাটগামী যাত্রীবাহী একটি নৌকার সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা বালু বোঝাই ট্রলারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে নৌকাটি উল্টে গিয়ে সব যাত্রী নদীতে পড়ে যায়। এতে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে ২২ জনের প্রাণহানী এবং অনেক যাত্রী নিখোঁজের হৃদয়বিদারক ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, নৌকা ও ট্রলারের সংঘর্ষে যারা প্রাণ হারিয়েছে এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছে তাদের স্বজনদের মতো আমিও গভীরভাবে ব্যথিত, শোকাভিভূত ও উদ্বিগ্ন। বারবার নৌ দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের জীবনহানি ঘটলেও তার কারণ খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধ না থাকার জন্যই মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার উপেক্ষিত থাকছে। নদ-নদীর পাশাপাশি সড়কগুলোতেও একের পর এক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতেও সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তা কখনোই আলোর মুখ দেখে না। বিএনপি মহাসচিব শোক বিবৃতিতে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌ দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন।