গিয়াসউদ্দিন কলেজের প্রিন্সিপালকে ছাত্রলীগ নেতার শ্যূট করে মেরে ফেলার হুমকি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫১ পিএম, ২৬ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:২৩ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৪
গিয়াসউদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষকে মারতে তেড়ে যাওয়াসহ গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক দ্বীন ইসলাম।
গতকাল বুধবার (২৫ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ হিরাঝিলে অবস্থিত গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের অধ্যক্ষের রুমে ওই ঘটনাটি ঘটে।
এই ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ মীর মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
কলেজ অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, দাদ্বশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী তানভীন গত দেড় বছর অনলাইন ক্লাস করাসহ কোনো প্রকার এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়নি। এই ঘটনা তার অভিভাবক (পিতা) তাজুল ইসলামকে জানালে তিনি দুইবার অঙ্গিকারনামা দেন। এরপরও সে অনলাইন ক্লাস থেকে বিরত থাকেন। তারপরও এই শিক্ষার্থীকে এইচএসসির ফরম ফিলাপের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গেল দেড় মাসেরও কিছু বেশি সময় ধরে সে অনলাইন ক্লাসতো করেই নাই উল্টো ইউটিউব দেখে দেখে অ্যাসাইনমেন্ট কপি পেস্ট করে জমা দেয়। এ কারণে তাকে এইএচএসসির ফরম ফিলাপের সুযোগ দেওয়া হবে না জানিয়ে বুধবার দুপুর দুইটার দিকে তার পিতা তাজুল ইসলামকে ফোন করে জানান অধ্যক্ষ নিজেই।
অধ্যক্ষ বলেন, তাজুল ইসলামের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পর দ্বীন ইসলাম নামে একজন লোক নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে তার মুঠোফোনে কল করেন এবং তার সাথে কথা বলতে চান বলে জানান। পরে অধ্যক্ষ তাকে জানান, আমি একটি মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছি। কথা বলতে চাইলে দ্রুত আসতে হবে। এরপরই এক যুবক তার রুমে ঢুকেন। তখন সেখানে আরও গোটা কয়েক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘দ্বীন ইসলাম এসে জানতে চান তানভীনকে কেন ফরম ফিলাপ করতে দেওয়া হবে না।’ এর উত্তরে অধ্যক্ষ্য তাকে বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয়েছে।’ ছাত্রলীগ নেতা অধ্যক্ষকে ফোর্স করে কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি তার অভিভাবকের সঙ্গে যা বলার বলেছি।’
এরপরও দ্বীন ইসলাম একরকম উত্তেজিত হয়ে তাকে ঘটনাটি বলার জন্য ফোর্স করতে থাকেন। তখন অধ্যক্ষ জানান, আপনি কে, আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিতে হবে। তখন দ্বীন ইসলাম উত্তেজিত হয়ে নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা দাবি করেন এবং অধ্যক্ষের দিকে মারমুখি ভঙ্গিতে মারতে তেড়ে যান এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। তখন অধ্যক্ষ তাকে হাত নেড়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এসময় তিনি আবারও তেড়ে আসতে চাইলে উপস্থিত শিক্ষকেরা তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে তিনি অধ্যক্ষকে কলেজের বাইরে এলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা দ্বীন ইসলাম বলেন, আজকে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের শেষ তারিখ। তানভীন খুবই মেধাবী ছেলে। কিন্তু তাকে ফরম ফিলাপ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আর তার বাবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। তিনি আসবেন রাতে। তাই বিষয়টি আমাকে দেখার জন্য বললে আমি তানভীনের পক্ষ নিয়ে কলেজে যাই। কিন্তু মোসাদ্দেক আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং অন্যান্য শিক্ষককদের নিয়ে আমাকে আটকে মারধর করতে চেয়েছিলেন। আমি কোনো রকমে তার রুম থেকে বেরিয়ে আসি। এরপরও অধ্যক্ষ অন্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে সিঁড়ির উপওে আমাকে আটকে মারধরের চেষ্টা করেন। পরে আমি এসআই রিপনকে ফোন করলে তারা সরে গেলে আমি কলেজ থেকে দ্রুত বের হয়ে আসি।
অন্যদিকে যে শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে এত কিছু সেই শিক্ষার্থীর পিতা তাজুল ইসলাম বলেন, দ্বীন ইসলাম নামের কাউকে আমি চিনি না। তাকে ফোন করে পাঠানোর প্রশ্নই উঠে না। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে মেধাবী ছাত্র ছিল। কিন্তু সঙ্গদোষে সে অমনোযোগী হয়ে যায়। আমি দুইবার তার হয়ে অঙ্গিকারনামাও দিয়েছিলাম। এরপরও সে লাস্ট পনেরদিন ক্লাস করেনি। বুধবার (২৫ আগষ্ট) কলেজ থেকে অধ্যক্ষ স্যার আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানালে আমি নিজেও লজ্জিত হই এবং তাকে জানিয়েছিলাম, স্যার আপনাকে অনুরোধ করার মুখ আমার আর নেই। এখন যেটা ভালো মনে করেন আপনি করতে পারেন আমার বলার আর কিছু নেই।