চবি চারুকলার আন্দোলনে ছাত্রলীগের বাধা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৫ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:২০ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মূল ক্যাম্পাসে ফেরার আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
আজ বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
চারুকলা শিক্ষার্থীদের মূল ক্যাম্পাসে ফেরার আন্দোলনের আজ বৃহস্পতিবার ১০০তম দিন পূর্ণ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে এসে উপস্থিত হন। এরপর ১০টা থেকে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও একে একে তাঁদের সঙ্গে মানববন্ধনে যোগ দিচ্ছিলেন।
বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ ‘বাংলার মুখ’ও ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’ উপপক্ষের ১৫ থেকে ২০ জন নেতা-কর্মী সেখানে যান। এরপর বাংলার মুখ উপপক্ষের কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য শৈবাল ইসলাম চারুকলার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানান।
এ সময় শৈবালকে বলতে শোনা যায়, ‘নাছির ভাইয়ের (সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির) সঙ্গে কথা বলে আসো, আবার যাও। তাহলে আমরাসহ দাঁড়িয়ে যাব। এর এগুলো (আন্দোলন) বন্ধ করো। এখানে অনেক টাকাপয়সা লেনদেন হয়েছে। আমরা জানি।’
এরপরই ওই নেতা অন্য কর্মীদের নির্দেশ দেন ব্যানার ফেস্টুন ছিনিয়ে নিতে। একে একে ফেস্টুন ছিনিয়ে নেওয়ার পর নেতাদের বলতে শোনা যায়, ‘নাছির ভাইয়ের থেকে অনুমতি নিয়ে আসো। এরপর আন্দোলন করো।’
এরপর ছাত্রলীগের নেতারা ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান ধরেন। তাঁরা ‘অবৈধ আন্দোলন, মানি না মানব না’, ‘টাকার বিনিময়ে আন্দোলন, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
কেন আন্দোলন বন্ধের কথা বলছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেতা-কর্মীরা কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
আন্দোলনরত চারুকলা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আহির রায়হান গণমাধ্যমকে বলেন, একদল লোক এসে তাঁদের আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টা করেছেন। আন্দোলনরত কয়েকজনকে মারধরও করেছেন। ব্যানার ফেস্টুন ছিনিয়ে নিয়েছেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা সাড়া দেয়নি।
প্রশাসনের ইন্ধনেই এমনটা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে চারুকলার আন্দোলনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’ উপপক্ষের নেতা ও সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, চারুকলার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাংলার মুখ কিংবা ছাত্রলীগের নেতাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তাঁদের কোনো নেতা-কর্মী চারুকলার আন্দোলনে গিয়ে বাধা দেননি। যদি এমন অভিযোগ পাওয়া যায়, তাঁদের কোনো কর্মী সেখানে ছিলেন, তাহলে ব্যবস্থা নেবেন। একই কথা বলেন ‘বাংলার মুখ’ উপপক্ষের নেতা ও সহসভাপতি আবু বকর তোহা।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়ার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পরে সহকারী প্রক্টর শহীদুল ইসলাম দুপুর সাড়ে ১২টায় গণমাধ্যমকে বলেন, চারুকলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কেউ বাধা দিচ্ছে, এ বিষয়ে তিনি জানেন না৷ এ ছাড়া প্রশাসনের ইন্ধনের অভিযোগ করে তিনি বলেন, তিন মাসের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে৷ এখন পর্যন্ত প্রশাসন তাদের সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করেছেন। আন্দোলন বন্ধ করার জন্য কোনো ইন্ধন তাঁরা দেননি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর আর আরেকটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। বিবদমান ‘বাংলার মুখ’ ও ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’ উভয়ই আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইনস্টিটিউটে নিষেধাজ্ঞার কারণে তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন।
শ্রেণিকক্ষে পলেস্তারা খসে পড়ার জেরে ২২ দফা দাবিতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা গত ২ নভেম্বর ক্লাস বর্জনসহ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে চারুকলাকে নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে এক দফা দাবি দেন তাঁরা।
প্রশাসন দাবি না মানায় ১৬ নভেম্বর চারুকলার মূল ফটকে শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়ে দেন। সেদিন থেকে অচল হয়ে হয়ে পড়ে চারুকলার কার্যক্রম।
কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২৩ জানুয়ারি থেকে ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চারুকলায় তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি।
চবিতে চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। ২০১০ সালে নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। চারুকলার অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৩।