কুলিয়ারচরে খান সাহেব এ এফ মোহাম্মদ নুরুল্লাহর ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৪১ পিএম, ২৭ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০৮ পিএম, ৩১ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার কৃতী সন্তান প্রখ্যাত সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত খান সাহেব এ এফ মোহাম্মদ নুরুল্লাহর ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (২৭ এপ্রিল) বুধবার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে পালিত হবে।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় পারিবারিকভাবে কুরআন তিলাওয়াত, মরহুমের কবর জিয়ারত ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
জানা যায়, খান সাহেব এএফ মোহাম্মদ নুরুল্লাহ ইংরেজি ১৯০০ সাল, বাংলা ৮ ভাদ্র ১৩০৭ সনে উপজেলার খড়কমারা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মৌলভী আব্দুস ছবোর। তার ৮৪ বছরের জীবদ্দশায় প্রায় অর্ধশতাব্দী কাল যাবৎ জনগণের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে জনগণের সাথে থেকে নিবিড়ভাবে মাঠ পর্যায়ে জনসেবামূলক কাজ করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিলেন। আর এই সমাজসেবা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৪৫ সালে “খান সাহেব” উপাধিতে ভূষিত হন তিনি। ১৯৮৪ সালের এই দিনে অর্থাৎ ২৭ এপ্রিল, বাংলা ১৩৯১ সনের ১৪ বৈশাখ প্রখ্যাত এ সমাজসেবক এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান।
চির নিদ্রায় শায়িত মরহুমের স্মৃতির স্মরণে ২০০২ সালের ১০ এপ্রিল কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে কান্দিগ্রাম- দাড়িয়াকান্দি হতে কুলিয়ারচর বাজার পর্যন্ত রাস্তা “খান সাহেব মৌলভী এএফ মোহাম্মদ নুরুল্লাহ সড়ক” নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়। ওই সড়কের নামফলক উন্মোচন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহ্ফুজুর রহমান ও কুলিয়ারচর উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী অফিসার সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। খান সাহেব মৌলভী এএফ মোহাম্মদ নুরুল্লাহ স্থানীয় পাঠশালার মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করে ঢাকা মাদ্রাসা হতে জামাতে উলা, নিউ স্কীম মাদ্রাসা পাঠ্যক্রমে বিশেষ প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২২ সালে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ হতে ১৯২৪ সালে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। ১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামিক স্ট্যাডিস বিভাগে অনার্স, উচ্চতর দ্বিতীয় শ্রেণির ডিগ্রি নেন। শিক্ষা জীবন শেষে সরকারি চাকরির মোহ ত্যাগ করে সমাজ সেবার ব্রত নিয়ে তিনি নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করে ১৯২৮ সালে স্থানীয় তাতারকান্দি এমই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে স্কুলটিকে হাই স্কুলে রূপান্তর করে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে তাঁর উদ্যোগে বিদ্যালয়টি কুলিয়ারচর হাই স্কুল নামকরণ করা হয়। তাঁর কর্মময় জীবনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
কুলিয়ারচর বোর্ড কাউন্সিলে ১৯২৯ সাল হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত একটানা ৪২ বছর প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ১৯৩০ সাল হতে শুরু করে বিলুপ্তি পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ লোকাল বোর্ডের সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩২ সাল হতে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ২২ বছর ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের মনোনীত সদস্য ছিলেন। ১৯৪৫ সাল হতে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ১৯৫১ সাল হতে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত পদাধিকার বলে কুলিয়ারচরের প্রথম সাব রেজিষ্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ ছাড়া ১৯৩৭ সাল হতে বিলুপ্তি পর্যন্ত তিনি কুলিয়ারচর ঋণ সালিশি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাজিতপুর বিশেষ ঋণ সালিশি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি কুলিয়ারচর নুরুল উলুম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সেক্রেটারি এবং কুলিয়ারচর ১০ গম্বুজ জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৩৭ সাল হতে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা স্কুল বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৫১ সাল হতে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান কেন্দ্রীয় পাট কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৯ সাল হতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া কুলিয়ারচর পনির কারখানা, বাদাম মিল, যান্ত্রিক চাষাবাদের কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন তিনি। ত্রিশ দশকের গোড়া হতে এতদঞ্চলে শরীয়ত ও ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে এসব গর্হিত কাজ হতে সমাজকে বিরত রাখার সংগ্রামে জয়ী হন তিনি। ১৯৩৪ সালে তিনি কুলিয়ারচর বাজার হতে পতিতালয় উচ্ছেদ করেন। এই জননেতার ৬ষ্ঠ ছেলের মধ্যে নূরুল মিল্লাত কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং তিনি কুলিয়ারচর পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে নূরুল মিল্লাত কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সকলের কাছে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করেছেন ।