অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে সুবিধাভোগীরা ঢুকে গেছে: নুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০১ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:২৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে সুবিধাভোগীরা ঢুকে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
আজ শনিবার বিকাল ৩টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ পেশাজীবি অধিকার পরিষদের তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে পেশাজীবীদের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
নুরুল হক নুর বলেন, বাংলাদেশ পেশাজীবি অধিকার পরিষদ এক বছর আগে ড. ইউনুসকে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছিল। শিরোনাম ছিল- বিচারিক হয়রানি ও ড. ইউনুস। তখন অনেক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমরা এ কাজটি করেছি।
ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, আমাকে ১৯ জুলাই আটক করে কী পরিমাণ নির্যাতন করেছিল, তা আমার সঙ্গে যারা ছিল তারাই জানে। আমি আদালতেও বলেছিলাম, এই ফ্যাসিবাদ ঠিকবে না। যার জন্য আমাকে আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
জাতীয় সরকার গঠনের প্রসঙ্গ তুলে নুর বলেন, এক বছর আগে আমরা বলেছিলাম ২ বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এখন সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের ভেতরে সুবিধাবাদীরা ঢুকে গেছে। এই এনজিও মার্কা সরকার নিয়ে খুব বেশি দূর আগানো সম্ভব না।
নিজে অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হতে চান না জানিয়ে গণঅধিকার সভাপতি বলেন, আমরা বলছি এই সরকারকে জাতীয় সরকারের রূপ দিতে। অনেকেই ভাবতে পারেন, আমি হয়তো উপদেষ্টা হওয়ার জন্য বলছি। আমি এখানে ঘোষণা দিচ্ছি, আমি এই সরকারের পার্ট হবো না। তবে সরকার চাইলে আমরা প্রস্তাব দিতে পারি।
নুর এ সময় উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এই সরকারে যারা আছেন, তাদের কয়জন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে সরব ছিল? অথচ যারা রাজপথে ছিল তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয় নাই।
ফ্যাসিবাদী সরকার পতনে আন্দোলন একদিনে হয়নি জানিয়ে এই ছাত্রনেতা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এর পটভূমি রচিত হয়েছে। ২০১৮ সালের আন্দোলন না হলে ২৪ সালে এই আন্দোলন হতো কিনা সন্দেহ। এই আন্দোলনের সামনের সারির অনেকেই আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ছিল। তাই বলে আমরা তো নিজেদের মাস্টার মাইন্ড দাবি করতে পারি না।
একই সঙ্গে, এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের অংশগ্রহণ না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না বলেও উল্লেখ করেন নুর।
এ সময় নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্যাতিত এ ছাত্রনেতা বলেন, এখন হুট করেই নির্বাচন দিলেই বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। কারণ, অনেকের অনেক ক্ষুধা রয়েছে।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে নুরের বক্তব্য, স্যারের আন্তর্জাতিক যে যোগাযোগ রয়েছে, যেভাবে বিশ্ব নেতারা তাকে সম্মান করেন, এটা আমাদের গর্ব। আমরা ড. ইউনূসের ওপর আস্থা রয়েছে। কিন্তু আশঙ্কা তার চারপাশের লোকদের নিয়ে।
তিনি সবাইকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, দেশের সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার জন্য ভারত ষড়যন্ত্র করছে। পাহাড়িদেরকে ভারত উসকানি দিচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সামনে দুর্গাপূজা আসছে, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সনাতনধর্মের লোকেরা পূজা পালন করতে পারে। আশঙ্কা রয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা হামলা করে বিশ্বকে দেখাতে পারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কার আলাপের বাইরে রাখা বিরাজনীতিকরণের অংশ। শপথের ৫০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও কোনোকিছু সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে আরেকটি ১/১১ সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত শেখ পরিবারের কেউ গ্রেফতার হয়নি, আওয়ামী হাইকমান্ডের কেউ আটক হচ্ছে না। শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ দেখছিনা। গণহত্যার নির্দেশদাতাদের গ্রেফতার না করে কিসের রাষ্ট্র সংস্কার? সেনাবাহিনীর হাতে ৬২৬ জন আশ্রয় নেওয়াদের নাম কেনো অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশ করছে না? এই তালিকার কেউ পালিয়ে গেলে দায় সরকারকে নিতে হবে।
রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। এবার রাষ্ট্র সংস্কার না হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের রোডম্যাপ প্রকাশ করুন। আপনাদের পরিকল্পনা আমরা জানতে চাই। পরিকল্পনা ব্যতীত কোনো রাষ্ট্র চালানো যায় না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন, এখন সব জায়গায় বলা হচ্ছে একজন মাস্টার মাইন্ড আর সমন্বয়করা নাকি সব করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর, জনগণের ভূমিকা অস্বীকার করা হচ্ছে। অথচ সবাই এই আন্দোলনে যুক্ত ছিল। এই সরকার এখন কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। সরকার নিজেদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের মাঝে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। প্রয়োজন হলে সংবিধান নতুন করে রচনা করেন।
এই জবি শিক্ষক আরও বলেন, অহংকারীকে আল্লাহ পছন্দ করে না, শেখ হাসিনা তো অহংকার করেছিল, তার তো পতন হয়েছে। সেনাবাহিনীকে বলব, নির্বাচনের দিকে মনযোগ না দিয়ে পাহাড়ের দিকে মনোযোগ দিন। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নির্মুল করার জন্য অপারেশন চালান। তবে কোনো নিরীহ মানুষের ওপর অন্যায় করবেন না।
প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, এখন সবাই পদ পদবীর জন্য দৌড়াচ্ছে। দেশ সংস্কারে তাদের মনোযোগ কম। সংস্কারের পাশাপাশি ইমপ্লিমেন্টের বিষয়টা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ বলেন, ৬টি সংস্কার কমিটি করলেও এখনও গণমাধ্যম সংস্কার কমিটি করা হয়নি। এখনও গণমাধ্যমগুলোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তারা নিউজের শুরুতে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিলেও কৌশলে ভেতরে ফ্যাসিবাদের পারপাস সার্ভ করছে।
সিনিয়র সাংবাদিক পার্থ সারথি দাস বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধাপে ধাপে সংস্কার করতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার জন্য সংবিধান সংস্কারের মধ্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও আইনজীবী অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরে এরশাদ সিদ্দিকী বলেন, হাইকোর্টে স্বৈরাচার হাসিনার বিচারপতি যারা আছেন, তাদেরকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে এবং ইকবাল সোবহান চৌধুরীর মতো তেলবাজ সাংবাদিক ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। আর কোনো সময় এদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম না হোক, এজন্য পেশাজীবী অধিকার পরিষদকে সজাগ থাকতে হবে, জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এরশাদুল বারী মামুন বলেন, সংবিধান সভা করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন সংবিধান করতে হবে।।বিচার বিভাগে ও সরকারি অফিসের নাগরিককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পেশাজীবি অধিকার পরিষদের সভাপতি জাফর মাহমুদ এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পেশাজীবি অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লতিফ মাসুম, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রেজওয়ান রূপ দীনেশ, গণমাধ্যম ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক জি এম রোকনুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী নাসির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম সুমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কাউছার শেখ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শামসুল আলম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম প্রমুখ।
দিনকাল/এসএস