লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণী পারাপারে কৃত্রিম রশি সেতু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২১ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩০ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ভানুগাছ রির্জাব ফরেস্টের ১২৫০ হেক্টর এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। উদ্যানের ভিতরে সওজ এবং রেলওয়ে সড়ক অতিবাহিত হওয়ায় বনটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বন্যপ্রাণীরা এসব সড়ক পারাপারের সময় ট্রেনে কাঁটা পড়ে এবং টেরিটরিতেও ব্যাঘাত ঘটে, বিশেষ করে উল্লুক গিববন, কাঠবিড়ালি, ও বানর প্রজাতির প্রাণীর জন্য। যার পরিপ্রেক্ষিতে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই বনে সম্প্রতি প্রাণীদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম রশি সেতু'।
বন বিভাগ রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান বনের ভিতর রাস্তা পারাপারের সময় বন্য প্রাণীরা যাতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা না যায়, সেজন্য এ কৃত্রিম রশি সেতু তৈরি করা হয়েছে। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল যৌথভাবে সেতু স্থাপনের কাজটি করেছেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানীবিদ্যা বিভাগের গবেষক দলের অন্যতম সদস্য হাসান আল রাজী (চয়ন) বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.হাবিবুন নাহার নেতৃত্বে ১ বছর পৃর্বে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রশি সেতু তৈরি করা হয়েছে, বর্তমানে এই সেতু দিয়ে সাতছড়ি উদ্যানের ৫ প্রজাতির বানর সহ গন্ধ গোকুল পারাপার হচ্ছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরে দুটি সড়ক থাকার কারনে বন্যপ্রাণী পারাপারের সময় সড়কে পিষ্ট হয়ে ও ট্রেনে কাটা পড়ে অনেক প্রাণী মারা যায়, এবং উল্লুক গিববন তার টেরিটোরিতে করার সময় সড়কের দুইপাশে দুরত্ব সহ ও উঁচু গাছের সম্পৃক্ত না থাকায় যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, বন্যপ্রাণীর অবাধ ও নির্বিঘ্নে বিচরণের জন্য কৃত্রিম রশি সেতু সংযুক্ত করেছি। সেপ্টেম্বর প্রথম দিকে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, উদ্যানের মাগুরছড়া এলাকায় সড়কের ওপরে একটি জায়গায় এপার-ওপার চারটি গাছে দুটি রশি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ঠিক একইভাবে বনের ভিতরে রেললাইনের ওপর চারটি জায়গায় এপার-ওপার গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেতুগুলোর দূরত্ব ২২ থেকে ২৫ মিটার। নাইলনের মোটা রশি সড়ক ও রেলপথের দুই পাশের গাছের ডালপালার মধ্যে বেঁধে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। উল্লুক গিববন চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য সেতুগুলোর কাছে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দিনে কয়টি উল্লুক কতবার এপার-ওপার আসা-যাওয়া করে, তা নির্নয় করা যাবে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দুর্লভ উদ্ভিদ ও বিপন্ন উল্লুক গিববন সহ বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে থাকা কয়েক প্রজাতির বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল। লাউয়াছড়া বনের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কপথ এবং সিলেট-ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়েপথ। বনের বন্যপ্রাণীরা রাস্তা পারাপারের সময় মারা যাচ্ছে সড়কে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ও রেলে কাঁটা পড়ে। গত নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পাঁচটি বন্যপ্রাণী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম চৌধুরী জানান লাউয়াছড়া বনের উল্লুকের জন্য এ রশির সেতু তৈরি করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী যাতে অবাধে রেলওয়ে সড়কের উপর দিয়ে পারাপার হতে পারে সেজন্য বন বিভাগ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সমন্বয়ে রশি সেতু তৈরি করা হয়েছে। এতে রেলওয়ে সড়কে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হার অনেকটা হ্রাস পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন এই সেতুগুলো লাউয়াছড়া বনের বানর প্রজাতির প্রাণী, বিশেষ করে উল্লুকের জন্য খুবই উপকারী হবে বলে জানান।