ছয় বছর ধরে পানিবন্দি ফতুল্লার ওসমান আলী স্টেডিয়াম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:২৫ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০৯ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
দুই টেস্ট ও ১০টি ওয়ানডে ম্যাচসহ প্রিমিয়ার লীগের অসংখ্য খেলা গড়িয়েছে যে মাঠে সেটি এখন পড়ে আছে নিতান্ত অবহেলায়। অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থায় গত ছয় বছর ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের মাঠ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মালিকানাধীন আন্তর্জাতিক মানের এ মাঠটির সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ খেলোয়াড় ও সংগঠকদের। তাদের মতে, অযত্ন-অবহেলার এক অনন্য নিদর্শন খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই মাঠের সংস্কার করে খেলার উপযোগী করতে কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করে স্টেডিয়ামটি। দুই টেস্ট এবং ১০টি ওয়ানডেসহ প্রিমিয়ার লীগের অসংখ্য ম্যাচে রঙ ছড়িয়েছেন ক্রিকেটাররা। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচের পর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ মাঠটিতে গড়ায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আউটার স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে মূল স্টেডিয়াম ভরা থৈ থৈ পানি আর কচুরিপানা। মাঠটি ডিএনডি প্রজেক্টের ভেতের থাকায় এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অনেক নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। পাশের আউটার স্টেডিয়াম বর্তমানের হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে আছে। কচুরিপানা আর কালো নোংরা পানিতে সৃষ্ট উৎকট দুর্গন্ধে টেকা দায়। আউটার স্টেডিয়ামের জলাবদ্ধতার আটকে থাকা পানি চুইয়ে মূল স্টেডিয়ামের ভেতের ঢুকে পড়ায় মাঠ পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পানির নিচে থাকায় এবং সংস্কার না হওয়ায় মাঠে জন্মেছে বড় বড় ঘাস।
২৫ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গ্যালারিতে বসার চেয়ার, ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড, ভিআইপি গ্যালারি, সাংবাদিকদের বসার স্থান (প্রেস বক্স) ক্রিকেটারদের ড্রেসিং ও ওয়েটিং রুমসহ বাথরুম সবই এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার পথে। হঠাৎ করে মূল রাস্তা থেকে দেখলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম না ভেবে বড় ধরনের জলাশয় ভেবে বসতে পারেন যে কেউ।
স্থানীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ আহমেদ হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফুটবল ও ক্রিকেটের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে খেলে সুনাম অর্জন করেছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, নারায়ণগঞ্জে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম থাকার পরেও শুধু সংস্কারের অভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এই স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক মানের খেলা অনুষ্ঠিত হলে অনেকেই উৎসাহ পেতো। স্থানীয়ভাবে আরও খেলোয়াড় তৈরি হতো।
তিনি আক্ষেপ নিয়ে আরও বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে মাঠটি পানির নিচে, আউটার স্টেডিয়াম পানির নিচে থাকায় আমরা খেলাধুলা এবং প্র্যাকটিস পর্যন্ত করতে পারছি না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।
সাবেক ক্রিকেটার আল মামুন বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ শুধু নতুন স্টেডিয়াম বানানোর প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এই স্টেডিয়ামটি সংস্কার করলে যে টাকা খরচ হবে, নতুন একটি স্টেডিয়াম তৈরি করলে তার থেকে দশ গুণ বেশি খরচ পড়বে। কিন্তু তারা নতুন স্টেডিয়াম বানাতেই বেশি আগ্রহী। যে কারণে গত ছয় বছর ধরে পানির নিচে থাকলেও নারায়ণগঞ্জের স্টেডিয়ামটির কোনো সংস্কার হচ্ছে না।
স্থানীয় ক্রিকেটার নাহিয়ান বলেন, ফতুল্লা খান সাহেব ওসামান আলী স্টেডিয়ামের পূর্বপাশের আউটার স্টেডিয়ামে ২০১২, ১৩ ও ১৪ সালে একাধারে প্র্যাকটিস করেছি। সে সময় আমার মতো অসংখ্য ছেলে সেখানে প্র্যাকটিস করেছে। কিন্তু মাঠটি রাস্তা থেকে নিচু হওয়ায় এবং সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে মাঠটি দীর্ঘদিন ধরেই পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
তিনি আরও বলেন, একটি মাঠের অভাবে আমাদের খেলাধুলা ও প্র্যাকটিস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ঝরে পড়ছে উঠতি বয়সের খেলোয়াড়রা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে আগামী সাত দিনের মধ্যে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু করে দিতে পারে। একজন খেলোয়াড় বা সংগঠক হিসেবে স্টেডিয়ামের দ্রুত সংস্কার শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, এই মাঠে যদি একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় তবে বাংলাদেশের সব মানুষ কিন্তু নিজের দেশে খেলা হচ্ছে বলেই খেলা দেখবে। এজন্য বলছি এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর নয়, দেশের সম্পদ।
তবে স্টেডিয়াম সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। সেখানে জলাবদ্ধতার পানি আটকে থাকে। স্টেডিয়ামের প্রকৃত মালিক হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। পরিষদ ক্রিকেট বোর্ডকে মাঠটি ব্যবহারের জন্য দিয়েছিল। স্টেডিয়ামের সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যৌথভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মাধ্যমে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে। শুনেছি খুব দ্রুতই সংস্কার কাজ শুরু হবে। এটি ভেঙে নতুন করে উঁচু করে স্টেডিয়ামের আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এবং সিনিয়র মাঠ ব্যবস্থাপক সৈয়দ আব্দুল বাতেন বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও সিবিসি যৌথভাবে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে বুয়েট ড্রয়িং ডিজাইনের কাজ শেষ করেছে। এখন বিল অব কনট্রাক্টের কাজ চলছে। বুয়েটের সমীক্ষা শেষে আগামী ২০ বা ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কত টাকা ব্যয় হবে সেই প্রস্তাবনা দেয়া হবে। পরে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।