উলিপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভাসমান বেডে সবজি চাষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৬ পিএম, ৩১ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩০ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ডোবা ও জলাশয়গুলো পরিত্যক্ত থাকে। এসব জায়গা কোন কাজে আসে না কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী এসব স্থানে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে তাক লাগিয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের কৃষকরা।
ভাসমান বেডের উপর লাল শাক, পুই শাক, কলমি শাক, করলা, বরবটি, ঢেঁড়স ও লাউ চাষ করেছেন তারা। দেখলে মনে হবে শাক-সবজির ভেলা ভাসছে। যে কোন কারোরেই মন জুড়িয়ে যাবে। সম্পূর্ণ অর্গানিক ভাসমান পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষাবাদ করে লাভবানও হচ্ছেন অনেকে। তাদের এ পদ্ধতি দেখে এলাকার অনেক কৃষক ভাসমান সবজি চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
জানা গেছে, উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে হিজলী গোফপাড়া এলাকায় একসময়ের প্রমত্তা দুধকুমুর নদী মরা খালে পরিণত হয়। নদী তার যৌবন হারিয়ে ডোবা খালে রুপ নেয়। বছরের বেশিরভাগ সময় সেখানে জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। ফলে কোন কাজই আসত না নদীটি। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী অর্গানিক পদ্ধতিতে এসব জায়গায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় কয়েকজন কৃষক। অল্প সময়ের মধ্যে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা।
এছাড়াও উপজেলার দড়িকিশোরপুর, থেতরাই, গোড়াইপিয়ার, ধরণীবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাসমান সবজি চাষ করা হচ্ছে। চিরাচরিত নিয়ম থেকে বেড়িয়ে এসে আধুনিক পদ্ধতিতে ভাসমান সবজি উৎপাদনে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে স্বল্প জায়গায় কম খরচে চাষাবাদ করে অধিক ফলন উৎপাদন করে বেশি লাভ হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহও বেড়েছে।
এ বিষয়ে কৃষক আজম আলী, রফিকুল ইসলাম, আয়নাল হক, নূর আমিন, শাহেনা বেগম, মাহমুদা বেগমসহ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুধকুমুর নদীতে সারা বছরই পানি জমে থাকে। এসব জলামগ্ন জমিতে কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ দিয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞানসম্মত নিয়মে প্রয়োজনীয় মাপের ভেলার মত বেড তৈরি করেন। পরে ভাসমান পদ্ধতিতে বছর ব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি অনায়াসে উৎপাদন করা হয়।
বন্যা ও জলাবদ্ধ এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কৌশল হিসেবে ভাসমান বেডে এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ভাসমান বেডে সবজি চাষ। তারা আরো বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত কয়েক বছর ধরে ভাসমান বেডে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। প্রয়োজন মত নিজের বাগানের টাটকা সবজিতে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশপাশি, উৎপাতিত সবজি বিক্রি করে লাভবানও হচ্ছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৬টি প্রদর্শনী ছাড়াও কৃষক উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করা হচ্ছে। জলাশয়ে কচুরিপানা ও আগাছা ব্যবহার করে তৈরিকৃত বেডে সম্পূর্ণ জৈবিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভাসমান বেডে সবজি চাষে দিন দিন কৃষকরা আগ্রহি হয়ে উঠছে। এতে কৃষকরা সবজির উচ্চমূল্য পাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আগামীতে এ উপজেলায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।