ভাঙ্গনের কবলে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী পিসি রায় এর জন্মভিটা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৯ পিএম, ১৫ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২৩ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই রাক্ষুসে রুপ নেয় কপোতক্ষ নদ। তীব্র ভাঙ্গন ভয়াল রুপ ধারন করেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদটি। খুলনার দক্ষিণাঞ্চলে পাইকগাছার রাড়ুল তে জগদ্বিখ্যাত আচার্য বিজ্ঞানী স্যার পিসিরায় এর জন্মভিটা।
রাক্ষুসে কপোতাক্ষের করাল গ্রাসে বিখ্যাত বিজ্ঞানীর জন্মস্থান রাড়ুলী হুমকির মূখে। অত্র এলাকায় কোন টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে বিলিন হচ্ছে এলকাটি। নদী ভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিকল্পিত নদী শাসনের দাবি করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুধীমহল।
কপোতাক্ষ নদের খরস্রোতে গিলছে ঘরবাড়ী, গাছপালা, রাস্তা-ঘাট ও ফসলের জমি। ভাঙ্গণের প্রবনতা এতটাই কপোতাক্ষের পাড়ে জেলে পল্লী এলাকার মানুষগুলো দিনরাত চরম আতঙ্কের মধ্যে নির্ঘুম রাত পার করছে। নদীতে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি আর ভাটায় পানি কমতে থাকে। সাথে সাথে পল্লীর বসবাসরত মানুষের দুলাচালে শংকা তত বাড়তে থাকে। এটা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কারোর বসত ঘরের ধ্বসে গেছে, কারোর গাছ-গাছালী, কারোর আধা-পাকা ঘরের অংশ ঝুলছে। কারোর খড়ের গাদা, রান্না ঘর সহ ভেসে গেছে ফসলের ক্ষেত। অবিলম্বে ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে রাস্তাসহ বাকী পরিবার গুলোর ঘরবাড়ী এবং ফসলী জমি নদেগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিনে কপোতাক্ষ ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গিয়ে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাইকগাছা উপজেলার ৮নং রাড়ুলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড রাড়ুলী গ্রামে জেলে পল্লী অবস্থিত। মালোপাড়ার পাশ দিয়ে কপোতাক্ষ নদ বহমান। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর যাবৎ মালোপাড়ায় এলাকা কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। ইতিপূর্বে ভাঙ্গনে প্রায় ৮০টি ঘর নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় ঘর-বাড়ি জমি হারিয়ে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করছে।
ছোট্ট একটি টং ঘরে বাস করে সত্তরোর্ধ্ব মিনতী বিশ্বাসের সাথে, বাবা আমাগি তিরান দিতিবে না, বানে সব নি গেছে আমাগি বাঁচাও আমার চারডি ঘর ছিলো, গরু, ছাগল ছিলো সব বানে নি গেছে। রাড়ুলী মালো পাড়ার বাসিন্দা জয়দেব বলেন আমাগি মন্দিরডাও ভাঙ্গনে চলি গেছে। বাচ্চাদের পড়াশুনা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।
আব্দুর রশু গাজী, বিকাশ জানান, প্রায় ২০ বছরের অধিককাল ধরে মালোপাড়া এলাকায় কপোতক্ষের ভাঙ্গন অব্যহত আছে। দীর্ঘদিন যাবৎ দাবী জানানোর পরেও ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মালোপাড়ার সূর্যকান্ত, সুভাষ, মনিন্দ্র, মনিন্দ্র প্রশান্ত, কালি, গৌতম বিশ্বাসরা জানান, প্রতিবার জনপ্রতিনিধিরা ভাঙ্গন পরিদর্শন করে যায় কিন্তু ভাঙ্গন রোধে কোন কাজ করা হয় না। তিনি ৩ বার বাড়ী বদল করেছন। এবার ভাঙ্গলে আর কুল থাকবে না। এ ব্যাপারে রাড়ুলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ জাহান আলী জানান, বিগত বছরে এমপি সাহেবের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগের বরাদ্দ নেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার সামান্য কিছু কাজ করে বাকী কাজ না করে চলে যাওয়ায় মালোপাড়ার ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হয়নি।
রাড়ুলী পিসিরায় স্মৃতি সংসদের সভাপতি ডাঃ কওসার আলী জানান, কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গণে ঘরবাড়ি হারিয়ে বসবাসরত মানুষগুলো বিভিন্ন জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। জোয়ারের পানি, অতি বর্ষায় এলাকা প্রাস্তাবিত হচ্ছে। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও মহোদয় বিভিন্ন সময়ে ভাংগন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উনারা সাহায্য করেছেন, ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ সহ বালির বস্তা, পাইলিং দিয়ে মেরামত করেছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এমন অবস্থা যে এগুলো আর ধোপে টিকছে না। ব্যাপক স্রোত, বর্ষাকালে এরপর রাস্তা ভেঙ্গে গেলে ৫/৬ শত ঘরবাড়ি বিলিন হবে। মানচিত্র থেকে মুছে যাবে রাড়ুলী গ্রাম।
এজন্য অতিদ্রুত কার্যকরী স্থায়ী পদক্ষেপ নিয়ে ভাংগন রোধ করতে হবে। স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার জানান, মালোপাড়ার কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন রোধে বার বার উর্দ্ধোতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি। কিন্তু ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কোন পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। যা করেছে ভাঙ্গনের গভীরতায় সম্ভব হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাইকগাছার সাব-এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাজু হাওলাদার জানান, রাড়ুলীর কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে চলতি বছরের চাহিদা পাঠিয়েছি। এখন বরাদ্দ হয়নি, বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকি বলেন, রাড়ুলীর মালোপাড়ার কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গনের ব্যপকতা তীব্র রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও-কে জানিয়েছি। কপোতাক্ষ নদের রাড়ুলী জেলে পল্লীর ভাঙ্গন এলাকার বাসিন্দারা ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচার জন্য টেঁকসই ভেঁড়িবাঁধ, ভাঙন কবলিতদের পুনবার্সন, টেষ্টরিলিফ সহ কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে এমপি সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।