প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে শত শত কোটি টাকা অপচয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:৫১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দুই বছর আগে ঢাকার সাভারে গবাদিপশুর খাবার তৈরির সরকারি কারখানাটি ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে কারখানাটি কবে চালু হবে, কোনো দিন চালু হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
এই কারখানার জন্য আধুনিক ভবন করা হয়েছে, জার্মান প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে, কিন্তু কারখানা চালানোর জন্য কোনো শ্রমিক, কারিগরি কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রকল্পেও কর্মী নিয়োগের কোনো প্রস্তাব ছিল না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, কারখানাটি পড়ে আছে।
জনগণের অর্থের অপব্যয়ের এখানেই শেষ নয়। গবাদিপশুর ভ্রূণ স্থানান্তরের নামে ২১ বছরে তিন দফা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো হয়েছে, যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, কিন্তু ভ্রূণ আর স্থানান্তর হয়নি। তৃতীয় পর্যায়ের শেষ দিকে ভ্রূণ স্থানান্তরের বিষয়টিই প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়।
তিন দফার প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৫৮৩ কোটি টাকা। ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের জুন সময়ে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ব্যয় করা হয়েছে ৪৩৩ কোটি টাকা। তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কোনো সুফল এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো টাকা জনগণকে কর হিসেবে দিতে হয়েছে। উল্টো গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ, যা এখন ৭০০-৭৮০ টাকা। দুধের লিটার ছাড়িয়েছে ৯০ টাকা।
৭টি পরীক্ষাগারে ব্যয় হয় ৪১ কোটি টাকা। কথা ছিল, এসব পরীক্ষাগারে উন্নত জাতের গবাদিপশুর বীজ উৎপাদন করে খামারিদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ ও উন্নত জাতের বীজ উৎপাদনের জন্য এআইইটি প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের অধীনে দুটি পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার তৈরি করা হয়েছে চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরে। ‘মিনি’ পরীক্ষাগার তৈরি হয়েছে রংপুর, বগুড়া, সিলেট, খুলনা ও বরিশালে।
ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নাবিল ফারাবি জানিয়েছেন, আউটসোর্সিংয়ের (অস্থায়ী) মাধ্যমে ১১ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও ভেটেরিনারি সার্জনের মতো পদে নিয়োগ বাকি।
এআইইটি প্রকল্পের প্রথম পর্যায় শুরু হয়েছিল ২০০২-০৩ অর্থবছরে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় পর্যায় ও ২০১৬ সালে তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প নেয়া হয়। তিন পর্যায়ের ৫৮৩ কোটি টাকার পুরোটাই ব্যয় হয়েছে কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ ও ভ্রূণ স্থানান্তর সুবিধা তৈরির জন্য। দ্বিতীয় পর্যায়ে সাভারে একটি ভ্রূণ স্থানান্তর পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়। সেটিও পড়ে আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকারের আমলে অবারিত দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অপপ্রয়োগের মাধ্যমে দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে একটি ‘চোরতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।