ঠাঁই নেই কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৫ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫১ পিএম, ১০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী/ আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতার এ চরণের মতোই বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে ঠাঁই নেই। বন্দিতে ভরে গেছে দেশের ৬৮ কারাগার। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৬২৬ জন। অথচ বর্তমানে বন্দি রয়েছেন ৮৪ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যেই গত ১ ডিসেম্বর থেকে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান চলছে। ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ইতিমধ্যে পুলিশ বলেছে, গত এক মাসে ২৪ হাজার গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার বর্তমানেও অব্যাহত আছে। অথচ বর্তমান করোনা মহামারিসহ নানা রকম রোগ ছড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় কারাগারে এক দুর্বিষহ অমানবিক জীবন ভরে উঠছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ এমরান হোসেন মিঞা বলেন, কারাগারে ধারণক্ষমতা ২ হাজার ২৪৯ জন হলেও এখন প্রায় ৫ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছেন। জানতে চাইলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হওয়াটা বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশে দীর্ঘদিনের কালচার হচ্ছে বিরোধী দল রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে গায়েবি মামলা দিয়ে গণহারে গ্রেফতার করা। এসব মামলায় যাদের সাক্ষী করা হচ্ছে তারা বলছেন কিছুই জানেন না।
দেশের কারাগারগুলো বর্তমানে বন্দিতে ঠাঁসা; প্রতিটি কারাগারে দ্বিগুণের বেশি বন্দি রাখা হয়েছে। ঢাকা কারাগার থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের ছোট্ট কারাগারে একই চিত্র। প্রতিটি কারাগারে ঠাঁই নেই অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপির সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ফলে বন্দিতে ঠাঁসা কারাগারগুলোতে প্রতিদিন বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। দ্বিগুণ বন্দি সামাল দিতে বেসামাল হয়ে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারে ও ৫৫টি জেলা কারাগারের বেশিরভাগেই ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি অবস্থান করছে। বছরের বেশিরভাগ সময়ে দ্বিগুণসংখ্যক বন্দি অবস্থান করলেও সম্প্রতি সময়ে পুলিশের বিশেষ অভিযানের কারণে বন্দির সংখ্যা বাড়ছে।
কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ৬৮টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৬২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ৪০ হাজার ৬৯৭ জন এবং মহিলা বন্দি ১ হাজার ৯২৯ জন। তবে বর্তমানে মোট ৮৪ হাজার ১১৫ জন বন্দি রয়েছে বিভিন্ন কারাগারে। এর মধ্যে বিদেশি বন্দি রয়েছে ৪৭২ জন, শিশু রয়েছে ৩৪১ জন, যুদ্ধাপরাধী ১২৫ জন এবং জেএমবি ৫৭৪ জন।
কারাগারের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিরোধীদলীয় (বিএনপি) নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে। গত ২৯ নভেম্বর পুলিশের কেন্দ্রীয় সদর দফতর ১৫ দিনব্যাপী সারাদেশে গ্রেফতার অভিযানের নির্দেশনা দেয়। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর অভিযান শুরু হয়। গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়। এ কারণে বন্দির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
অন্যদিকে এ পরিস্থিতিতে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন দেশের কারাগারগুলোতে এমনিতেই বন্দির বাড়তি চাপ রয়েছে। তাছাড়া কারাবন্দিদের সুযোগ-সুবিধাও খুব কম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমানবিকও। কিন্তু তারপরও কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ফলে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দিদের জীবনযাপন নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। মানবাধিকারকর্মীরা ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক বন্দিকে রাখা মানবাধিকার লংঘনের নামান্তর মনে করছেন।
কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এখন প্রতিদিন যে গ্রেফতার চলছে তা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ধরনের গ্রেফতার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। কারাগারগুলোতে বন্দি বেড়ে যাওয়ায় কারা কর্মকর্তাদের মধ্যে মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত কাজ করার চাপ বেড়ে গেছে। বিষয়টি কারো জন্যই মঙ্গল নয়।