বনজ কুমারের মামলায় বাবুল আক্তার একদিনের রিমান্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৫ পিএম, ১০ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৮ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে পুলিশের করা সাতদিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। এসময় উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম। মামলার সুষ্ঠু তদন্তসহ তিনটি কারণে দেখিয়ে গতকাল বুধবার বাবুল আক্তারের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রবিউল ইসলাম। এরপর আদালত আসামির উপস্থিতিতে এ বিষয়ে শুনানির জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
>> বাবুল আক্তার কারাগারে থাকাকালে কীভাবে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপাত্ত বিদেশে থাকা আসামি ইলিয়াসের কাছে সরবরাহ করেছে এবং কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন তা জানার জন্য।
>> বাবুল আক্তার কার প্ররোচনায় মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারকার্য ব্যাহত করার জন্য ভিডিও প্রকাশে সহযোগিতা করেছে, উক্ত প্ররোচনাকারী ব্যক্তির নাম, ঠিকানা সংগ্রহসহ গ্রেফতারের জন্য।
>> বাবুল আক্তার কারাগারে থাকাকালে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে বাদীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মানহানিকর ভয়েস রেকর্ড প্রস্তুত করেছে কি না, ভিডিওতে থাকা ভয়েস রেকর্ডে বাবুল আকতার বাদী বনজ কুমারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন মর্মে শোনা যায়, সেই ভয়েস রেকর্ডে থাকা কণ্ঠস্বর বাবুল আকতারের কি না বা ভয়েস রেকর্ডের অন্য প্রান্তে কে ছিল তা জানা প্রয়োজন। মামলাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অত্র মামলার এজাহারনামীয় আসামি মো. বাবুল আক্তারকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাতদিনের পুলিশ রিমান্ডে প্রদানের আদেশ দানে মর্জি হয়।
এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ও পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন- বাবুল আক্তারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবু (৪৫) ও বাবা মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া (৭২)। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।
বনজ কুমার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রা দেশের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকাকালে প্রধান আসামি হিসেবে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নাম বেরিয়ে এলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জেলে থাকা বাবুল আক্তার মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ও পিবিআইয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য অপর আসামিরা দেশে ও বিদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক বিভিন্ন অপকৌশল এবং ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাবুল আক্তার ও অন্যান্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ৩ সেপ্টেম্বর বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় তার ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব অ্যাকাউন্টে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে উল্লেখিত ভিডিও প্রচার করা হয়। আসামি ইলিয়াস হোসাইন ভিডিওতে প্রচারিত বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি, বাংলাদেশ পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও বিশেষ করে বাদীর (বনজ কুমার মজুমদার) মান-সম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে। যা দেশের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে।
এজাহারে ওই ভিডিওতে প্রচারিত বিভিন্ন অভিযোগ খন্ডন করে বলা হয়, আসামি ইলিয়াসের বক্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার, রাষ্ট্রের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস করেছে। শুধু মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ও বিচারকাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মামলার ২ নম্বর আসামি মো. হাবিবুর রহমান লাবু, ৩ নম্বর আসামি আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ও ৪ নম্বর আসামি বাবুল আক্তারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় এবং সার্বিক সহযোগিতায় ১ নম্বর আসামি ইলিয়াস হোসাইন অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশ পুলিশ ও বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই এবং বাদীর মান-সম্মান চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য সহকারে ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন।