ঢাকা মেডিকেল : ভরসা বেশি, দুর্ভোগও বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৫ পিএম, ৩ অক্টোবর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৯ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। সারা দেশ থেকে এখানে রোগী আসে চিকিৎসা নিতে। ভালো চিকিৎসার জন্য সুনাম থাকায় হাসপাতালটির বারান্দা, মেঝে ও সিঁড়িতে রাত কাটিয়ে হলেও সেবা নিতে চান রোগীরা। ফলে রোগীর চাপ সামলাতে সবসময় হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা প্রত্যাশা করেন দেশসেরা এই হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবেন। তবে দালালদের উৎপাত আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। বিশেষ করে শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও তাদের স্বজনদের। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে অনেক শারীরিক পরীক্ষাই বাইরে থেকে করে আনতে হয়। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। থাকলেও নানা অজুহাতে করতে চায় না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ঢামেক হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার বহু সরঞ্জাম প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে থাকে। এগুলো সারিয়ে কার্যকর করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এছাড়া অন্তত ২০ শতাংশ রোগের পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। এই সুযোগে হাসপাতালের ভেতরে গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক-কর্মীদের শক্তিশালী চক্র। হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীর যোগসাজশে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট, যারা নানা অজুহাতে পকেট কাটছেন রোগীদের। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার পূর্ব আটপাড়া থেকে বিরল একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন মো. কামাল হোসেন। তাকে প্রায় দুই বছর ধরে হাসপাতালে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। ঢামেকেই তার অপারেশন হয়েছে ৫ বার।
কামাল হোসেন বলেন, প্রেসক্রিপশন নিয়ে চিকিৎসকের রুম থেকে বেরিয়ে আসার পরপর আমাকে কয়েকজন দালাল পরীক্ষাগুলো বাইরে করানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু আমি বলি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত হাসপাতালে আসা-যাওয়া করছি, প্রতিনিয়ত আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হয়, যে কারণে বাইরে গিয়ে বেশি টাকা খরচ করে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। এরপর আসে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ কিছু দালাল, তারা বলে, আপনাকে এখানকার (ঢামেক) ফিতেই পরীক্ষা করিয়ে দেব। রিপোর্টও পেয়ে যাবেন অন্যদের চেয়ে আগে। তবে টাকার রসিদ পাবেন না।
কামাল হোসেন বলেন, আমি এর আগে এখানে তিনবার ওটি (অপারেশন) করেছি। ভেতরের বিষয়গুলো ভালো করে বুঝতে পারি। প্রতিবারই আমাকে দালালের মাধ্যমে এরকম অফার দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাকে মোট ৫টা পরীক্ষা দিয়েছেন চিকিৎসক, যেগুলোর ফি আসে এক হাজার ৩০ টাকা। দালালরা আমার কাছে চেয়েছে এক হাজার ৭০ টাকা। আমি তাদের কথা শুনিনি। তবে অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রসিদ ছাড়া এক রোগীর কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর ক্যাশ কাউন্টারের এক কর্মচারী (মুরাদ) প্যাথলজি বিভাগের পরীক্ষার রুমে ঢুকতে চান। কিন্তু বিভাগীয় প্রধানের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে ঢুকতে বাধা দেন গফুর মিয়া নামে সেখানকার আরেক কর্মচারী। এক পর্যায়ে জোর করে ঢুকতে চাইলে প্রথমে কথা কাটাকাটি, পরে ধাক্কাধাক্কিতে জড়ান তারা।
এ বিষয়ে হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বলেন, ঝগড়াটা মূলত লেগেছে নিজেদের মধ্যেই। প্যাথলজি বিভাগের প্রধান (ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আজিজ আহমেদ খান) নিষেধ করে দিয়েছেন রোগী ছাড়া ভেতরে আর কাউকে ঢুকতে দেবেন না। এরপরও ক্যাশ কাউন্টারের এক স্টাফ (মুরাদ) জোর করে পরীক্ষা রুমের ভেতরে ঢুকতে চাইলে সেখানে কর্তব্যরত একজন (গফুর) তাকে বাধা দেন। এরপর দুজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। কে কাকে আটকাবে? দুজনেই তো হাসপাতালের স্টাফ।
ঝগড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গফুর মিয়া বলেন, আমাদের প্রধান (প্যাথলজি বিভাগের প্রধান) খুবই সৎ মানুষ। তিনি চান না এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হোক। কিন্তু কয়জনকে আপনি আটকে রাখবেন? স্যার যতক্ষণ থাকেন, কিছুটা ঠিকঠাক থাকে। স্যার বের হয়ে গেলেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়। আজকেও স্যার বের হওয়ার সময় আমাকে বলে দিয়েছেন যেন রোগী ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে না দিই, আমি স্যারের কথামতো বাধা দিতেই আমার সঙ্গে লেগে গেছে। চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থেকে কিডনি সমস্যা নিয়ে গত শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটায় এসে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন জাকির হোসেন। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষা করাতে এলে তার কাছ থেকেও পরীক্ষা বাবদ এক হাজার টাকা নিয়ে নেয়া হয়েছে, যার কোনো রসিদ দেয়া হয়নি। তাদেরকেও বলা হয়েছে, এক ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জাকির হোসেন বলেন, কাউন্টারে টাকা চাওয়ার পর সেখানেই এক হাজার টাকা জমা দিয়েছি। তারা বলেছে এক ঘণ্টার মধ্যে জরুরিভাবে পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে দেবে। তিনি আরও বলেন, যারা ব্যাংকে টাকা জমা দেয়, তাদের রিপোর্ট আসতে দেরি হয়। যারা ভেতরে টাকা দিয়ে দেয়, তারা দ্রুত রিপোর্ট পেয়ে যায়। আমার তো রিপোর্টটা দ্রুত প্রয়োজন, তাই এখানে দিয়েছি।
শনিবার দুপুর ২.৪৫ মিনিট। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার তমরুদ্দিন এলাকার বাসিন্দা ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. জাফর উদ্দিন এসেছেন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে। পরীক্ষার রুমে ঢুকতে না দিয়ে ঝগড়ায় জড়ানো সেই গফুর এবার এগিয়ে এলেন এই রোগীর দিকে। রোগীর কাছ থেকে পরীক্ষার কাগজ নিয়ে বললেন, এখন চলে যান, ঠিক এক ঘণ্টা পর এখান থেকে এসে রিপোর্ট নিয়ে যাবেন।
রোগী জাফর উদ্দিন বলেন, সে বলেছে দুইটা পরীক্ষার মূল্য ২১০ টাকা, আমি যেন তাকে ৩০০ টাকা দিই। সে নিজেই পরীক্ষা শেষ করে এক ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট দিয়ে দেবে। টাকা নেয়ার রসিদ দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই লোক বলেছে আমাকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে হবে না। সে নিজেই গিয়ে জমা দিয়ে দেবে।
এ প্রসঙ্গে গফুর মিয়া বলেন, রোগীই টাকা জমা দিয়েছে। আমার কাছে সহযোগিতা চেয়েছে যেন রিপোর্টটা আগে এনে দিই। বিনিময়ে তার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন জানতে চাইলে গেটে তালা দিয়ে তিনি ভেতরে ঢুকে যান। ভগ্নিপতিকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন নূর আলম। গুরুতর অসুস্থ রোগী নিয়ে এসে ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনেই পড়েন দালালদের খপ্পরে। রোগীকে ট্রলিতে তোলার পর দাবি করা হয় ৫০০ টাকা। এ বিষয়ে নূর আলম বলেন, রোগীকে ট্রলিতে তোলার পর আমার কাছে ৫০০ টাকা দাবি করা হয়। আমি তো জানি না প্রথমে কোন জায়গায় নিতে হবে রোগীকে, ট্রলিতে বসিয়ে ইমারজেন্সি থেকে টিকিট নিয়েছি। এরপর সে বলে, ‘৫০০ টাকা না দিলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব না, রোগীও দেখাব না।’ এরপর তাকে অনেক রিকোয়েস্ট করে ৪০০ টাকা দিয়েছি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে ডাক্তার বা নার্সের কোনোরকম হেনস্তার শিকার হয়েছেন কি না জানতে চাইলে নূর আলম বলেন, ডাক্তার-নার্সরা যথেষ্ট সেবা দিয়েছেন। কিন্তু যত অনিয়ম ছোটখাটো কর্মচারীরা করে। তাদের কাছেই রোগীরা জিম্মি। নরসিংদী থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন মো. রমজান আলী। হাসপাতালে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করানোর কথা বলেন। এসময় তিনি ঢামেকে পরীক্ষা করাতে চাইলে চিকিৎসক বলেন দ্রুত রিপোর্ট এনে দিতে হবে। এরপর তিনি চিকিৎসকের সহকারীর পরামর্শে পরীক্ষার জন্য চলে যান পাশের অথেনটিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এ প্রসঙ্গে রমজান আলী বলেন, বেলা ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে এই পরীক্ষার জন্য গেলে বলা হয়, রিপোর্ট নিতে হবে অন্তত রাত দশটার পর। যে কারণে আমি এই বেসরকারি হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা করাই। এখানে তারা আমাকে রিপোর্ট দিয়েছে মাত্র দুই ঘণ্টায়।
তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে যদি ঠিকমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর চিকিৎসা পাওয়া যেত, তাহলে আমাদের মতো গরিব মানুষকে কখনোই বেসরকারি হাসপাতালে আসতে হতো না। আমি সরকারি হাসপাতালে যে পরীক্ষাটা দেড়শ টাকায় করাতে পারি, সেটি বেসরকারিতে আমাকে পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা দিয়ে করাতে হচ্ছে। আমার তো ইমার্জেন্সি রোগী।
তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে কেন ইমার্জেন্সি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে না? পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে আসতেই যদি আমার রোগীর কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় নেবে কে? হাসপাতালটির পরীক্ষা কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢামেকের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে দুটি শিফটে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলে, এরপর আবার রাত দশটা থেকে সারা রাত পরীক্ষা চলে। দুপুর ২টার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হয় না। সকালের শিফটে পরীক্ষা হলে অধিকাংশ রিপোর্টই রাত দশটার পর পাওয়া যায়, আর দশটার পরের রিপোর্ট পরদিন নিতে হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের আরেক বিড়ম্বনার নাম অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালটির যেকোনো গেট দিয়ে ঢুকতে গেলেই পড়তে হয় এই বিড়ম্বনায়, বিশেষ করে ইমার্জেন্সি গেট। হাসপাতালের কর্মচারীদের যোগসাজশে এখানে গড়ে উঠেছে আরেক ব্যবসা। চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাসপাতাল প্রশাসনও সেখানে অসহায়।
দেখা গেছে, হাসপাতালটির নতুন ভবনের সামনে ২০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমনকি রোগীদের বের হওয়ার মূল পথ দখল করে তারা দরজা খুলে বসে আছে। হাসপাতালটিতে ঢুকতে ও বের হতে রোগীদের খুঁজতে হয় দুই গাড়ির মাঝের সরু কোনো পথ। এসব অ্যাম্বুলেন্সের কারণে রোগীবাহী ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করতে পারে না। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, হাসপাতালকর্মীদের নির্দিষ্ট মাসোহারা দিয়ে তাদেরকে গেটের ভেতর অবস্থান করতে হয়। রোগীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে। মাঝেমধ্যে রোগী ওঠাতে নামাতেই কেবল গেটের সামনে দাঁড়াতে হয়।
রোগীদের নানা অভাব-অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, মেডিকেল সায়েন্সে তো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আমাদের এখানে রেডিওলজি ডিপার্টমেন্ট আছে, মাইক্রোবায়োলজি, ভাইরোলজি ডিপার্টমেন্ট আছে। আমাদের বাইরে ক্যাম্পাসের ভেতরে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগ আছে। আমার ধারণা পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেগুলো বলছেন, বেসিক যে পরীক্ষাগুলো রয়েছে সেগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ কাভার করি। আর আপনি তো জানেন আমাদের এখানে সারা বাংলাদেশ থেকে জটিল রোগীরা আসেন। তারা কিছু কিছু পরীক্ষা বাইরে থেকে করিয়েই আমাদের এখানে আসেন। তিনি বলেন, এর বাইরেও কিছু কিছু টেস্টের ক্যাপাবিলিটি বা সক্ষমতা এখনো ওরকম নেই। কিন্তু এসব পরীক্ষার যে খুব বেশি জায়গায় সক্ষমতা আছে সে রকম কিন্তু নয়। যেমন কিছু কিছু পরীক্ষা শুধু বারডেমেই হয়, আবার কিছু পরীক্ষা শুধু বিএসএমএমইউতে হয়। আবার এমন কিছু টেস্ট আছে যেগুলো দেশে নেই, অন্যান্য দেশে গিয়ে করাতে হয়। সাধারণত এই পরীক্ষাগুলোই আমাদের ডাক্তাররা লিখে থাকেন ‘বাইরে গিয়ে করাতে হবে’। দেশের সর্ববৃহৎ সরকারি হাসপাতাল হিসেবে সব রোগের পরীক্ষায় সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, শতভাগ সক্ষমতা অর্জন আসলে কখনোই সম্ভব হয় না।
বিএসএমএমইউ, আইসিডিডিআরবিসহ আমার জানামতে কোনো হাসপাতালেরই শতভাগ সক্ষমতা নেই। তারাও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায়। শুধু দেশেই নয়, পৃথিবীর কোনো হাসপাতাল বা ল্যাবরেটরিরই শতভাগ সক্ষমতা হয় না। রসিদ ছাড়া রোগীদের কাছ থেকে পরীক্ষার টাকা গ্রহণ প্রসঙ্গে
হাসপাতালটির পরিচালক বলেন, আমরা বলব না আমাদের হাসপাতালে এরকমটা হয় না। বিভিন্ন সময়েই আমরা এরকম নানা ধরনের অভিযোগ পেয়ে থাকি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থাও আমরা নিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আমি অনুরোধ করব ঢালাওভাবে অভিযোগ না করে আপনারা সবাই আমাদের একটু সহযোগিতা করুন। আমরা স্পেসিফিক অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।
তিনি আরও বলেন, এটা একটা বিশাল হাসপাতাল। এখানে প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষের আগমন ঘটে। পুরো হাসপাতালটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আছে। কে, কখন, কার সঙ্গে প্রতারণা করে সেটা যদি আমাদেরকে স্পেসিফিকভাবে জানানো হয় আমরা তাকে আইডেন্টিফাই করতে পারি এবং তাকে আইনের আওতায় আনতে পারি।
দালাল চক্র প্রসঙ্গে নাজমুল হক বলেন, অনেক বেসিক পরীক্ষারই ক্ষমতা আমাদের আছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা সেগুলো করাতে বাইরে চলে যান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের স্টাফদের মাধ্যমে অথবা বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালের দালালের মাধ্যমে রোগীরা টেস্টগুলো অন্যান্য জায়গায় করে ফেলেন। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতা। আমরা এটা নিয়ে কাজ করব।