হোশি কুনিও হত্যায় ইছাহাকের খালাসের আদেশ স্থগিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৪ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৪ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা মামলায় আসামি ইছাহাক আলীকে (২৫) হাইকোর্টের দেয়া খালাসের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) অন্যতম সদস্য। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ রবিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন। তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারি গ্রামে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত মানের ঘাসের চাষ করতেন। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কাচু আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সী কুনিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর মাত্র পাঁচ দিন আগেই একই কায়দায় ঢাকার গুলশানে ইতালীয় নাগরিক সিজার তাবেলাকে হত্যা করা হয়েছিল। পরপর এই দুই হত্যাকান্ডের ঘটনা সেইসময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোড়ন তোলে। পরে উভয় ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক) দায় স্বীকার করেছিল। যদিও বাংলাদেশ সরকার তা নাকচ করে দেয়। পরে অবশ্য পুলিশ কুনিও হত্যার জন্য নব্য জেএমবিকে দায়ী করে। আর সিজার তাবেলা হত্যায় বিএনপির একজন নেতাসহ কয়েকজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
এদিকে, ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর হোশি কুনিওকে হত্যার দিনই কাউনিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই হত্যাকান্ডের বিচার শেষে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেএমবির পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ডাদেশের রায় দেন রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার। মামলার রায়ে পাঁচ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিন্ডিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি ওই পাঁচ জনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো– জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন (২১), সদস্য ইছাহাক আলী (২৫), লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), সাখাওয়াত হোসেন (৩২) ও আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব (২৪)। তাদের মধ্যে আহসান উল্লাহ পলাতক। সে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাকি তিন আসামি মাসুদ রানা, ইছাহাক ও লিটন কারাগারে আছে। তিন জনই আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিল। হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পায় পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদ (২৮)। চার্জশিটভুক্ত আট আসামির মধ্যে অন্য দুজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাদের মামলার অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে রায় ঘোষিত হয়। তাদের মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের গজপুরি এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান (২৮) ২০১৬ সালে অভিযোগ গঠনের আগে ১ আগস্ট রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের রাজারহাটের চর বিদ্যানন্দ এলাকার সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ওরফে চঞ্চল ওরফে সবুজ ওরফে রবি (২১) অভিযোগ গঠনের পরে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পরে আসামিদের মৃত্যুদন্ডাদেশের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল ও জেল আপিল দায়ের করে। সেসব আবেদনের শুনানি শেষে হোশি কুনিওকে হত্যার দায়ে জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মামুন (২১), লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), সাখাওয়াত হোসেন (৩২) ও আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লবের (২৪) মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে একইসঙ্গে জেএমবি সদস্য ইছাহাক আলীকে (২৫) খালাস দেন আদালত।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ। তাকে সহযোগিতা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাকির হোসেন মাসুদ ও নির্মল কুমার দাস। অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ। পরে গত ২২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় জেএমবির অন্যতম সদস্য ইছাহাক আলীকে (২৫) হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।