রাজনৈতিক সমঝোতা হলে সব আসনে ব্যালটে ভোট হবে : সিইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪৯ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:২৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা হলে সব আসনে ব্যালটে ভোট হবে। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। তখন আমরা ব্যালট ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। এটার কারণে যদি সব দল নির্বাচনে আসে তাহলে সেটা তো ভাল উদ্যোগ।
আজ বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে সিইসি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে কোনো সংকট দেখছি না। রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সংকট দেখছি তা ইভিএম নিয়ে নয়, আরো মোটাদাগে সংকট। আমরা আশা করি এই সংকট কেটে যাবে। তার যদি ফয়সালা হয় সব ভোট ব্যালটে হবে। আমাদের জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হলো নির্বাচনটা হলো কি-না। ইভিএম নয়। নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বিঘ্ন হলো কিনা, সেটা ইভিএমে হলো নাকি ব্যালটে হলো, সেটা (নির্বাচন) হওয়াটাই বড় কথা। কাজেই বড় ধরনের সংকট ওখানে নয়। ওই সংকটটা যদি নিরসন হয় নির্বাচনটা সুন্দরভাবে ওঠে আসতে পারে।
সিইসি বলেন, গতকাল ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিক যে বিবৃতি দিয়েছে ওটা আমি পড়েছি। ওনারা যে কথাগুলো বলেছে, তা বহুবার বলা হয়েছে। জাফর ইকবাল বলেছিলেন, এটা খুব জটিল মেশিন নয়। ওই হিসেবে বলছেন যে এটা দুর্বল যন্ত্র। যন্ত্র দুর্বল কি সবল এটা আমার বিবেচনা করার বিষয় নয়। সবল হওয়ারও দরকার নেই, দুর্বল হওয়ারও দরকার নেই। যন্ত্র কাজ করছে কিনা, এটাই আসল বিষয়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা হাজার হাজার নির্বাচন করেছি। হাজার হাজার ইভিএম ব্যবহার করেছি। কোথাও আমাদের যন্ত্র ম্যালফাংশন করেছে, এমনটি ঘটেনি।
হাবিবুল আওয়াল বলেন, ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব এই কথা তো প্রথমদিন থেকেই বলা হচ্ছে। আমরা এটা নিরসন করার জন্য প্রচুর সময় নিয়েছি। সব দলকে প্রযুক্তিবিদ নিয়ে এসে যাচাই করে দেখতে বলেছি। আমরাও ওদের কথা আমলে নিয়ে পরীক্ষা করেছি। আমরা দেখলাম বাজারে যে কথা চালু রয়েছে ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব, এর স্বপক্ষে আমরা কোনো প্রমান পাইনি। কিভাবে জালিয়াতি সম্ভব দলগুলো যদি নির্দিষ্টভাবে না বলতে পারে, দেখাতে না পারে, আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাচ্ছি ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে ডিজিটালি জালিয়াতি সম্ভব নয়, এটা কিন্তু আইনগত ভাষা নয়। যারা অভিযোগ করছেন তারাই আমাদের দেখিয়ে দেবেন লিখিত এবং মৌখিকভাবে যে কিভাবে জালিয়াতি সম্ভব। আজ অব্দি কোনো দল এই কথাটা বলেননি বা দেখাননি। দলগুলোর মধ্যে ইভিএম নিয়ে আস্থা নেই, এটা জানিনা কতটা আস্থা নেই। কতগুলো দল এসেছিল, আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। পাঁচ-সাতটি দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে বলেছে, কতগুলো দল শর্ত সাপেক্ষে বলেছে।
ইভিএমের পক্ষে যারা বলেছেন তারা একেবারেই কম নয়। আমরা তাদের ভোটাভুটির জন্য ডাকিনি। মতামতের জন্য ডেকেছিলাম। আমরা সুবিধাগুলো তুলে ধরেছি। কারচুপি ও সহিংসতা নিঃসন্দেহে কমে যাবে। আমরা স্টাডি করেছি, ওখানে আমার ভোট আপনি, আপনার ভোট আমি দিতে পারবো না। ওখানে জোরাজুরি, সহিংসতা অনেকখানি কমে যাবে।
সিইসি বলেন, রাজনৈতিক আরো প্রকট হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হবে না। আরেকটা জিনিস বলছেন ভারতের তুলনা দেয়া হচ্ছে। পেপার ট্রেইল যুক্ত করা। এটা যদি থাকে কে কাকে ভোট দিলো পরে দেখা যায়। ভারতের যতো নির্বাচন হয়েছে, ওই পেপার ট্রেইল দিয়ে কেউ এমপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন, এমন নজির নেই। একটা হয়নি এমন।
আমাদের দেশে যে ব্যালটে হয়েছে গত ৫০ বছরে আদালতে মামলা করে পুনর্গণনার পর সংসদের এসেছে এই তথ্য আছে কি-না? যদি না থাকে তাহলে এই একটা জিনিস নিয়ে আপনারা এতো উঠে-পড়ে লাগলেন কেন? বিগত ৫০ বছরে কোনো নির্বাচনে দেখা গেছে কি? আমাদের দেশে কারচুপি হয়, তাহলে মামলা পর কেউ তো জয়ী হয়ে আসেনি। কাজে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করাটাই বড় কথা আস্থাভাজনভাবে।
তিনি বলেন, আমরা যদি ইভিএম তুলে দিই। আর যদি কারচুপি হয় আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি কেউ পরাজিত হয়ে মামলা করে পুনর্গণনা করে জয়ী হয়ে সংসদে আসতে পারবেন না। এটা গ্রাউন্ড রিয়েলিটি। আমরা এটাকে আমলে নিয়েছি।
ভারত কিন্তু বায়োমেট্রিক দিতে পারেনি আমাদের ইভিএমের মতো। ইউরোপের কথা বলা হচ্ছে। আমি জানি না কী জন্য এসব দেশে ইভিএম তুলে দেয়া হয়েছে। তবে ওদের যদি হাত তুলে ভোট দিতে বলেন, ওরা ভদ্রভাবে হাত তুলে ভোট দিয়ে চলে আসবেন। নির্বাচন নিয়ে ওখানে কারচুপি হয় না। ওদের ওখানে কোনো মেশিন বসাতে হয় না। কারণ ওদের ওখানে সভ্যতা ও নিয়মতান্ত্রিকতা এমন একটা পর্যায়ে এসেছে যে ইভিএম কি আর ব্যালট হলেই কি।
আর্থিক সংকটের মধ্যে বড় অংকের টাকা দিয়ে ইভিএম কেনা কতটুকু যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর্থিক সংকটের কথা আমি এপ্রিসিয়েট করি। এটা মনে করলে মন্ত্রণালয় দেখবে। এটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। একটা সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইভিএম লাগবে, সরকার বললো পয়সা দিতে পারবো না, দেশের মানুষকে আর্থিক সংকটে ফেলে আমরা তো জোরাজুরি করবো না। সুষ্ঠু নির্বাচনের যে আর্থিক মূল্য এবং অসুষ্ঠু নির্বাচনের যে আর্থিক মূল্য তা ইভিএমের মূল্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৫০টি ইভিএমে করার আর ১৫০টি আসনে ব্যালটে ভোট করার। কোনো পরিবর্তন করতে হলে আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করতে হবে।