এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৩ পিএম, ৭ মে,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:০৯ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
গত এপ্রিল মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২৭টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৪৩ জন। আহত হয়েছেন ৬১২ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৭, শিশু ৮১। এছাড়া এপ্রিলে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছে ৬ জন। ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনটি ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
আজ শনিবার (৭ মে) সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২০৬ জন, যা মোট নিহতের ৩৭.৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৪.২৬ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২১.৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮৭ জন, অর্থাৎ ১৬ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২০৬ জন (৩৭.৯৩%), বাস যাত্রী ১৩ জন (২.৩৯%), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৬৩ জন (১১.৬০%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশ জীপ যাত্রী ১৪ জন (২.৫৭%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক) ১০০ জন (১৮.৪১%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম) ১৯ জন (৩.৪৯%) এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী ১২ জন (২.২০%) নিহত হয়েছে।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৭টি (৪৩.৭৯%) জাতীয় মহাসড়কে, ১২৩টি (২৮.৮০%) আঞ্চলিক সড়কে, ৬৫টি (১৫.৪২%) গ্রামীণ সড়কে, ৪৬টি (১০.৭৭%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬টি (১.৪০%) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাসমূহের ৮৪টি (১৯.৬৭%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬৭টি (৩৯.১১%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১৩টি (২৬.৪৬%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৫২টি (১২.১৭%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১টি (২.৫৭%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ৩০.১১%, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রাম ট্রাক-তেলবাহী ট্যাঙ্কার- গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্যাঙ্কার ৬.২০%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশ জীপ ৪.৭৫%, যাত্রীবাহী বাস ১০.৪৩%, মোটরসাইকেল ২৬%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১৫.৩২%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-লাটাহাম্বা-ডাম্পার) ৫.৬৮% এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১.৪৫%।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭৫৭ টি। (ট্রাক ১৪৪, বাস ৭৯, কাভার্ডভ্যান ২৬, পিকআপ ৫৮, ট্রলি ৯, লরি ১০, ট্রাক্টর ১৭, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৩, গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্যাঙ্কার ১, ড্রাম ট্রাক ৭, ডিনসিসি’র ময়লাবাহী ট্রাক ১, মাইক্রোবাস ১৭, প্রাইভেটকার ১৪, অ্যাম্বুলেন্স ৩, পুলিশ জীপ ১, মোটরসাইকেল ১৯৭, থ্রি-হুইলার ১১৬ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৪৩ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-লাটাহাম্বা-ডাম্পার) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১১টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.২১%, সকালে ৩২.৫৫%, দুপুরে ১৮.৫০%, বিকালে ২০.৬০%, সন্ধ্যায় ১০.৭৭% এবং রাতে ১৩.৩৪%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান:
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০.৬৭%, প্রাণহানি ২৮.৭২%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৪১%, প্রাণহানি ১৩.০৭%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪.১২%, প্রাণহানি ২২.০৯%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.৭৭%, প্রাণহানি ১০.৮৬%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৩৮%, প্রাণহানি ৪.৬০%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৪৪%, প্রাণহানি ৬.০৭%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৩২%, প্রাণহানি ৭.৩৬% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৮৫%, প্রাণহানি ৭.১৮% ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৩১ টি দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৩৯ টি দুর্ঘটনায় ৪৪ জন নিহত। সবচেয়ে কম ঝালকাঠি জেলায়। ৩ টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২২ টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়েছে।
নিহতদের পেশাগত পরিচয়:
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৪ জন, সেনা সদস্য ১ জন, র্যাব সদস্য ১ জন, বিজিবি সদস্য ১ জন, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ২ জন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ১ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৩ জন, চিকিৎসক ২ জন, সাংবাদিক ৩ জন, আইনজীবী ৪ জন, প্রকৌশলী ২ জন, সংগীত শিল্পী ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৯ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৩১ জন, পোশাক শ্রমিক ৭ জন, চালকল শ্রমিক ২ জন, ইটভাটা শ্রমিক ৪ জন, ধানকাটা শ্রমিক ৬ জন, মাটি কাটা শ্রমিক ৪ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১২ জন এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।