‘এক থাপ্পড় দিয়ে পাবনা ছাড়া করব’ সরকারি কর্মকর্তাকে সংসদ সদস্য জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৯ এএম, ৯ মার্চ,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে দেরি হওয়ায় পাবনা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জ-পাবনা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলির বিরুদ্ধে।
আজ মঙ্গলবার সকালে পাবনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন জেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কানিজ আইরিন জাহান।
এর আগে কানিজ আইরিন ও নাদিরা ইয়াসমিন জলি এমপির কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সামসুন্নাহার রেখার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি সেই ফোন কলেই জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ আইরিন জাহানকে বলেন...
‘এই আপনি কি হইছেন, এই আপনি কি হইছেন।
আপনি নারী হয়ে নারীদেরকে সম্মান করেন না। আপনাকে এক থাপ্পড় মেরে পাবনা ছাড়া করবো কিন্তু। আপনার খুব বেশি আসপদ্দা হয়ে গেছে কিন্তু। প্রত্যেকটা মেয়ের সঙ্গে আপনি খারাপ ব্যবহার করেন। আমি পাবনায় পেজেন্ট রইছি। আপনি নারীদের প্রোগ্রাম করবেন। কালকে নারী দিবস। আপনাকে বলে দিতে হবে, আমাকে ইনভাইট করবেন আপনি?
আপনে কর্মকর্তা আপনাকে এমপির বাসায় আসতে হবে। এসে দাওয়াত করতে হবে। কালকে যদি প্রোগামে আমি যদি দাওয়াত না পাই আপনাকে কেমনে করে পাবনা ছাড়া করি তার ব্যবস্থা আমি করব। আপনেক পাবনা ছাড়া করতে আমার ১০ মিনিটের ব্যাপার। ভদ্রতার খাতিরে আমরা করি না।’
তবে এ ঘটনায় নাদিরা ইয়াসমিন জলি দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমাকে হেয় করার জন্য এসব করা হয়েছে’
এ বিষয়ে কানিজ আইরিন জাহান বলেন, ‘সোমবার সকালে পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সামসুন্নাহার রেখার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি তার সঙ্গে অকথ্য ভাষায় কথা বলেন এবং তাকে থাপ্পড় মেরে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়।’
‘নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে নাদিরা ইয়াসমিন জলিকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। তবে দাফতরিক ব্যস্ততার কারণে আমন্ত্রণপত্র দিতে একটু দেরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একজন সংসদ সদস্য হয়ে এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় আমি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছি। আর সে কারণেই নারী দিবসের আনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ ঘটনা তুলে ধরি।’
প্রধান অতিথি হওয়ার পরও কেন নারী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেননি সে ব্যাপারে জানতে চাইলে নাদিরা ইয়াসমিন জানান তিনি কোনো আমন্ত্রণপত্র পাননি।
হুমকি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, তার ফোন থেকে কোনো কল করা হয়নি, কার ফোনে কে কোন কথা রেকর্ড করেছে তা তিনি জানেন না।
সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরে বলেন, ‘তিনি অনিয়ম করে অনেক সংস্থাকে বাদ দিয়ে দেন। তিনি স্বেচ্ছাচারিতা করে কাজ করে চলেছেন।’
এ ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বলেন, ‘সংসদ সদস্যের পরিবারসহ বিভিন্ন নামকাওয়াস্তে করা সংস্থা কোনো কাজ না করে সরকারি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করায় সেসব বাদ দেওয়ায় সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’
নারী দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মোখলেসুর রহমান। তিনি জানান, নারী দিবসের অনুষ্ঠানে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বক্তব্য দেয়ার পর তিনি প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে বলেছেন।