১২ থেকে ১৭ বছরের শিশুরা টিকা পাবে নথি ছাড়াই : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৩ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুরা এখন থেকে কোনো প্রকার নথি ছাড়াই করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন। অর্থাৎ, টিকা নিতে তাদের জন্মনিবন্ধন বা অন্য কোনো নথি দেখাতে হবে না।
আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
অনুষ্ঠানে তিনি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১২০টি ডায়ালাইসিস শয্যার উদ্বোধন করেন। এ ছাড়াও, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রতি মিনিটে ৫৩২ লিটার গ্যাসীয় মেডিকেল-অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষম একটি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারী মোকাবিলায় গোটা বিশ্ব যেখানে টালমাটাল অবস্থায় আছে সেখানে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স এ উর্ধ্বগতিতে রয়েছে, দেশে খাদ্য সংকট হয়নি, মানুষ কোথাও না খেয়ে থাকেনি, দেশের পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন সহ সকল মেগা প্রজেক্টের কাজ পুরোদমে চলছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি না কমে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, চারটি নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, ২০টি নতুন মেডিকেল কলেজ নির্মান করা হচ্ছে, দেশের সকল জেলা হাসপাতালে ১০ বেডের আইসিইউ বেড ও ১০ বেডের ডায়ালাইসিস বেড করার কাজ এগিয়ে চলা সহ বর্তমান সরকারের উন্নয়নকাজগুলি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের স্বাস্থ্যখাতের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই। স্বাস্থ্যখাতের সফলতার কারনেই গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বাংলাদেশ ১৭ কোটির বেশি মানুষ বা দেশের ৮৫ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আফ্রিকার দেশগুলিতে মাত্র ১২ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। একারনে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে বেশি কাজের সুযোগ পাচ্ছে, ব্যাবসার উর্দ্ধগতি লাভ করেছে, দেশের অর্থনীতির চাকা চাঙা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বেড বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এই হাসপাতালে আগে বেড ছিল ৮শ টি। আমরা এটিকে উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে এখন সাড়ে ১৩শ বেড করেছি।
নতুন আরো ২৪০ বেড বৃদ্ধির কাজ চলমান রয়েছে। আজকেই দেশের কুর্মিটোলা, মুগদা, মিটফোর্ড হাসপাতালের সাথে একযোগে আরো ১২৬টি নতুন ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হলো। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উন্নত বিশ্বের হাসপাতালের ন্যায় নতুন ২০টি বেড স্থাপন করা হলো। একই সাথে, ঢাকার হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ৮ বিভাগে ৮ টি ১৫ তলা বিশিষ্ট সমন্বিত ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মানের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। আমরা চাচ্ছি ঢাকার মানের সেবা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দিতে। এজন্য জেলা হাসপাতালে দ্বিগুণ বেড বৃদ্ধিসহ মফস্বল এলাকায় চিকিৎসা সেবা পৌছে দিতে ১৪ হাজান ১৫৬টি কমিউনিটি সেন্টার করা হয়েছে। এগুলি থেকে দিনে ৯ লাখেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন যা চিকিৎসা সেবায় বর্তমান সরকারের ডিসেন্ট্রালাইজেশন চিন্তার ফসল।
টিকা প্রদান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সব মিলিয়ে এখন সতের কোটির বেশি মানুষকে টিকা দিতে পেরেছি। আমাদের টার্গেটের প্রায় সাড়ে ১১ কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে। হাতে এখন আমাদের ১০ কোটির মতো ভ্যাকসিন আছে। এখনো অনেকেই ভ্যাক্সিন নেননি বা নিতে চাচ্ছেন না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে বর্তমানে কোভিডে মৃত্যুর ৮৫ ভাগ মানুষই নন ভ্যাকসিনেটেড। আক্রান্তেও নন ভ্যাকসিনেটেড মানুষ শীর্ষে। দেশ কোভিডে এত ভাল করেছে ভালো চিকিৎসা সেবা ও সময় মত ভ্যাকসিনেশন কাজ করার কারণেই। এজন্য ভ্যাকসিন নিতে দেশের অবশিষ্ট মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি সভ্য জাতি বলেই দেশের এত বিশাল সংখ্যক মানুষ এত স্বল্প সময়েই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। আগামীতেও বাংলাদেশ সভ্যতার নজির স্থাপন করবে এবং কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল হবে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর প্রমুখ।