সামরিক বাহিনীর সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না - সেনাপ্রধান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৭ এএম, ৬ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:২৮ এএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা চরম পরিস্থিতিতেও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না বলে দাবি করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ব্রান্ডিং বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২২-এর উদ্বোধন ও রেমিটেন্স পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সেনাপ্রধান বলেন, অতীতের সমস্ত রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখুন, আপনারা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি ঘটনাও পাবেন না। এ কারণে আমরা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী নিয়ে গর্ববোধ করি। বিশ্বের অনেক দেশের সৈন্যরা যখন কোনো হামলার শিকার হয়ে প্রতিরোধে গুলি ছোড়ে তখন অনেক ক্ষেত্রেই তারা নির্মম আচরণ করে উল্লেখ করে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ফায়ার অন করার পর বেসামরিক লোকের ক্ষতি কিংবা মারা যাচ্ছে কি-না তা অনেক দেশের সৈন্যের বিবেচনায় থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের সৈন্যরা দেশ-বিদেশে যেখানেই দায়িত্ব পালন করেছে, সেখানেই সুনাম কুড়িয়েছে। বিশ্বের যেখানেই গিয়েছি সেখানেই বাংলাদেশি সৈন্যদের প্রশংসা শুনেছি। বৈশ্বিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ব্যাপক সুনাম রয়েছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান শান্তিরক্ষা মিশনে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন। বলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কিছু কিছু দেশে নৃশংসভাবে গুলি চালানো হয়। তাতে অনেক বেসামরিক মানুষ মারা যায়। তারা মানবাধিকারকে তোয়াক্কা করে না। ইতিহাস আর নথি ঘেঁটে দেখুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা আমাদের সেনাবাহিনীর নেই। এর জন্য আমরা গর্ব বোধ করি। এভাবেই আমরা বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করেছি। ১৯৮৮ সালে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর প্রসঙ্গ টেনে সেনাপ্রধান বলেন, জাতিসংঘের অধীনে মাত্র ১৫ জন সদস্যকে ইরাক-ইরান যুদ্ধ পর্যবেক্ষণে প্রেরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শান্তি রক্ষা মিশনে সম্পৃক্ততা ঘটেছিল। সেই থেকে ক্রমাগত আমাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে প্রথম সারিতে আছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। বর্তমানে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আনন্দের খবর যে, ওই সংখ্যা ৮০ শতাংশই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য।
এই অর্জন এমনি এমনি আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশেও অনেক দায়িত্ব পালন করে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জাতি গঠন এবং নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করি আমরা। এসব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমাদের কিছু হলেও দক্ষতা অর্জন হয়। সেই দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অত্যন্ত কার্যকরভাবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োগ করেন। সেনাবাহিনীর সদস্যদের অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং মানবিক উল্লেখ করে সেনা প্রধান বলেন, নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। শান্তি রক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আজকে বাংলাদেশকে চেনে। তাছাড়া বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের এক রোল মডেল।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রসঙ্গ টেনে সেনাপ্রধান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের ব্র্যান্ডিং করছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের বৃহৎ আয়। তাদের অবদান আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রবাসীদের এই অবদানকে সম্মান জানায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশ এখন ‘দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়া এক অর্থনীতির দেশ’ বলে উল্লেখ করে জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন বলেন, অনেক সূচকেই আমরা উন্নত দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবতার উদাহরণ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের অনেক অর্জন আছে যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ। সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বৃটেনের ক্রয়ডন কাউন্সিলের মেয়র শেরওয়ান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহীদুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম কাজী রফিকুল হাসান। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদের বাণী পাঠ করেন শোনান আয়েশা সিদ্দিকা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী পাঠ করেন মাসুমা চৌধুরী। কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে দেশি বিদেশি গুণিজন এবং প্রবাসী কমিউনিটি নেতৃবৃন্ধ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিত্বদের তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পদক দেয়া হয়।