অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে-
সিইসি নূরুল হুদাকে ক্ষমা চাওয়ার আহবান ৩৭ বিশিষ্ট নাগরিকের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৪ এএম, ২ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:২৮ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ এক সপ্তাহের মধ্যে প্রমাণে ব্যর্থ হলে সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছেন ৩৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা এই আহবান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, বদিউল আলম মজুমদার ইতিমধ্যে সিইসির বক্তব্যকে বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করে এসব অভিযোগের প্রমাণ দেয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। আমরা নূরুল হুদার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং তারই বক্তব্য অনুসারে কানকথার ভিত্তিতে আনীত এই অভিযোগ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রমাণে ব্যর্থ হলে তাকে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বছতা ও সততা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় গত কয়েক দশক ধরে নাগরিক সমাজকে নেতৃত্ব প্রদানকারী একজন ব্যক্তি হিসেবে মজুমদার সুপরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় তার নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান সুজন বিগত বিএনপি সরকারের আমলে আদালতে লড়াই করে নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য জানার জন্য জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। তিনি প্রতিটি সরকারের আমলে নির্বাচনী কারচুপি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়মের তথ্যও তিনি উদঘাটন করেন। যেমন- তথ্য অধিকার আইনের অধীনে তার আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক যেসব তথ্য নির্বাচন কমিশন তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে বাধ্য হয় তা বিশ্লেষণ করে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া, ৫৯০টি কেন্দ্রে প্রদত্ত বৈধ ভোটের সবগুলো একই প্রতীকে পড়া, ১,১৭৭টি কেন্দ্রে বিএনপি এবং ২টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের শূন্য ভোট পাওয়া ইত্যাদি অবিশ্বাস্য চিত্রও উঠে আসে। ২০২০-২১ সালে এসব তথ্য এবং একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জনাব মজুমদার ও সুজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের কিছু বরেন্য ব্যক্তিসহ ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে দুটো চিঠির মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার আবেদন করেন। জনাব হুদার বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করেছেন তারই একজন সহযোগী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এবং সাবেক সিইসি ড. শামসুল হুদাও। বিবৃতিতে বলা হয়, নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহ বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে চরম কারচুপি ও অনিয়ম প্রতিরোধে শুধু ব্যর্থতা নয়, বরং এর সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন আগের রাতে অনুষ্ঠিত হওয়ার গুরুতর অভিযোগের তদন্ত করার এখতিয়ার থাকা সত্বেও তার কমিশন এটি না করে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়। শুধু তাই নয় এই কমিশন পেপার ট্রেইল বিহীন একটি নিম্নমানের ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ডিজিটাল জালিয়তির সুযোগও তৈরি করে যাচ্ছে বলে আমাদের আশংকা রয়েছে। আমরা মনে করি এসব অপকর্ম আড়াল করার প্রচেষ্টা হিসেবে তিনি বিদ্বেষমূলকভাবে জনাব মজুমদার, সুজন ও দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সততা ও আস্থা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে নির্বাচনী সংস্কারের পাশাপাশি তার মতো ব্যক্তির বিচার করাও রাষ্ট্রের আবশ্যকীয় দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।
বিবৃতিদাতাগন হলেন, শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি এম. এ, মতিন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, হাফিজ উদ্দিন খান, রাশেদা কে. চৌধুরী, সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক, সারা হোসেন,সুব্রত চৌধুরী, তবারক হোসেইন, ড. আসিফ নজরুল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, অধ্যাপক স্বপন আদনান, রবিায়েত ফেরদৌস, ড. শাহনাজ হুদা, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, মানবাধিকার কর্মী শিরিন হক, ফরিদা আখতার, সঞ্জীব দ্রং, নূর খান লিটন, অরূপ রাহী, রেহনুমা আহমেদ, নায়লা জেড খান, নাসের বখতিয়ার, হানা শামস আহমেদ,অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাংবাদিক ড. সায়দিয়া গুলরুখ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েমা খাতুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, গবেষক ড. নোভা আহমেদ, রোজিনা বেগম।