জাপানি দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪০ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৫২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দুই দিনের জন্য জাপানি দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় না দেয়ায় বাবা ইমরান শরীফ গুরুতর আদালত অবমাননা করেছেন বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ। দুই শিশুকে আজই মায়ের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসাথে এ বিষয়ে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
আজ সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) জাপানি মায়ের আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিন জাপানি ওই দুই শিশুকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আপিল বিভাগে হাজির করতে নির্দেশ দেন আদালত। শিশুদের বাবা ইমরান শরীফকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। নির্দেশ মতো, বেলা ১১টার দিকে তাদের বাবা ইমরান শরীফ শিশুদের নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন।
এর আগে জাপানি ওই দুই শিশুকে সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) ও মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) জাপানি মায়ের জিম্মায় রাখতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে আগামী বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।
দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে গত ৫ ডিসেম্বর আপিল করেন জাপানি মা নাকানো এরিকো। এর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রোববার (১২ ডিসেম্বর) এই আদেশ দেন।
২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশী-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে সেরে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান-এরিকোর বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সাথে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করেন। এরপর গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
বাংলাদেশে এসে এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সাথে তাকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।