অনেক বড় উদারতা কি আমরা দেখাইনি, আর কত - প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৫ এএম, ৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:০৩ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার যথেষ্ট উদারতা দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যতটুকু দিয়েছি, তাকে যে বাসায় থাকতে দিয়েছি, তাকে যে ইচ্ছা মতো হাসপাতালে নিচ্ছে চিকিৎসা করাতে এটাই কি যথেষ্ট না? এটাই কি অনেক বড় উদারতা আমরা দেখাইনি? সেটাও তো দেখিয়েছি, আর কত! ৪৪ সালে যদি তার জন্ম হয় তার বয়স কত? সেটাও তো দেখতে হবে। যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি আলোচনা সভায় যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এরশাদকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল, তাকে চিকিৎসার জন্য কোনো দিন সুযোগ দেয়নি। রওশন এরশাদকে দেয়নি। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় আমাদের সাজেদা চৌধুরীর অপারেশন হয়েছিল, ঘা শুকায়নি সেই ব্যান্ডেজ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে জেলে ভরেছিল জিয়াউর রহমান। একই অবস্থা মতিয়া চৌধুরীর, তাকেও তখন জেলে দিয়েছিল। তার তখন টিবি হয়েছিল, অসুস্থ ছিল। এ রকম বহু অন্যায় অবিচারের কথা আছে। আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে যে অকথ্য অত্যাচার করেছে। বাহাউদ্দিন নাসিম, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবের হোসেনসহ বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। নাসিমকে এত অত্যাচার করেছিল যে, তাকে মৃত মনে করে তাড়াতাড়ি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। যা হোক, সে বেঁচে গেছে। তারপর সেই অত্যাচারের ভিডিও নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া দেখে উৎফুল্ল হয়েছে। এই ধরনের হিংস্র একটা চরিত্র আমরা দেখেছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে কোকো যখন মারা গেল আমি গেলাম সহানুভূতি দেখাতে। আমি হঠাৎ করে যাইনি। আমার এখান থেকে মিলিটারি সেক্রেটারি যোগাযোগ করেছে, এডিসি যোগাযোগ করেছে। সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে, আমি সময় মতো গেছি। আমি যখন রওনা হয়ে গেছি, গুলশান রোডে তখন শুনলাম তারা ওই বাড়ির মেইন গেট খুলবে না, আমার গাড়ি ঢুকতে দেবে না। আমি বললাম, এত দূর যখন চলে এসেছি ফিরে যাব কেন? পাশে নিশ্চয়ই ছোট পকেট গেট আছে, সেখান দিয়েই যাব। যখন আমার গাড়িটা বাড়ির সামনে থেমেছে, এসএসএফর যে অফিসার বাড়ির ভেতরে ছিল জাস্ট বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে তারা দরজা বন্ধ করে তালা দিয়ে দিয়েছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে বেকুব, আমি আর ভেতরে ঢুকতে পারি না। আমি গেছি একটা মা, সন্তানহারা, তাকে সহানুভূতি দেখাতে। সেখানে এভাবে অপমান করে দিলো তারা। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলে, তারা যে সহযোগিতা চায়, খালেদা জিয়া কী আচরণ করেছে! ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা, তার আগে খালেদা জিয়ার কী বক্তব্য ছিল? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনো দিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আল্লাহর খেলা বোঝা ভার। বরং খালেদা জিয়াই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারেননি। এটা তার ওপরই ফলে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির দায়ে গ্যাটকোর কেস তার বিরুদ্ধে, নাইকোর কেস তার বিরুদ্ধে এটা কিন্তু আমাদের না। আমেরিকার এফবিআই খুঁজে বের করেছে। সিঙ্গাপুরে তার এবং তার ছেলের দুর্নীতি বের হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বের করেছে। সবচেয়ে বড় কথা এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই টাকা এতিমদের হাতে পৌঁছেনি। সে টাকা নিজের অ্যাকাউন্টেই রেখে দিয়েছে। নিজেই খেয়েছে সে টাকা। এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে সেই সাজা সে ভোগ করছে। তারপর সে কারাগারে ছিল। খালেদা জিয়ার বোন আর ভাই আমার কাছে এসেছে। তারা আমাদের কাছে আসলো যখন, রেহানাও আমার সঙ্গে উপস্থিত ছিল। মানবিক দিক থেকে আমার নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে যতটা আমি করতে পারি, তার সাজা স্থগিত করে তাকে তার বাসায় থাকা ও চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছি। বাংলাদেশে সব থেকে ব্যয়বহুল হাসপাতালে তার চিকিৎসা হচ্ছে। তার ছেলের বউ তো ডাক্তার, তারেকের বউ ডাক্তার। শুনেছি সে নাকি অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে। ছেলে-ছেলের বউতো কখনো দেখতে এলো না। অবশ্য কোকোর বউ এসেছে। তারা তো কখনো এলো না! তবু বিএনপি এত দিন পর সুযোগ পেয়েছে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এই দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। আমার যতটুকু করার ছিল সেটা কিন্তু করেছি। সবচেয়ে বড় কথা খালেদা জিয়ার জন্মদিন কি ১৫ আগস্ট? জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ের যে ডকুমেন্ট আছে সেই ডকুমেন্টে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ১৫ আগস্ট না। প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে যে পাসপোর্ট, সেখানেও ১৫ আগস্ট নাই। তার মায়ের যে বিবৃতি তাতেও ১৫ আগস্ট না। তার তো অনেকগুলো জন্ম তারিখ। ৪-৫টা তারিখ হয় কীভাবে? ১৫ আগস্ট কেক কেটে উৎসব করার অর্থটা কী! ওই দিন আমরা বাবা, মা, ভাই, সন্তান হারিয়েছি আমাদের মনে আঘাত করা। আমাদের কষ্ট দেয়া। আমার কাছ থেকে আর কত আশা করে তারা? কীভাবে আশা করে সেটাই আমার প্রশ্ন।
যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ইতিহাস জানা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার পিতার হত্যাকারীদের বিচার করতে দেবে না। খুনিদের বিচার আমরা শুরু করেছি ৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিচার শুধু বন্ধই না, একজন খুনি সে বিদেশে মারা যায়। পাশা, সামরিক অফিসার। আমরা ক্ষমতায় আসার পর স্বাভাবিকভাবে তাদের সবাইকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছি। সেই মৃত অফিসারকে খালেদা জিয়া এসে তাকে অবসরের সুযোগ দেয়। প্রমোশন দিয়ে সব টাকা-পয়সা ফেরত দেয়। আরও একজন খুনি খায়রুজ্জামান, তাকে ফেরত নিয়ে এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেয়। ৪ নেতা হত্যা মামলায় খায়রুজ্জামান আসামি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া তাকে চাকরিতে বহাল, প্রমোশন দেওয়া এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিদেশে পাঠানো। কতটা জঘন্য মনোবৃত্তি সেটাই মানুষকে জানতে হবে। জাতির পিতা হত্যার একটা তদন্ত কমিটি ৮০ সালে লন্ডনে আমরা করি। স্যার টমাস উইলিয়াম ঢাকায় আসতে চেয়েছিলেন তদন্ত করতে। জিয়াউর রহমান তাকে কিন্তু ভিসা দেয়নি। এরা আমাদের কাছে কী আশা করে! আমরা যতটুকু দিয়েছি, তাকে যে বাসায় থাকতে দিয়েছি, তাকে যে ইচ্ছা মতো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে দিচ্ছি এটাই কি যথেষ্ট না? এটাই কি অনেক বড় উদারতা আমরা দেখাইনি? সেটাও তো দেখিয়েছি, আর কত! ৪৪ সালে যদি তার জন্ম হয় তার বয়স কত? সেটাও তো দেখতে হবে। বললাম ইচ্ছা করেই, আমাদের যুবলীগের নেতা-কর্মীদের জানতে হবে। নানা ধরনের কথা আসে। এ দেশের মানুষ অদ্ভুত চরিত্রের। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে আবার দুর্নীতিবাজের জন্য কান্নাকাটিও করবে। তাকে বিদেশে চিকিৎসাও করাতে হবে যে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত। এ ধরনের দ্বৈত মানসিকতা কেন!