আপিল বিভাগে শুনানির আগেই দুই আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৫ এএম, ৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪৮ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
কোনো আসামির দন্ড কার্যকর করার আগে নিয়ম অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আসামির পক্ষ থেকে আপিল করার কথা। কিন্তু দুই আসামির করা আপিল আবেদন শুনানির আগেই তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানির জন্য গতকাল কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) ছিল। কিন্তু মামলার শুনানি হওয়ার আগেই জানা যায় আসামিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়ে গেছে। আপিল আবেদনকারী আইনজীবী মো. আসিফ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানির জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এর কয়েক সপ্তাহ আগে মামলাটি শুনানি করে দেয়ার জন্যে সুপ্রিম কোর্টের অপর আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির আমাকে বলেন। তারই পরামর্শে আমি মামলাটি শুনানির জন্য ওকালতনামা নেই। এরপর এসে তিনি আমাকে ফোন করে জানান, মামলার দুই আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়ে গেছে। এর আগে আমি জানতাম না যে, আসামিদের দন্ড কার্যকর হয়ে গেছে।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ড হলে তা কার্যকর করতে অনুমতি প্রয়োজন হয় হাইকোর্টের। হাইকোর্টে মৃত্যুদন্ড অনুমোদন হওয়ার পর তা কার্যকর করতে আরও কিছু প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়। তবে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলার কোনো পক্ষ যদি আপিল দায়ের করে সে ক্ষেত্রে তা নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে।
অথচ চিরাচরিত সেই নিয়মের বাইরে গিয়ে আপিল নিষ্পত্তির আগেই চুয়াডাঙ্গার মোকিম ও ঝড়– নামে দুই আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। যদিও বিষয়টি শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) শুনানির জন্য ছিল।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, আসামি মোকিম ও ঝড়–র বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন একই এলাকার সাবেক মেম্বার মো. মনোয়ার হোসেন খুন হন। ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো. অহিমউদ্দিন বাদী হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়–র নাম আসে। পরে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদন্ড, দুইজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২। মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- একই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়–। এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। মামলার ডেথ রেফারেন্স নাম্বার ছিল ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়–র মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করেন। বাকি আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট। পরে মোকিম (আপিল নং- ১১১/২০১৩) ও ঝড়– (আপিল নং- ১০৭//২০১৩) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। তখন মোকিমের পক্ষে আপিল মামলাটি তদারকির দায়িত্ব পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির। এরপরও দীর্ঘ আট বছর চলে গেছে। সম্প্রতি আপিলটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। মামলাটি শুনানির জন্য তালিকায় ওঠার পর দরিদ্র মোকিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, আপিল নিষ্পত্তির আগেই ২০১৭ সালে মোকিমের ফাঁসি কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এমনকি অপর আসামি ঝড়–র মৃত্যুদন্ডও কার্যকর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। নিয়ম অনুসারে, হাইকোর্ট কর্তৃক কোনো আসামির মৃত্যুদন্ড অনুমোদনের পর আপিল দায়ের করা হলে আপিল বিভাগ থেকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এবং সংশ্লিষ্ট ডিসির কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা যায়। ফলে দন্ড কার্যকর ওই সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। তদারকি করতে গিয়ে আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির নিজেও ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপ্রার্থী মোকিম কনডেম প্রিজনার ছিলেন। বিচারপ্রার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছি, কনডেম প্রিজনার মোকিম ও ঝড়–র মৃত্যুদন্ড এরইমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। মূলত মোকিম ও ঝড়–র পরিবার খুবই দরিদ্র। তাই তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরা সেভাবে মামলার বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারেননি। সে সামর্থ্যও তাদের ছিল না বলে জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।