কর্তব্য পালন করবে মানুষের জন্য : নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৪ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ১১:৩০ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে নিজেদের কর্তব্য পালনের জন্য সেনাবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) প্যারেড গ্রাউন্ডে ৭৯তম বিএমএ লং কোর্সের সমাপনীতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
সেনা সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের সব সময় এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে, দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের জন্য কর্তব্য পালন করতে হবে। কারণ তোমরা যে শপথ গ্রহণ করেছ, এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিরাট দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে পড়ল। সেই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে নবীন ক্যাডেটদের উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখান থেকে উদ্ধৃত করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালো বাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেনো, সৎ পথে থেকো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জীবনে সব থেকে বড় কথা সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং দেশমাতৃকাকে ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশনা, এই উপদেশ আমি মনে করি চলার পথে সব সময় মনে রাখবা।”
মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাও স্মরণ করিয়ে দেন। ঘাতকের বুলেটে সেদিন প্রাণ হারানো বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা শহিদ লেফট্যানেন্ট শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেলের কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন। ছোট ভাই শেখ রাসেলের কথা মনে করে শেখ হাসিনা বলেন, “মাত্র ১০ বছর বয়স, তার জীবনে একটা স্বপ্নই ছিল, সে সেনাবাহিনীর অফিসার হবে।” কিন্তু ঘাতকের বুলেট যে সেদিন সেই স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটিয়েছিল, আজকের নবীন সেনা অফিসারদের সে কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “তোমাদের মাঝে যখন আসি, আমার মনে হয় আমিও তোমাদের পরিবারেরই একজন। কাজেই তোমাদের প্রতি সব সময় আমার দোয়া থাকবে, আশীর্বাদ থাকবে।”
কমিশনপ্রাপ্ত নবীন সেনা কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোমরা দেশকে ভালোবাসবে, মানুষকে ভালোবাসবে, মানুষের জন্য কর্তব্য পালন করবে। যেন এই দেশ এগিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে এই দেশ আরো উন্নত, সমৃদ্ধ হতে পারে, সেইভাবেই তোমরা কাজ করবে, সেটাই আমরা চাই।”
সেনা সদস্যদের দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “দেশে বিদেশে আমাদের সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই সর্বক্ষেত্রে তারা দক্ষ থাকবে, উপযুক্ত থাকবে, আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হবে, যেন সারা বিশ্বে যেখানেই যাবে, সেখানেই দেশের সম্মান অক্ষুন্ন রাখে, সেদিকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।”
মহামারির মধ্যে সশরীরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারায় নিজের দুঃখের কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন। তিনি বলেন, যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে ।
সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও বলেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, “দেশের উন্নতি হলে সবারই উন্নতি হবে, দেশ শান্তিতে থাকলে সবাই শান্তিতে থাকবে, সেই কথাটা সব সময় মনে রেখে এদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য যথাযথভাবে অবদান রাখতে কাজ করে যেতে হবে।”
নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “তোমরা নেতৃত্বে আরো সফল হও, দক্ষ হও, সুশিক্ষিত হও এবং দেশ-জাতি তোমাদের জন্য সব সময় গর্ব বোধ করবে, সেটাই আমি চাই।”
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের কথা মাথায় রেখে বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলার মত করে নিজেদের গড়ে তুলতে এবং দেশের মান-মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সেনা সদস্যদের প্রতি নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা প্রথমে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করেছি। এখন ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। এই ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ। আর সেই সময় সেই দেশ পরিচালনায় তখন আরো উঁচু মানের অফিসার হিসেবে তোমরাই কিন্তু দায়িত্ব পালন করবে।”
আমাদের যারা আজকের নবীন, তাদের ওপরই সে সময় দায়িত্ব আসবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কাজেই আমার ২০৪১-এর উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার সৈনিক হিসেবে তোমরাই দায়িত্ব পালন করবে, তোমরাই কাজ করবে। সেই কথাটা মাথায় রেখেই নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব তোমর পালন করবে।”