স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপির একগুচ্ছ কমিটি গঠন
সরকার উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে-মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০১ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ১১:২৯ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সরকার উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার সোমবার ইউএনডিপির প্রকাশিত মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের বিষয়ে সকালে দলের স্বাধীনতা সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বলা হচ্ছে যে, এই সরকার তারা যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে, তারা নিজেরাই নিজেদের কথা বলছে এবং তারা নিজেদেরকে একটা উন্নয়নের রোল মডেল বলছে। আজকের পত্রিকায় আছে যে, ইউএনডিপি গতকাল যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গোটা এশিয়াতে কী অবস্থান, কোন কোন দেশ কি অবস্থায় আছে। তাতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াতে পঞ্চম। ভুটানেরও নিচে। এখানেই বোঝা যায় যে, আসলে আমাদের উন্নয়নে কথা যেটা বলা হচ্ছে এটা আসলেই একটা পুরোপুরিভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা ক্ষমতায় জোর করে টিকে থাকতে চায়।
তিনি বলেন, আজকে সমস্ত ক্ষেত্রেই সরকার স্বাধীনতার সমস্ত চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে দলীয়করণ করে নষ্ট করেছে, তারা অর্থনীতিকে আজকে একটা লুটপাটের অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। তারা পার্লামেন্টকে পুরোপুরি একটা অকেজো পার্লামেন্ট তৈরি করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আপনারা দেখছেন যে, বিশিষ্ট নাগরিকরা তারাই তাদের বক্তব্য রাখছেন, বলছেন যে, এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে সম্ভব হবে না।
দলের পক্ষ থেকে নেয়া স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা যে মূল চেতনাটির জন্য সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি, প্রাণ দিয়েছি। আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ তারা শহীদ হয়েছেন, মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছেন। অনেক মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের। সেই গণতান্ত্রিক চেতনাকে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং গণতন্ত্রের জন্য যারা সেদিন লড়াই করেছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন তাদের সেই মর্যাদাটাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা।
তিনি বলেন, আমাদের দুঃখ হয় যখন দেখি যে, একজন অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে যখন আমরা দেখি কারাগারে। তাঁকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা যখন দেখি যে, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে অপমান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের যারা প্রধান ছিলেন বা যারা সামনের সারির ছিলেন, যারা অগ্রণী ছিলেন তাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমরা অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালন করি এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তার সম্মান প্রতিষ্ঠা করি এবং মূল যে লক্ষ্যটি গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। কোভিড ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতা ও রাজনৈতিক পরিবেশের প্রতিকূলতার মধ্যে দলের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা জনগণের কাছে গিয়ে করার শঙ্কার কথাও বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, করোনার প্রতিকূলতা ও বর্তমানে রাজনৈতিক যে পরিবেশ সেটাও আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি এবং স্বাধীনতার মূল চেতনাকে যারা আমরা ধারণ করি, লালন করি তাদের জন্য কোন পরিবেশে কিভাবে আমরা পালন করতে সক্ষম হবো সেটাও আমরা জানি না। কারণ ইতিমধ্যে দেখছেন যে, গত কয়েক বছর ধরে স্বাধীনতার চেতনাকে বিলুপ্ত করে দিয়ে, ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেটা আমরা মনে করি যে, ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধের মূল যে চেতনা ছিলো সেই চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেছিলেন। আমাদের দলের আদর্শ ও লক্ষ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে কথাটা লেখা রয়েছে স্বাধীনতার চেতনাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। স্বাধীনতা আমাদের বড় অর্জন এবং এই স্বাধীনতাকে আজকে রক্ষা করা এটাও আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আজকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে, আমাদের সীমান্তে নাগরিকরা নিহত হচ্ছেন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে। আমাদের দেশে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে প্রবেশ করেছে তাদেরকে প্রত্যাবাসনের জন্য যারা সরকার দখল করে আছেন তারা সেরকম কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী-২০১২ উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৫টি বিষয়ভত্তিক কমিটি ও ১০টি বিভাগীয় কমিটির নাম ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালামও উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপির একগুচ্ছ কমিটি গঠন : মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশের জাতীয় দল বিএনপি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি গুলো হলো-
১. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্মরণিকা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে আহ্বায়ক করে আইনের শাসন ও মানবাধিকার কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৩. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আহ্বায়ক করে প্রচার কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৪. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানকে আহ্বায়ক করে সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৫. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক করে স্বরচিত কবিতা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৬. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে মিডিয়া কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৭. বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে আহ্বায়ক করে প্রকাশনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৮. বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরকে আহ্বায়ক করে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৯. বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুকে আহ্বায়ক করে র্যালি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১০. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক করে সাজসজ্জা, মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা ও চিত্র প্রদর্শনী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১১. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে আহ্বায়ক করে সাংস্কৃতিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১২. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মুস্তাহিদুর রহমানকে আহ্বায়ক করে রচনা প্রতিযোগিতা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৩. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) এম এ লতিফ খানকে আহ্বায়ক করে ক্রীড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৪. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকারকে আহ্বায়ক করে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সচিবালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৫. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে আহ্বায়ক করে চিকিৎসা ও সেবা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিভাগীয় কমিটি
১৬. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকারকে আহ্বায়ক করে রংপুর বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৭. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে ঢাকা বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৮. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে ময়মনসিংহ বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৯. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২০. বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক করে বরিশাল বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২১. বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায়কে আহ্বায়ক করে খুলনা বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২২. বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আমিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ফরিদপুর বিভাগের কমিটি করা হয়েছে।
২৩. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুকে আহ্বায়ক করে রাজশাহী বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২৪. বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে কুমিল্লা বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২৫. সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হককে আহ্বায়ক করে সিলেট বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।