প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতিতে জড়িতদের ছাড় নয় - হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০১ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৫ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর একটি সিদ্ধান্তকে বদলে দেয়ার মামলার আসামি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদকে দ্রুত গ্রেফতারে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যদি তিনি দেশের বাইরে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করতে বলা হয়েছে। এই মামলার এক আসামির জামিন শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতি একটা ঘৃণ্য অপরাধ। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কোনো ছাড় নয়। সাহস ভালো তবে দুঃসাহস ভালো নয়। আজ হাইকোর্টে এই মামলার আসামি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডেসপাস রাইটার মো. রুবেল জামিন চান। ওই আবেদন খারিজ করে দুদককে মামলাটির তদন্ত ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডোর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই সংক্ষেপের নথি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করার পর তিনি অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে এলে এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি বলে গোপনীয় তথ্য ফোনে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুলকে জানিয়ে দেন। এরপর গত ১ মার্চ নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে ৪ নম্বর গেটের সামনে আসামি ফরহাদের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। এই কাজের জন্য ফাতেমাকে আসামিরা ১০ হাজার করে বিকাশে মোট ২০ হাজার টাকা দেন বলে অভিযোগ আনা হয়। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টিক চিহ্নটি ‘টেম্পারিং' করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেয়। একইভাবে অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফের নামের পাশেও ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডোর এম আবদুস সালাম আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেয়। গত ৩ মার্চ আসামিরা নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠায়। তবে এক পর্যায়ে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। জালিয়াতির ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত ৫ মে মামলা করেন।
মামলায় আসামিরা হলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি (বহিষ্কৃত) তরিকুল ইসলাম মমিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারী ফাতেমা খাতুন, নাজিম উদ্দীন, রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস- এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদ। এদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডোর এম আবদুস সালাম আজাদ পলাতক রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে তরিকুলসহ চারজন অভিযোগ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।