ব্যাটারিচালিত রিকশা বাদ দিয়ে ‘ইলেকট্রিক মোটরযান’ নীতিমালা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪২ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:০৮ এএম, ৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
ব্যাটারিচালিত রিকশা-সাইকেল বাদ দিয়েই ইলেকট্রিক মোটরযান নীতিমালা করছে সরকার। ইতিমধ্যে ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১’ শিরোনামে খসড়া চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, একটি ভালো আইন হয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ রাখা হয়েছে এতে।
জানা গেছে, অংশীজনসহ সবার মতামতের জন্য এ নীতিমালা শিগগির ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। ১৫ দিন সময় দেয়া হবে মতামতের জন্য। এরপর পর্যালোচনা সভা করে উপযুক্ত মতামত গ্রহণ করে একটি সমন্বিত খসড়া নীতিমালা মন্ত্রিপরিষদে পাঠাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
সূত্র জানায়, বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে নীতিমালা নিয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে কিছু সংশোধনী দিয়ে পাস করা হয় খসড়া। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন এ বিভাগের দুজন অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ও পরিচালকসহ (রোড সেফটি) মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা।
কেন এ নীতিমালা : ইলেকট্রিক মোটরযান নীতিমালার শুরুতে তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার কারণে মেরু অঞ্চলের বরফ গলা, সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়া, রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি, বস্তুতন্ত্রের বিনাশ, আবহাওয়ার প্রকৃতি পরিবর্তন, ফসলের ক্ষতি, বনাঞ্চল ধ্বংস, পানীয়জলের সংক্রমণ, কোথাও খরা আবার কোথাও বন্যার প্রকোপ ইত্যাদি সমস্যা বাড়ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে। এর কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ঘন ঘন হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এভাবে তাপমাত্রা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ডুবে যেতে পারে। সাগর থেকে নদীতে ঢুকতে পারে নোনাজল।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীতে ঘূর্ণিঝড়ের দিক থেকে প্রথম এবং বন্যার দিক থেকে ষষ্ঠ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মূল কারণ হলো- বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। কার্বন ডাই-অক্সাইডের একটি অন্যতম উৎস হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত মোটরযান। এসব মোটরযানে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি (প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি) দহনের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয়। ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারও বাড়ছে। ফলে বাড়ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ। মোটরযান থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধ করা যায়। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ইঞ্জিনবিহীন ইলেকট্রিক মোটরযান ব্যবহারে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। ইলেকট্রিক মোটরযানে সরাসরি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রয়োজন হয় না বিধায় এ থেকে কোনো কার্বন ডাই-অক্সাইড বা দহনজনিত ক্ষতিকারক পদার্থ নিঃসরণ হয় না। তাছাড়া এ থেকে হয় না কোনো শব্দদূষণও।
এজন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি দহন করে তৈরি করতে হয় বিদ্যুৎ। তা সঞ্চালন করে ব্যাটারিতে জমা রাখতে হয়। এসব প্রক্রিয়া উচ্চ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারলে সার্বিকভাবে এটি পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশে এ ধরনের মোটরযান ব্যবহার শুরু হয়েছে, তাই এগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ১২৪ ধারা মোতাবেক ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের পরিচয় : নীতিমালায় ইলেকট্রিক মোটরযানের পরিচয়ের বিষয়ে বলা হয়, এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে চালিত মোটরযান। যার চালিকা শক্তি সরবরাহ করা হয় ওই মোটরযানে সংযুক্ত রিচার্জেবল ব্যাটারির সাহায্যে। কিন্তু ব্যাটারিচালিত সাইকেল বা রিকশা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইলেকট্রিক মোটরযানের বৈশিষ্ট্য হলো- এসব মোটরযান শনাক্তে তার বডি বা ফ্রেমে ভিউকল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর কোড থাকবে, যা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান খোদাইকৃত নির্ধারিত ডিজিটের চেসিস নম্বর থাকবে। মোটর শনাক্তে তার গায়ে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের খোদাই করা নির্ধারিত ডিজিটে মোটর নম্বর থাকতে হবে। একাধিক মোটরের ক্ষেত্রে একই শর্ত প্রযোজ্য।
নীতিতে চার্জ দেয়ার প্রক্রিয়া : ইলেকট্রিক মোটরযানের চার্জিং সিস্টেম বাংলাদেশে প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার (ভোল্টেজ, ফ্রিকোয়েন্সি) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে বিদ্যুৎ বিভাগের ইলেকট্রিক মোটরযান চার্জিং গাইডলাইন। গাইডলাইন অনুযায়ী অনুমোদিত চার্জিং স্টেশন বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অথবা সোলার প্যানেল বা নবায়নযোগ্য যেকোনো জ্বালানি ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ করা যাবে। ব্যবহার করতে হবে লিথিয়াম আয়ন অথবা অধিকতর উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন ও পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত উন্নত লেড অ্যাসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিরাপত্তা কেমন হবে : সড়ক পরিবহন বিধিমালা জারি না হওয়া পর্যন্ত ‘মোটরযান বিধিমালা, ১৯৪০-এর’ পঞ্চম অধ্যায়ে উল্লেখিত বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে (ইঞ্জিন সংশ্লিষ্ট বিধানাবলি ছাড়া)। ব্রেক, স্টিয়ারিং, লাইটিং, সাসপেনশন ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের সমতুল্য হবে। নিরাপত্তামান হতে হবে অনুরূপ ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের সমতুল্য। শক বা অন্য কোনো ঝুঁকি এড়াতে ব্যাটারি এবং ইলেকট্রনিক সরঞ্জামাদি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
এছাড়া বোঝাই অবস্থায় কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত গতিসীমায় বা আইনে উল্লেখিত গতিতে চলাচলের সক্ষমতা ইলেকট্রিক মোটরযানের থাকতে হবে। ইলেকট্রিক মোটরযান আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্যই নতুন হতে হবে। ভবিষ্যতে ব্যবহৃত এসব মোটরযান আমদানি করার বিষয়টি নীতিমালায় সংযোজন করা যেতে পারে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ওভারহ্যাঙ্গসহ অন্যান্য পরিমাপ সড়ক পরিবহন বিধিমালা জারি না হওয়া পর্যন্ত মোটরযান বিধিমালা, ১৯৪০-এর সংশ্লিষ্ট বিধি মোতাবেক নির্ধারিত হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ অকেজো ব্যাটারি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিবেশবান্ধবভাবে ‘ডিসপোজাল’ করতে হবে।
ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি : ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের প্রচলিত রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি অনুযায়ী ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন হবে। ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট এবং ট্যাক্স-টোকেন ও রুট পারমিট যে ফরমেটে দেয়া হচ্ছে ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে একই ফরমেট ব্যবহারযোগ্য (ইঞ্জিন সম্পর্কিত বিষয় ছাড়া)। আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) সংশ্লিষ্ট রুট পারমিট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সিলিংকৃত নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী ইলেকট্রিক যান রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য নয়।
বাজারজাতকরণ বা রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের আগে প্রস্তুতকারক সংযোজনকারী বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বিআরটিএ থেকে ইলেকট্রিক মোটরযানের মডেলভিত্তিক যেকোনো ধরনের মোটরযানের ক্ষেত্রে টাইপ অনুমোদন নিতে হবে। টাইপ অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে বিআরটিএ কর্তৃক প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
এছাড়া ইলেকট্রিক মোটরযানের প্রস্তুতকারক সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে প্রস্তুতকারক সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে। ইঞ্জিনচালিত প্রচলিত মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে মোটরযানের সিলিন্ডার সংখ্যা, কিউবিক ক্যাপাসিটি (সিসি), অশ্বশক্তি (হর্স পাওয়ার), ইঞ্জিন নম্বর, জ্বালানি ইত্যাদি তথ্য লেখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ইলেকট্রিক মোটরযানে ইঞ্জিন না থাকায় তার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে সিলিভার সংখ্যা, সিসি, হর্স পাওয়ার, ইঞ্জিন নম্বর, জ্বালানি লেখা সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে ওই ঘরগুলো যথাক্রমে ব্যাটারির সংখ্যা, মোটরের ক্ষমতা (কিলোওয়াট), ব্যাটারির ক্যাপাসিটি, মোটরের নম্বর, ইলেকট্রিসিটির তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।
ইলেকট্রিক মোটরযানের লাইফটাইম : ‘লাইফটাইম’ অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন প্রদান করতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের লাইফটাইম হবে- মোটরসাইকেল ১০ বছর, থ্রি-হুইলার ছয় বছর, হালকা মোটরযান, মধ্যম মোটরযান ও ভারী মোটরযান ২০ বছর।
নির্ধারিত লাইফটাইম শেষে ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন বাতিলযোগ্য। লাইফটাইম শেষে মোটরযানটি কোনোভাবেই রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না। ইলেকট্রিক মোটরযানের মূল বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ রেখে বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত পরীক্ষায় সন্তোষজনক বিবেচিত হলে এর মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।
রেজিস্ট্রেশন ফি : ইঞ্জিনচালিত যেসব মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ফি সিসির ওপর নির্ধারিত, সেসব শ্রেণির ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে মোটরের ক্যাপাসিটির ভিত্তিতে ফি নির্ধারিত হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আসন ও ওজনের ভিত্তিতে ফি নির্ধারিত হবে। ফিটনেস, ট্যাক্স- টোকেন, রুট পারমিটসহ অন্যান্য ফি ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের মতো হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স-টোকেন, রুট পারমিট ফি সড়ক পরিবহন বিধিমালা জারি না হওয়া পর্যন্ত মোটরযান বিধিমালা, ১৯৮৪ অনুযায়ী হবে।
এছাড়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে মোটরযানের ধরন অনুযায়ী ইঞ্জিনচালিত মোটরযানের মতো রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রযোজ্য হবে। সেসব মোটরযানের সিরিজ সিসির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত, সেসব মোটরযানের জন্য সিসির সমতুল্য কিলোওয়াটের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে আরএফআইডি ট্যাগ ও ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি), স্টিকার-লেবেল ইত্যাদি প্রযোজ্য হবে।
রুট পারমিটস : ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রে রুট পারমিট প্রযোজ্য হবে। রুট পারমিট প্রদানের ক্ষেত্রে, যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি (আরটিসি) সংশ্লিষ্ট রুট পারমিট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ইলেকট্রিক মোটরযানের ব্যাটারির চার্জ ধারণক্ষমতা (একবার চার্জে সর্বোচ্চ কিলোমিটার চলাচলের সক্ষমতা), চার্জিং অবকাঠামোগত সুবিধা বিবেচনা করতে পারে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধিবিধান ও প্রচলিত সরকারি নিয়মনীতি এবং নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণযোগ্য।
ভাড়া কেমন হবে : কন্ট্রাক্ট ক্যারিজ (চুক্তিতে ভাড়ার মাধ্যমে পরিচালিত) হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক মোটরযানের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করতে পারবে। পৃথকভাবে ইলেকট্রিক মোটরযানের ভাড়া নির্ধারণ না করা পর্যন্ত তা ইঞ্জিনচালিত প্রচলিত কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের অনুরূপ হইবে।
শাস্তি বা আইনি ব্যবস্থা : ইলেকট্রিক মোটরযানের ক্ষেত্রেও সড়ক পরিবহন আইনের মোটরযান নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধ, শান্তি ও পদ্ধতি সংক্রান্ত বিধানাবলি প্রয়োগযোগ্য হবে। ইলেকট্রিক মোটরযান চলাচলের সময় রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রুট পারমিট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স-টোকেন, ট্রাস্টি বোর্ড আর্থিক সহায়তা তহবিলে জমাকৃত অর্থের রসিদ, প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি কাগজ গাড়ির সঙ্গে রাখতে হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের চালকদের সড়ক পরিবহন আইন সংক্রান্ত যাবতীয় আইন, বিধি, প্রবিধি ও নীতিমালা মেনে চলতে হবে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত হারে আয়কর প্রযোজ্য হবে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, খসড়া নিয়ে মিটিং হয়েছে। কিছু কিছু আমদানি হচ্ছে, বিআরটিএর মাধ্যমে আমরা রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছি, সারাবিশ্বেই চলছে। আমাদের দেশে এটি নতুন। এগুলোর রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি কেমন হবে, অনলাইনে যেসব বিষয় আছে- এগুলো সম্পর্কে নীতিমালা থাকা দরকার, তাই আমরা একটা নীতিমালা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা মাত্র খসড়া চূড়ান্ত করেছি। এর আরও অনেক প্রক্রিয়া আছে। এটা আমাদের ওয়েবসাইটে যাবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যাবে, যে কেউ মতামত দিতে পারবেন। মতামতের জন্য ১৫ দিন সময় দেয়া হবে। এ মতামত পর্যালোচনা করে যৌক্তিক মনে হলে গ্রহণ করা হবে। এরপর এটা আমরা কম্পাইল করে ক্যাবিনেটে পাঠাবো।
বিশেষজ্ঞদের মতামত : এই আইনকে স্বাগত জানিয়ে নিরাপদ সড়ক চাইর (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ভালো একটি আইন হয়েছে। এতে নানা সুযোগ রাখা হয়েছে। পাঁচ বছর বাস্তবায়ন করে চাইলে নতুন কিছু সংযোজন করা যাবে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বাইসাইকেল নিয়ে তিনি বলেন, এগুলো তো আর মোটরযান নয়। প্যাডেলচালিত রিকশায় মোটর লাগিয়ে চালানো হয়। কিন্তু এর ব্রেক ধরার (নিয়ন্ত্রণ) ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, এটি একটি শুভ উদ্যোগ। এর বাস্তবায়ন করতে হলে ভবিষ্যৎকেন্দ্রিক ভাবনাটাও পরিপূর্ণভাবে করতে হবে। যেমন- ইলেকট্রিক যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি এগুলোর চার্জিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সব পার্কিংয়ে চার্জ পয়েন্ট রাখাসহ আরও অনেক বিষয় আছে। এগুলো করা গেলে এ নীতিমালার সুফল পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের মতোই হয়তো করেছে। আমি এতে খারাপ কিছু দেখিনি। একটা চাপ আসতে পারে- সারাদেশে এত বেশি ইজিবাইক হয়েছে, এটাকে ইগনোর করার সুযোগ নেই। তবে বাস্তবতার নিরিখে আমি বলবো, ইজিবাইককে পেট্রোনাইজ করারও সুযোগ নেই। যে শহর বা উপশহরে ইজিবাইক প্রচলিত, তার আউটকাম দেখলেই বোঝা যায়, সে শহরের কী অবস্থা!