দুর্নীতি বন্ধে দুদকের ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ দেখছেন না হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৩ এএম, ২৬ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৬ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
আইন অনুযায়ী দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ‘ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ’ দেখতে পাচ্ছেন না হাইকোর্ট। দুদকের মামলায় এক আসামির অব্যাহতির আদেশ বাতিল করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীম হাইকোর্ট বেঞ্চের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।
আজ বুধবার ৭২ পৃষ্ঠার রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেছেন, দেশের দুর্নীতি চর্চা বন্ধ করতে আইনি অবস্থান থেকে দুদকের আরও কঠোর হওয়া উচিত।
বিশেষ বিধান (আইন) থাকার পরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান, তদন্ত শেষ না করায় সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান বা তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও রায়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন আদালত। আদালত বলেছেন, যদি কমিশনের কোনো কাজ, আদেশ, কার্যপ্রণালী এবং নিষ্ক্রিয়তা সংশ্লিষ্ট আইনের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে এবং দেশের দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন যদি যথাযথ ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে নীরবতা অবলম্বন করে, তবে সব প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, আজকাল আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি- বড় বড় দুর্নীতির মামলাগুলোর আইনি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার চেয়ে দুদক আত্মসাতের টাকা পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত। এর ফলে অভিযুক্তরা নিজেদের রক্ষায় সুবিধা পাচ্ছে বা সুবিধা নিচ্ছে। টাকা উদ্ধার দুদকের কাজ না। আইনেও সে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। টাকা পুনরুদ্ধারে শুধু এটুকু প্রতীয়মান হয় যে, অভিযুক্ত বা ব্যক্তি অর্থ আত্মসাৎ বা পাচার করেছেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে দুর্নীতি করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অনেক সরকারি দফতরের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। কিন্তু সে মামলাগুলোর অনুসন্ধান, তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ দুদক নেয়নি। তাছাড়া এ ব্যাপারে কমিশনের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে প্রশ্ন ওঠে- কমিশন কি আইনের ঊর্ধ্বে? নিশ্চিতভাবে এর উত্তর হচ্ছে ‘না’।
আদালত বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিধি ২০০৭-এ কমিশনের কার্যক্রম বিশদভাবে বর্ণনা করা আছে। ফলে দেশের দুর্নীতি চর্চা বন্ধ করতে আইনি অবস্থান থেকে কমিশনের উচিত আরও কঠোর হওয়া। তবে আইন ও বিধির বাইরে গিয়ে অন্য কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া হয়নি। এর আগে কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মমিনুর রহমান ও সহকারী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলামকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ২০১১ সালের ২৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয়। দুদকের রংপুরের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ওই দিনই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ৬ মে মো. জহিরুল ইসলাম মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। শুনানির পর একই বছরের ১২ জুন রংপুরের বিশেষ জজ আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে তাকে অব্যাহতি দেন। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে একটি আবেদন (রিভিশন পিটিশন) জানায়। সে আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। হাইকোর্ট তার রুলে জহিরুল ইসলামকে দুর্নীতির মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চান।
এরপর চূড়ান্ত শুনানির পর রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে গত ২৪ জানুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বিশেষ আদালতে বিচারাধীন মামলাটির বিচার কাজ এক বছরের মধ্যে অথবা দ্রুত সময়ে শেষ করতে নির্দেশ দেন আদালত। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।