অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইতিহাস গড়লো ভারতের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৩৯ পিএম, ১৯ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১৯ পিএম, ২৫ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
মহাকাব্যিক এক টেস্ট ম্যাচের সাক্ষী হল ক্রিকেটবিশ্ব। ব্রিসবেন টেস্টের পঞ্চম দিনের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ৩ উইকেটে জিতল ভারত। সঙ্গে রচিত হলো নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টানা দুই টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত। এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে এই কীর্তি গড়ল ভারত।চার ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ভারত জিতল ২-১ ব্যবধানে।
ইতিহাস গড়েই ব্রিসবেন টেস্ট জিতল ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩২৮ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল না ব্রিসবেনে। ১৯৫১ সালে সর্বোচ্চ ২৩৬ রান তাড়া করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।
দূর্গ বানিয়ে ফেলা ব্রিসবেনের গ্যাবায় ৩৩ বছর ধরে অপরাজিত ছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৮৮ সালে শেষবার গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এরপর এই মাঠে ৩১ টেস্টের ২৪টিতেই জিতেছিল অস্ট্রেলিয়ার। ড্র ৭ ম্যাচে। ব্রিসবেনে শেষ টানা সাত টেস্টে জয়ের স্মৃতি নিয়ে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল অজিরা। আর কুইন্সল্যান্ডের এই স্টেডিয়ামে ভারতের পরিসংখ্যান সুখকর ছিল না। আগের ৬ টেস্টের পাঁচটিতেই হার। একমাত্র ড্র ২০০৩ সালে। অজিদের দূর্গে ভারত উড়াল বিজয় নিশান।
চোট জর্জর ভারতের ইতিহাস গড়ার অন্যতম নায়ক ঋষভ পন্ত। এই উইকেরক্ষক ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং বীরত্বে ভারত পেল তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়। একপ্রান্ত আগলে ভারতকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ২৩ বছর বয়সী এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। ১ ছক্কা ও ৯ বাউন্ডারিতে ১৩৮ বলে ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন পন্ত।
শেষ দিনে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩২৪ রান। আগের দিনের বিনা উইকেটে ৪ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের ব্যাটিং শুরু করে ভারত। দিনের শুরুতেই রোহিত শর্মাকে (৭ রান) ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সাফল্য এনে দেন প্যাট কামিন্স। তবে আরেক প্রান্তে শুভমন গিল খেলেছেন দুর্দান্ত ইনিংস। চেতশ্বর পূজারার সঙ্গে গড়েছেন ১১৪ রানের জুটি। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা শুভমন ছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতরানের পথে। এই তরুণ ওপেনার ৯১ রানে ফেরেন নাথান লায়নের শিকার হয়ে। ভারতের ‘নিউ দ্যা ওয়াল’ পূজারা ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। অজিঙ্কা রাহানে (২২ বলে ২৪) দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর ক্রিসে আসেন ঋষভ পন্ত। এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান খেলেছেন পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে। রানের গতি বাড়ানোর সঙ্গে মনযোগী ছিলেন উইকেট ধরে রাখাতেও। পূজারা একপ্রান্তে ছিলেন অবিচল। অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের গতিময় শর্টবল একাধিকবার লাগল পূজারার গায়ে। হেলমেটে বল লেগেছে দুইবার। একবার আঙুলে বল লেগে পেলেন গুরুতর চোট। তবুও মাঠ ছেড়ে যাননি তিনি। মন্থর ব্যাটিংয়ে ফিফটি ছুঁয়েছেন ১৯৬ বলে। যা তার ক্যারিয়ারের মন্থরতম ফিফটি।
পূজারাকে ফেরানোর জন্য অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক টিম পেইন অপেক্ষায় ছিলেন নতুন বলের। তাইতো চা বিরতির পর ১৫ ওভার বল হাতে তুলে দেননি সেরা পেসার কামিন্সের হাতে। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের ৮০তম ওভারে নতুন বল নিয়েই পূজারাকে (২২২ বলে ৫৬ রান) ফেরান কামিন্স। গতির ঝড় তুলে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মায়াঙ্ক আগারওয়ালকেও (৯ রান) ফেরান টেস্টের এক নম্বর বোলার কামিন্স। তবে ব্যাট হাতে রান তোলা থামিয়ে দেননি পন্ত। অভিষিক্ত ওয়াশিংটন সুন্দরকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা জবাব দেয়া শুরু করেন পন্ত। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৫ বলে ৫৩ রান যোগ করেন দু’জন। অভিষিক্ত স্পিনিং অলরাউন্ডার সুন্দর ২৯ বলে ২২ রানে ফিরলেও অন্য প্রান্তে ব্যাট হাতে ঝড় অব্যাহত রাখেন পন্ত। মাঝে ২ রান করে ফেরেন শার্দুল ঠাকুর। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ভারতের ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করেন পন্ত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ৩৬৯
ভারত ১ম ইনিংস : ৩৩৬
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস : ২৯৪
ভারত ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৩২৮) ৯৭ ওভারে ৩২৯/৭ (আগের দিন ৪/০) (শুভমন ৯১, পূজারা ৫৬, পন্ত ৮৯*; কামিন্স ৪/৫৫, লায়ন ২/৮৫)।
ফল : ভারত ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ : ৪ ম্যাচ সিরিজে ভারত ২-১ ব্যবধানে জয়
ম্যান অব দা ম্যাচ : ঋষভ পন্ত
ম্যান অব দা সিরিজ : প্যাট কামিন্স।