উরুগুয়ের জালে তিন গোল আর্জেন্টিনার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:৩৫ পিএম, ১১ অক্টোবর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৮ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ম্যাচের ২২ মিনিটের মধ্যেই তিন গোল পেতে পারত উরুগুয়ে। এমিলিয়ানো মার্তিনেজে রক্ষা আর্জেন্টিনার। দলের গোলকিপারকে এ অবস্থায় দেখে মেসিদের স্বাভাবিকভাবেই ভালো লাগেনি। নিজেদের কাজটা কী, সেটা হয়তো মনে পড়েছিল।
উরুগুয়ে রক্ষণকে এরপর ব্যস্ত রাখল আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগ। তাতে খেলায় যেমন ফুটেছে ‘আলবিসেলেস্তে’ ছন্দ, তেতমমনি মিলেছে তিন গোলও। ঘরের মাঠ এস্তাদিও মনুমেন্তালে উরুগুয়ের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ে দারুণ ফুটবল খেলেছে আর্জেন্টিনা।
প্রথমার্ধের শেষ ৭ মিনিটের মধ্যে মেসি ও রদ্রিগো ডি পলের এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ৬২ মিনিটে লওতারো মার্তিনেজের গোলে স্কোর লাইনে ব্যবধানটা আরও বড় হওয়ার ইঙ্গিত থাকলেও হয়নি। প্রথমার্ধেই অন্তত আরও দুই গোল পেতে পারত আর্জেন্টিনা।
উরুগুয়ে এ সময় পাল্লা দিয়ে খেলে একাধিক সুযোগ তৈরি করেও গোল পায়নি। কিন্তু বিরতির পর লো সেলসো, রদ্রিগো ডি পল, লওতারো মার্তিনেজ ও মেসির কুশলী খেলার সঙ্গে আর পেরে ওঠেনি। ৯০ মিনিটে মেসি ও বদলি হয়ে নামা আনহেল দি মারিয়া উরুগুয়ে গোলকিপার ফার্নান্দো মুসলেরার পরীক্ষা নেন। দারুণ দক্ষতায় এ দুবার পাশ করলেও মেসির কাছে ‘ফেল’ করেন প্রথমার্ধেই।
এই জয়ে ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে ১০ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে আর্জেন্টিনা। ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে চারে উরুগুয়ে। ১০ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ব্রাজিল। প্যারাগুয়েকে ২-০ গোলে হারায় চিলি। ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে প্যারাগুয়ে। সমান ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আটে চিলি। টেবিলের শীর্ষ চার দল সরাসরির খেলবে কাতার বিশ্বকাপে।
উরুগুয়ে এগিয়ে যেতে পারত ম্যাচের ৭ মিনিটেই। লুইস সুয়ারেজের শট প্রথম ঠেকান মার্তিনেজ। ফিরতি বলে ফেদে ভালভার্দের শটও রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার। ২২ মিনিটে সুয়ারেজের ‘সিজর কিক’ অবিশ্বাস্যভাবে রুখে দেন মার্তিনেজ। এর ছয় মিনিট পর সুয়ারেজকে বঞ্চিত করে ক্রসবার।
৩৪ থেকে ৩৮ মিনিটের মধ্যে টানা কয়েকটি আক্রমণে গোল বের করে আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে মেসির তৈরি করা আক্রমণ থেকে দারুণ সুযোগ পেয়েও ক্রসবারে মারেন জিওভান্নি লো সেলসো। শেষ পর্যন্ত ৩৮ মিনিটে গোলের খাতাটা মেসিকেই খুলতে হয়। তবে এই গোলে রয়েছে ভাগ্যের পরশ। বেচারা সুয়ারেজ! বন্ধু ভাগ্যের পরশ পেলেও তাঁর কপাল মন্দ।
পিএসজি ফরোয়ার্ড উরুগুয়ের বক্সে বাতাসে ভাসানো পাস দিয়েছিলেন। বাঁ প্রান্ত থেকে ছুটে যান লওতারো মার্তিনেজ এবং ডিয়েগো গোডিন। দুজনে লাফ দিয়েও বল পাননি। ওদিকে মুসলেরাও ডাইভ দিয়ে বলের নাগাল পাননি। বলটা তাঁঁকে ‘ফেল’ করিয়ে ধীর লয়ে জালে ঢুকতেই মেসির হাসি দেখে কে!
আর্জেন্টিনার হয়ে এ নিয়ে ৮০ গোল হলো মেসির। দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম ফুটবলার হিসেবে ৮০ গোলের দেখা পেলেন তিনি। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে দ্বিতীয় গোল পায় আর্জেন্টিনা। এবারও খেলা তৈরি করেন মেসি। তাঁর চিপ থেকে মার্তিনেজ ভলি করার চেষ্টা করেও পারেননি। বল পড়ে অরক্ষিত জায়গায়, দৌড়ে আসা রদ্রিগো ডি পলের সামনে। ঠান্ডা মাথায় বল জালে পাঠান এ মিডফিল্ডার।
এডিনসন কাভানিকে নামিয়ে উরুগুয়ে এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। শেষ দিকে দুটো সুযোগ পেয়েছিলেন কাভানি। যেমন প্রথমার্ধে নিশ্চিত সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি মার্তিনেজ। ডান প্রান্ত থেকে আসা ক্রসে পা ছোঁয়ালেই গোল, অথচ ডাইভ দিয়েও পারলেন না! সেই দুঃখ ঘুচল ৬২ মিনিটে। মেসি থেকে রদ্রিগো ডি পল হয়ে ফাঁকায় বল পেয়ে যান মার্তিনেজ। আলতো টোকায় ৩-০ করেন ব্যবধান।
গোটা ম্যাচে ৬৭৯ পাস খেলেছে আর্জেন্টিনা। মাঝ মাঠ থেকে খেলাটা পাসের মালায় তৈরি করেছেন ডি পল-মেসিরা। মার্তিনেজ-লো সেলসোরা সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে গোলের ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত আর্জেন্টিনা। ২৩ টি গোলের প্রচেষ্টায় ১০টি শট গোলপোস্টে রাখতে পেরেছে লিওনেল স্কালোনির দল।
উরুগুয়ে ১০বার চেষ্টা করে ৬টি শট গোলপোষ্টে রেখেও ব্যবধান কমাতে পারেনি। এমিলিয়ানো মার্তিনেজের বিশ্বস্ত হাত হতাশ করেছে সুয়ারেজ-কাভানিদের। ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উরুগুয়ের মুখোমুখি হয়ে একই ব্যবধানে জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেদিন মেসিও গোল পেয়েছিলেন। ৯ বছর আগে ম্যাচটি হয়েছিল এই একই দিনে!