বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা শুরু হয়ে স্থগিত
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:২৫ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫৯ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
উত্তর কখন মিলবে জানা নেই, তবে ব্রাজিলের স্বাস্থ্যসচেতনতা–বিষয়ক সংগঠন আনভিসার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে অনেক। তাদের বিতর্কিত ভূমিকার জেরেই গতকাল সাও পাওলোতে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটি শুরু হয়েও স্থগিত হয়ে গেছে।
ইংল্যান্ডের ক্লাবে খেলা আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড় যে ব্রাজিলে ঢুকছেন, সেটি নিশ্চয়ই আগে থেকেই জানত আনভিসা। ম্যাচের তিন দিন আগেই ব্রাজিলে ঢুকেছে আর্জেন্টিনা দল। সে ক্ষেত্রে ওই খেলোয়াড়দের খেলতে পারা-না পারা নিয়ে প্রশ্ন কেন ম্যাচের দুই ঘণ্টা আগে তুলল আনভিসা, কেন ম্যাচ শুরু হওয়ার পর এসে ম্যাচ থামিয়ে দিল, সেসব নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। প্রশ্ন উঠছেও।
এর মধ্যে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি ও আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ার দুটি কথা আনভিসার ভূমিকাকে আরও বেশি করে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। স্কালোনি বলছেন, ওই চার খেলোয়াড় যে খেলতে পারবেন না, সেটা ম্যাচের আগে তাঁদের কেউই জানায়নি। আর তাপিয়া জানাচ্ছেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা খেলোয়াড়দের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে নামার আগে কোয়ারেন্টিন-সংক্রান্ত বিধি কী হবে, এ নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো আগেই একমত হয়েছিল। সব দেশের স্বাস্থ্য বিভাগই তা জানত!
‘আজ যেটা ঘটেছে, সেটা ফুটবলের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ফুটবলে কালি লেপে দিয়েছে এটা। চারজন লোক একটা খবর জানাতে (ইংল্যান্ডের ক্লাবে খেলা আর্জেন্টিনার চার খেলোয়াড় খেলতে পারবে না জানিয়ে) মাঠে ঢুকে পড়লেন, আর কনমেবল খেলোয়াড়দের বলল ড্রেসিংরুমে ঢুকে যেতে!’—ঘটনার ব্যাখ্যায় বলেছেন আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি তাপিয়া।
আনভিসা ম্যাচের দুই ঘণ্টা আগে জানায়, ইংল্যান্ডের ক্লাবে আর্জেন্টিনার ওই চার খেলোয়াড় এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, জিওভান্নি লো সেলসো ও ক্রিস্টিয়ান রোমেরো ব্রাজিলে ঢোকার ক্ষেত্রে নাকি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা গত ১৪ দিনের মধ্যে ইংল্যান্ডে ছিলেন বলে জানিয়েছেন বলে দাবি ছিল আনভিসার।
কিন্তু তাপিয়া বলছেন, ‘এখানে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, এমনটা আপনি বলতে পারেন না। কারণ, এখানে (বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব উপলক্ষে) একটা নিয়মনীতি নির্ধারণ করা আছে, যেটার অধীনেই দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের সব ফুটবল ম্যাচ হয়। (লাতিন অঞ্চলের) প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষই একটা প্রটোকল অনুমোদন করেছে, যেটা আমরা পুরোপুরি মেনে চলেছি।’
অন্যদিকে, আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনির দাবি, ওই চার খেলোয়াড় যে খেলতে পারবেন না, সেটা আর্জেন্টিনা দলকে ম্যাচের আগে জানানোই হয়নি! ‘আমাদের একবারও এমনটা বলা হয়নি যে আমরা ম্যাচটা খেলতে পারব না। আমরা ম্যাচটা খেলতে চেয়েছিলাম, ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরাও চেয়েছিল,’ বলেছেন স্কালোনি।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমে নিজের ও দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আর্জেন্টিনা কোচ বলেছেন, ‘আমি এখানে এসেছি যাতে আমাদের দেশের মানুষ জানতে পারে যে আসলে কী হয়েছে। পুরো ঘটনায় আমি খুব হতাশ হয়েছি। আমি এখানে দায়টা কার, সেটা বের করতে বসিনি। যদি কিছু ঘটে থাকে বা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি—এমন কিছু যদি থেকেও থাকে, সেটা নিয়ে এ রকম ব্যবস্থা নেওয়ার যথোপযুক্ত সময় নিশ্চয়ই এটা (ম্যাচ শুরু হওয়ার পরে) নয়।’
এর আগে টিভিতে দেখা গেছে, আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসিও আনভিসার কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘আমরা এখানে আছি তিন দিন হলো। তাহলে আপনার এ ব্যবস্থা এখন কেন নিচ্ছেন?’
মেসি-দি মারিয়ার আর্জেন্টিনা, নেইমার-কাসেমিরোর ব্রাজিল...এমন একটা ম্যাচ মানে তো তারকার ছড়াছড়ি। পুরো বিশ্ব কাল ম্যাচটার জন্য উন্মুখ ছিল। কিন্তু সেই ম্যাচের হলো এমন পরিণতি! স্কালোনিও হতাশ, ‘ম্যাচটা সবার জন্যই একটা উৎসবের উপলক্ষ হওয়ার কথা ছিল। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের খেলা উপভোগ করার সুযোগ ছিল এটা।’ আর্জেন্টিনা দল যে মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছে, সেটার ব্যাখ্যায় স্কালোনি বললেন, ‘আমি চাই আর্জেন্টিনার মানুষ যেন এটা বোঝেন যে কোচ হিসেবে আমার খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার দিকটি দেখতেই হতো, ওদের আগলে রাখতে হতো।’