গাজায় বিমান হামলায় নিহত বেড়ে ১৮১
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:০২ এএম, ১৭ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখন্ড গাজা উপত্যকায় অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলি আগ্রাসন।
আজ রবিবার নতুন করে বিমান হামলায় গাজায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরা জানায়, আজ রবিবারের বোমাবর্ষণে অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে দুটি বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অপরদিকে গাজায় চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আজ রবিবার সকাল পর্যন্ত পুরো উপত্যকায় ইসরাইলের প্রচন্ডতম বিমান হামলায় নতুন করে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮১ জনে। ইসরাইলি হামলায় নিহতদের মধ্যে ৫২ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া হামলায় এক হাজার ২২৫ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
অপরদিকে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে অধিকৃত পশ্চিমতীর ও ইসরাইলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ করছেন। শুক্রবার থেকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় অন্তত ১৩ বিক্ষোভকারী নিহত ও আরো ৪৫০ জন আহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানায় স্থানীয় ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম ওয়াফা নিউজ। অধিকৃত জেরুজালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইহুদি বসতি স্থাপনে গত ২৫ এপ্রিল ইসরাইলি আদালতের আদেশের জেরে ফিলিস্তিনিদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে পরপর কয়েক দফা মসজিদুল আকসায় হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত এসব হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের মানবিক সাহায্যবিষয়ক দফতর ইউএনওসিএইএ। মসজিদুল আকসা চত্বরে মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে ইসরাইলকে আলটিমেটাম দেয় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামাস রকেট হামলা শুরু করে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখন্ডে শত শত রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমে বেশিরভাগ রকেট ধ্বংস করা হলেও বেশকিছু রকেট ইসরাইলের বিভিন্নস্থানে আঘাত হানে। রকেট হামলায় গতকাল রবিবার পর্যন্ত ইসরাইলের ১০ অধিবাসী নিহত ও ৫৬০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ইসরাইল ভূখন্ডে হামাসের রকেট হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মে রাত থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল।
এদিকে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ইরাক, জর্দান, লেবানন, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে ও ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি কুফিয়া জড়িয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেন। গাজায় চলমান আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
অন্যদিকে ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ ও আগ্রাসন বন্ধ করে সৌদি আরবকে ইসরাইলে হামলা করতে বললেন ইরানের হাউথি বিদ্রোহীদের প্রধান মোহাম্মদ আলী আল হাউথি। তিনি আরও বলেন, সৌদি এ কাজ করলে আমরা আর পাল্টা জবাব দেব না। ইরানের বার্তা সংস্থা পার্সটুডে জানায়, গত শনিবার তিনি এ কথা বলেছেন। মোহাম্মাদ আলী আল হাউথি আরও বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতা ও আগ্রাসনের বিষয়ে সৌদি আরব কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাচ্ছে না, কোনো পদক্ষেপই তাদের পক্ষ থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমি সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা ইয়েমেনে বোমা হামলার বদলে ইসরাইলে কয়েকটি বোমা ফেলুন। আপনারা যদি এটা করেন তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের পাল্টা হামলা বন্ধ করে দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসরাইলে বোমাবর্ষণ করলে আমরা আপনাদের ওপর আর হামলা চালাব না, এমনকি আপনারা আমাদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখলেও আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাব না।’ এর আগে তিনি সৌদি আরবের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আসুন মা’রিবে চলমান সংঘর্ষ বন্ধ করে একসঙ্গে মসজিদুল আকসা রক্ষায় বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে রওনা হই।’ এর আগে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুতি ঘোষণা করেছে ইয়েমেনের হাউথি বিদ্রোহীরা।