মিয়ানমারে এক দিনে নিহত ১১৪, সেনাবাহিনী ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে : জাতিসংঘ কর্মকর্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৯ এএম, ২৯ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০১:০৫ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এক দিনে ১১৪ জন নিহত হয়েছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর গতকাল শনিবার ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন। মিয়ানমার নাও নিউজের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গতকাল শনিবার দেশটিতে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উদযাপনের সময় মিয়ানমারজুড়ে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে গুলি চালালে অন্তত ১১৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মান্দালে শহরে ৪০ জন ও ইয়াঙ্গুনে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। মিয়ানমারের উত্তরের কোচিন অঞ্চল থেকে সুদূর দক্ষিণে আন্দামান সাগরের কাছে তানিনথারথারয়ি পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে দুই জনের বয়স ১৩ বছর। রয়টার্স জানিয়েছে, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত ৪৪০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের কয়েকজন কর্মকর্তা গতকালকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের এক তদন্ত কর্মকর্তা।
জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত টমাস বাজদা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, এই রক্তপাত ভয়াবহ। মিয়ানমারের জনগণ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে তারা সামরিক শাসনের অধীনে থাকতে চায় না। মিয়ানমারে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, দিনটি চিরকাল সন্ত্রাস ও অসম্মানের দিন হিসেবে ইতিহাসে খোদাই হয়ে থাকবে। গতকাল রবিবার দেশটিতে রাজনৈতিক দলগুলো গতকালকের হত্যাকান্ডে শোক পালন করছে। একইসঙ্গে তারা সামরিক শাসনের অবসান ঘটাতে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান প্রতিবাদী দল জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিস (জিএসসিএন) এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, এই বিপ্লবে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন সেসব বীরদের আমরা স্যালুট জানাই। আমাদের অবশ্যই এই বিপ্লবে জিততে হবে। এ হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের বেশ কয়েকটি দেশ।
তবে পশ্চিমের দেশগুলোর নিন্দা সত্ত্বেও গতকাল মিয়ানমারের নেপিডো শহরে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্যারেডে রাশিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফমিন অংশ নিয়েছিলেন। এর এক দিন আগে শীর্ষ সামরিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবসের প্যারেডে রাশিয়া, চীন, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ড প্রতিনিধি পাঠালেও একমাত্রই রাশিয়াই কোনো মন্ত্রী পাঠিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া ও চীনের সমর্থন সামরিক সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই দুটি দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।
ক্ষুদ্র জাতিসত্তা কারেনদের সশস্ত্র সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন জানিয়েছে, তাদের একটি গ্রামে সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় তিন জন নিহত হয়েছেন। সংগঠনটি দাবি করেছে, থাইল্যান্ডের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় একটি সেনাচৌকিতে হামলা চালিয়ে তারা ১০ জনকে হত্যা করেছে। পরে সেনাবাহিনী বিমান হামলা চালালে গ্রামবাসীরা জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সামরিক সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে কেউই ফোন ধরেননি।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গত নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি করে অং সান সুচির দল ক্ষমতায় আসে। দেশটিতে আবারও নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার নির্বাচন করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। তবে নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষণা দেয়া হয়নি।