বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি, চুক্তির বিষয়ে ভারতকে নেপালের চিঠি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৬ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৩২ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিদ্যুৎ বাণিজ্যের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতার বিষয়ে ভারতকে জানিয়েছে নেপাল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির উপায় হিসেবে ভারতকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করেছে কাঠমান্ডু। নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আজ রবিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে নেপালি সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপালে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রফতানি করার বিষয়ে চলতি বছরের আগস্টের শুরুতে সমঝোতায় পৌঁছায় ঢাকা ও কাঠমান্ডু। এই সমঝোতার অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রফতানি করতে পারবে। আর এ লক্ষ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের ‘এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড’কে (এনভিভিএন) অনুরোধ করতে সম্মত হয় নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড। গত ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিত যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পর দেয়া বিবৃতি অনুসারে, বাংলাদেশের ট্রান্সমিশন লাইন সিস্টেম ভেড়ামারা হাই ভোল্টেজ ডাইরেক্ট কারেন্টের মাধ্যমে নেপাল থেকে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রফতানি করা যেতে পারে বলে উভয় পক্ষ একমত হয়। এছাড়া উভয় পক্ষ ভারতীয় ভূখন্ড ব্যবহার করে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের জন্য নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতেও রাজি হয়। নেপালের জ্বালানি সচিব সুশীল চন্দ্র তিওয়ারি দ্য কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেছেন, নেপাল ও বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভারতীয় পক্ষকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে কাঠমান্ডু। এছাড়া নেপাল ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। নেপাল ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি-বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির পরবর্তী বৈঠক চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ) তিন দেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আলোচনার বিষয়ে এনভিভিএনকে চিঠি দিয়েছে। নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের পাওয়ার ট্রেড ডিপার্টমেন্টের পরিচালক প্রবাল অধিকারী বলেছেন, নেপাল-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে গত আগস্টের শেষের দিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই সংস্থাটি এ বিষয়ে এনভিভিএনকে অনুরোধ করেছিল।
তিনি বলেন, ত্রিপক্ষীয় চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমরা এনভিভিএনকে অনুরোধ করেছি। কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য ভারত সরকারের নোডাল সংস্থা বা সংযোগস্থল সংক্রান্ত সংস্থা হিসেবে কাজ করে থাকে এনভিভিএন। প্রবাল অধিকারী বলছেন, আমরা ভারতীয় কোম্পানির কাছ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাইনি। নেপালি এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেপাল ও বাংলাদেশ বহরমপুর-ভেড়ামারা আন্তঃসীমান্ত ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বাণিজ্য করার পরিকল্পনা করছে। ভারত ও বাংলাদেশকে সংযুক্তকারী এই ট্রান্সমিশন লাইনটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয় এবং লাইনটিতে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিনিময়ের সুবিধা রয়েছে। নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি কোনো সীমানা নেই এবং এই দুই দেশের মাঝে ভারতের ভূখন্ড রয়েছে। আর তাই নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুতের বাণিজ্য কার্যকর করতে ভারতের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের কর্মকর্তারা বলছেন, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অপরিহার্য।
প্রবাল অধিকারী বলেন, (এ বিষয়ে এখনও) কোনো ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়নি তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় বিষয়টি আলাচিত হয়ে আসছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কাঠমান্ডুতে যে সমঝোতা হয়েছে তার সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি ভারতের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে ভারতে তার রাষ্ট্রীয় সফরের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে ভারতকে অনুরোধ করেছিলেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী বর্ষায় নেপাল থেকে বাংলাদেশে কিছু বিদ্যুৎ রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে নেপালের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মধু ভেতুওয়াল কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেছিলেন, যদি নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বিদ্যুৎ বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তির ব্যাপারে ভারতের এনভিভিএন সম্মত হয় তাহলে এটি বার্তা দেবে যে, ভারত একা আমাদের (নেপালের) রফতানি বাজার নয়। কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে, যদিও নেপাল ও বাংলাদেশ ভেড়ামারা হাই ভোল্টেজ ডাইরেক্ট কারেন্ট ট্রান্সমিশন লাইনকে নেপাল থেকে বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎ সরবরাহের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে, তবুও এটি বিদ্যুৎ রফতানির জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে না।