ফেসবুকের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের মামলা, ১৫০০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৪৩ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০৩ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণাপ্রসূত বক্তব্য অনুমোদনের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কয়েক ডজন রোহিঙ্গা। এতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তারা ১৫০০০ কোটি ডলারের বেশি দাবি করেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে, মিয়ানমারের নির্যাতিত এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উৎসাহিত করেছে ফেসবুক। তবে এ অভিযোগের তাৎক্ষণিক জবাব দেয়নি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মেটা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে ২০১৭ সালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংস নির্যাতন চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। এতে কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হন। এ সম্পর্কে ‘ঘৃণামূলক এবং বিপজ্জনক ভুল তথ্য বছরের পর বছর ধরে প্রচার হওয়ার সুযোগ দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ’- এ অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃটেনে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করছে একটি আইনি প্রতিষ্ঠান। তারা এরই মধ্যে এ বিষয়ে ফেসবুককে লিখিতভাবে জানিয়েছে। ওই চিঠি দেখতে পেয়েছে বিবিসি।
এতে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা হলো-
১. ফেসবুকের অ্যালগোরিদম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচারের বর্ধিত সুযোগ দিয়েছে।
২. যারা মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন, তাদেরকে মডারেটর এবং সত্য যাচাইকারী হিসেবে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক।
৩. রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উস্কে দেয় এমন পোস্ট নামিয়ে ফেলতে বা অপসারণে ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক।
৪. দাতব্য সংস্থাগুলো এবং মিডিয়া থেকে সতর্কতা দেয়া সত্ত্বেও যথাযথ এবং সময়মতো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানি।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে অভিযোগ দাখিল করেছেন আইনজীবীরা। এতে রোহিঙ্গা জনগণের জীবন নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবসা করার অভিযোগ আনা হয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে তারা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশ মিয়ানমারে ভালভাবে মার্কেট ধরার চেষ্টা করেছে। এতে মার্কিন ওই আইনজীবীরা ফেসবুকে দেয়া ঘৃণামূলক পোস্ট উদ্ধৃত করেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ২০১৩ সালের অনুসন্ধানে এমন একটি পোস্ট পাওয়া গেছে। তাতে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে- ‘ইহুদিদের বিরুদ্ধে হিটলার যেমনটা করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সেই একই রকমভাবে লড়াই করতে হবে’। এমন উস্কানিমূলক আরেকটি পোস্ট ওই অভিযোগে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- ‘তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দাও, যাতে তারা দ্রুত আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারে’।
মিয়ানমারে কমপক্ষে দুই কোটি ব্যবহারকারী আছে ফেসবুকের। বহু মানুষের কাছে এটাই তাদের কাছে প্রধান অথবা একমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যার মাধ্যমে তারা খবরাখবর পেতে বা শেয়ার করতে পারেন। ২০১৮ সালে ফেসবুক স্বীকার করে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উস্কানি দেয়া বা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার বন্ধে যথেষ্ট করতে পারেনি তারা। ফেসবুকের অর্থায়নে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের পর বলা হয়েছিল, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য একটি মোক্ষম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এই প্লাটফরম।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের দেখা হয় অবৈধ অভিবাসী হিসেবে। দশকের পর দশক ধরে তারা সেখানে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নৃশংসতা চালায়। এর ফলে কয়েক হাজার মানুষ মারা যান। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে কমপক্ষে সাত লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে।
এ সময়ে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়। এর মধ্যে আছে খেয়ালখুশিমতো হত্যাকা-, ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া। ২০১৮ সালে অনলাইনে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া বন্ধে ধীর এবং অকার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক এমন অভিযোগ আনে জাতিসংঘ।