প্রকৌশলী আবুল কালামের নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়
শালা-দুলাভাইয়ের দুর্নীতির মহোৎসব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২২ এএম, ৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গণপূর্ত ইএম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম ও তার আপন শ্যালক সাইফুলের ঠিকাদারি ফার্ম ইন্টিগ্রেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেসের নামে নিজ দফতরে চালাচ্ছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব। তাদের অবৈধ কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ ঠিকাদাররা। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এবং তাদের দুর্নীতির টুঁটি চেপে ধরার জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের ১ম শ্রেণির ঠিকাদার মো. কাজল বিশ্বাস গত ২৮ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন।
দুদকে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, গণপূর্তের ইএম সার্কেল-৩ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কালাম আলাদিনের চেরাগের মতো ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিজেকে এবং আপন শালাকে বানিয়েছে শত কোটি টাকার মালিক। ইজিপিতে তার আপন শালাকে দিয়ে সিসিটিভি, নেটওয়ার্কিং, সাউন্ড সিস্টেম, পিএবিএক্সের সকল কাজ দেয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীদের চাপ দেয় এবং এই কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ঠিকাদারদেরকে টেন্ডারে এটেন্ড করতে নিষেধ করে। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী এবং পিপিআরের ঘোষণা অনুযায়ী নিজ পরিবারের সদস্য দিয়ে নিজ অধিক্ষেত্রে ব্যবসা দিতে নিষেধ থাকলেও আবুল কালাম তাই করছেন। নিজ শালা সাইফুলের নামে ফার্ম ইন্টিগ্রেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেসের নামে কাজ দিয়ে নিজে সেই টেন্ডার অনুমোদন করছেন এবং বেশ কিছু টেন্ডারে মূল্যায়নের মধ্যে পর্যালোচক হিসেবে কাজ করছেন। আবুল কালামের অধীনস্ত কাঠের কারখানা বিভাগে ৮ কোটি, মেকানিক্যাল কারখানা বিভাগে ৪ কোটি, ই/এম বিভাগ-৭ এ ১২ কোটি এবং ইএম বিভাগ-৮ এ ৬ কোটি মোট ৩০ কোটি টাকার অধিক কাজ রয়েছে আবুল কালামের শালার ফার্মে। তার জন্য অন্য কেউ কাজ পাচ্ছে না। আবার যে এক্সেন তার শালাকে কাজ দিবে না তাকে বদলি করার যাবতীয় আয়োজন করে আবুল কালাম। নির্বাহী প্রকৌশলী ইএম শরীফ মো: আব্দুল্লাহ আল মাসুমকে তিনি অন্যায়ভাবে মিথ্যা দোষারোপ করে ইএম বিভাগ-৮ থেকে সরিয়েছেন শুধুমাত্র শালা সাইফুলকে কাজ না দেয়ার জন্য।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গণপূর্ত ইএম বিভাগ-৩ এর অধীনে আজিমপুর সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পে আবুল কালামের আপন শালার ফার্মের সাব স্টেশনের কাজের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও আবুল কালাম চাপ দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে (১৯% লেস) নন রেসপনসিভ করে এবং ইন্টিগ্রেটেড কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস ফার্মকে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে রেসপনসিভ করেছে। এতে সরকারের সরাসরি ক্ষতি ২০ লাখ টাকা। ইজিপিতে টেন্ডার আইডি ৪১২১৩৭ চেক করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। আবুল কালামের আপন শালা সাইফুল একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। গ্রামের বাড়িতে বেড়ে ওঠা। দুলাভাই আবুল কালামের কল্যাণে আজ সে শত কোটি টাকার মালিক।
এদিকে গণপূর্ত ইএম বিভাগ-৩ এ কর্মরত থাকাকালীন আবুল কালাম কেরানীগঞ্জ জেলখানার সাবস্টেশনের এলটি ক্যাবল স্থাপন করার দরপত্র আহবান করে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেয়। উক্ত কাজটি মূল সাবস্টেশনের কাজের সাথে থাকায় কাজটি বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে আবুল কালাম ৫০ লাখ টাকা নিয়ে কাজ না করেই ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করে। তদন্তে এর সত্যতা প্রমাণিত হলে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয় (কপি সংযুক্ত)। কিন্তু ম্যানেজ মাস্টার আবুল কালাম টাকা দিয়ে এ ফাইল ধামা-চাপা দিয়ে রাখে। ফলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না প্রমাণিত এ দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, আপন শ্যালকের ফার্মে কোটি কোটি টাকার কাজ দিয়েছেন আবুল কালাম। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে তদন্ত হয়। তদন্তে তার দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। পিপিআর ধারা ১১৯(২) মতে কোনো আত্মীয় কিংবা ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে এমন কাউকে কাজ দিতে নিষেধ করা সত্ত্বেও আবুল কালাম তার শ্যালকের ফার্মে গত মাত্র ১ বছরে অনুমোদন করেছে ৩০ টি কাজ যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। প্রতিটি কাজ আবুল কালাম অনুমোদন করেছে যা নির্বাহী প্রকৌশলীগণ প্রত্যয়ন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকাতে আবুল কালামের রয়েছে গুলশান নিকেতনে ৩০০০ বর্গফুটের ২টি ফ্ল্যাট, আফতাব নগরে রয়েছে ৫টি ৫ কাঠার প্লট মোট ২৫ কাঠার প্লট, স্ত্রীর নামে মাওয়া রোডের পাশর্^বর্তী প্রিয় প্রাঙ্গণের পাশে রয়েছে ২৭টি প্লট, বনশ্রীতে রয়েছে ৫০০০ বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট, নিজের রয়েছে এলিয়ন ব্রান্ডের ব্যক্তিগত নতুন গাড়ি। কুমিল্লা নবীনগরে কালামের আছে ৪৫ একর জমি। ঢাকায় রয়েছে বিপুল ব্যাংক ব্যালান্স। ঘুষের কারণে বেতনের টাকা ওঠানো লাগেনা আবুল কালামের। শালা সাইফুলের রয়েছে ব্রান্ড নিউ হ্যারিয়ার লেকসাস গাড়ি, বাড্ডাতে ৬ তলা ভবনসহ জায়গা, বসুন্ধরা ডি ব্লকে ৩টি ৫ কাঠার প্লট যার বর্তমান মূল্য কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা। এছাড়া আবুল কালাম কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। ঘুষ পাইলে ঊর্র্ধ্বতন অফিসারের ক্ষমতা নিজেই প্রয়োগ করে এস্টিমেট পাস করে। রাজস্ব বাজেটে ১২ লাখ টাকার প্রাক্কলন পাস করার আইন থাকলেও বিপুল ঘুষের বিনিময়ে আবুল কালাম ১২ লাখ টাকার ঊর্ধ্বের ২ কোটি টাকার প্রাক্কলন ওপরের অফিসারের কাছে না পাঠিয়ে নিজেই পাস করে দেয়। আবুল কালাম কর্তৃক আইন ভংগ করে বেশ কয়েকটি রাজস্ব বাজেটের প্রাক্কলন অনুমোদনও করা হয়েছে। টেন্ডারে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য করে আবুল কালাম। কোন টেন্ডার তার কাছে গেলে বাতিল করার কথা বলে কিংবা পুনঃ টেন্ডার, পুনর্মূল্যায়ন করার কথা বলে ঠিকাদারদেরকে জিম্মি করে ঘুষ খায় আবুল কালাম। এজন্য আমরা ঠিকাদারগণ অসহায় হয়ে পড়েছি। মাঠে কাজ করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছি। এই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর কারণে সরকারের ভীষণ দুর্নাম হচ্ছে। তার অধীনস্ত কর্মকর্তাদের কেউ তাকে অবাধ দুর্নীতির জন্য সম্মান করে না বলে আমাদের সকলের জানা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রকৌশলী আবুল কালামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে সাইফুল বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। সব নিয়ম মেনেই কাজ করি।