যত দিন যাচ্ছে, ডেঙ্গুর রূপ ততই খারাপ হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৭ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২৩ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
যত দিন যাচ্ছে, ডেঙ্গুর রূপ ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আগের তুলনায় মশাবাহিত এই ভাইরাসটির সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থতার হারও বাড়ছে। গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক জানান, আগের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর শুরুতেই তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা ও বমির উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আর শিশুদের ক্ষেত্রে পেট ব্যথাও লক্ষ করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে তীব্র জ্বর সব সময়ই ছিল। কিন্তু এবার শুরুতেই একদম প্রথম দিনই শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। তাই আগে যেমন বলা হতো জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার নেই; কিন্তু এখন তা না। জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে, ডেঙ্গু শনাক্ত হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
তীব্র জ্বরের পাশাপাশি শরীর ব্যথা বা শারীরিক দুর্বলতাও ডেঙ্গুর অন্যতম একটি লক্ষণ; যা আগেও দেখা যেতো। তবে এবারে যাদের এই সমস্যাটা হচ্ছে তারা খুবই ‘সিভিয়ারলি দুর্বল’ হয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, এবারের ডেঙ্গুতে খাওয়ার রুচিও চলে যাচ্ছে। যার কারণে খুব দ্রুত রক্তচাপ কমে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু এ বছর শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে ডা. রাশেদুল হাসান কনক বলেন, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত যেসব শিশু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি, তাদের বেশিরভাগই পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে মারা গেছে, চিকিৎসার সময়ও পাওয়া যায়নি।
‘সবাই ধরেই নিয়েছে ভাইরাল ফিভার, আরেকটু দেখা যাক’, আর এতেই বিপদ এসেছে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। তার পরামর্শ, জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে।
গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৩৩০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটি চলতি বছরে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রেকর্ড।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতর এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গত ১৭ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ ৩২৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য জানানো হয়েছিল। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজন মারা গেছেন। এ নিয়ে মশাবাহিত ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ২৬২ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছে ১ হাজার ১৩১ জন। বাকি ১৩১ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৮১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়া পেয়েছেন ৯ হাজার ৬৬৮ জন।
বিগত প্রায় ২০ ধরেই দেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। এ কারণে নতুন করে আক্রান্তদের অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো সংক্রমিত হচ্ছেন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলেও শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ পর্যায়ে যায় বলে জানান ডা. রাশেদুল হাসান কনক। তিনি বলেন, এবারের পরীক্ষাতে এনএসওয়ান পজিটিভের (ডেঙ্গু পরীক্ষা) সঙ্গে সঙ্গে আইজিজি (আগে সংক্রমিত) পজিটিভ পাচ্ছি। এ জন্যই খুব সম্ভবত যত দিন যাচ্ছে, ডেঙ্গুর রূপ তত খারাপ হচ্ছে।
বর্তমান আবহাওয়া এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে, তা এডিশ মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ। থেমে থেমে হওয়া এই বৃষ্টি ডেঙ্গুর বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। বাড়িতে থাকা ফুলের টব নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে একদিন পর পর জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে। কারণ তৃতীয় দিনের মধ্যেই ডিম থেকে মশার জন্ম হয়ে যায়। তাই তিন দিনের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না।
‘রাস্তাঘাট আমরা বদলাতে পারবো না। কিন্তু নিজে যদি সচেতন হই, নিজের বাড়ির ভেতরটা পরিষ্কার রাখা যায়, তাহলেও কিছুটা রক্ষা হবে’, বলেন তিনি।