আইসিইউ শয্যা খালি নেই ঢাকার পাঁচ সরকারি হাসপাতালে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৩ এএম, ৫ জুলাই,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪০ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলায় আইসিইউ ও অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই অবস্থায় ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও সংকট বাড়ছে। রাজধানীর বাইরে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই রোগী নিয়ে রাজধানীতে ছুটে আসছেন। তাদের অধিকাংশই প্রথমে সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউয়ের জন্য ছুটছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যমতে, রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। এছাড়া তিনটিতে আইসিইউ শয্যার কোনো ব্যবস্থাই করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।
আইসিইউ খালি নেই যেসব হাসপাতালে : উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, ৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট, ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আইসিইউর ব্যবস্থা না থাকা তিনটি হাসপাতাল হলো : মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলোজি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল। এদিকে অধিদফতর বলছে, গত এক সপ্তাহে মৃত্যুর ঘটনার সাড়ে ৭৭ শতাংশই হয়েছে আইসিইউ সুবিধা কম থাকা ৭ বিভাগে। আর সাড়ে ২২ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে।
আইসিইউ খালি আছে যেসব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে : ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৫টির মধ্যে খালি ৮টি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৬টির মধ্যে ১টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৫টির মধ্যে ২টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৪টি, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে ৫টির মধ্যে ৩টি, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৪টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ২০টির মধ্যে মাত্র তিনটি আইসিইউ খালি রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) করোনা হাসপাতালে ২১২টির মধ্যে ১০২টি আইসিইউ বেড খালি রয়েছে। সবমিলিয়ে সরকারি পর্যায়ে করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত ১৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১২টি হাসপাতালে সর্বমোট ১২৭টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। এই ১২৭টি শয্যার মধ্যে ১০২টিই ডিএনসিসি হাসপাতালে।
আইসিইউ সুবিধা নেই সারা দেশের ৫২ করোনা হাসপাতালে : স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ১০০টি হাসপাতালের মধ্যে ৫২টিতেই আইসিইউ সুবিধা নেই। এর মধ্যে ৩৫টিই জেলা সদর হাসপাতাল। মোট আইসিইউর প্রায় ৭৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগে, ২৫ শতাংশ বাকি সাত বিভাগে।
সংক্রমণ বাড়ার কারণ উদাসীনতা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, সংক্রমণ বাড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণ হলো, দেশের অধিকাংশ মানুষই নিয়ম মেনে মাস্ক পরেনি। স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা ছিল, কিন্তু কতটুকু মানা হয়েছে বা হচ্ছে তা সবাই জানে। এই মাস্ক পরা এবং সামজিক দূরত্ব বজায় রাখা, এই দুটি উপায় ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, গত একমাস যাবত বলা হচ্ছিল যে সংক্রমণটা আবার বাড়বে, কিন্তু কোনো মানুষই কোনো ধরনের বিধিনিষেধ, সামাজিক দূরত্ব ও সচেতনতা মানেনি। এক্ষেত্রে শুধু সরকার নয়, সাধারণ জনগণকেও আন্তরিক হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ তো বিশ্বাসই করে না যে করোনা ভাইরাস বলে কিছু আছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি মানুষ হয়তো বিশ্বাস করে, তাও তাদের সবাই মাস্ক পরে না। তাহলে এই দেশে কী কারণে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ আসবে?
দেশে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি : শনিবার (৩ জুলাই) তার আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৯১২ জনের। এ সময়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ২১৪ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৬ জনে।